Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মধ্যপ্রাচ্যে তীব্র হচ্ছে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০২২, ১০:০৫ পিএম

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে গত ৮ বছর ব্যয় করেছেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক মোদির মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মুখপাত্র নুপুর শর্মা এবং গণমাধ্যম শাখার প্রধান নবীন কুমার জিন্দালের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের নিন্দায় সরব হয়ে উঠেছে উপসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ। একই সঙ্গে নবী (সা.) কে বিজেপি নেতাদের অবমাননার দায়ে উপসাগরীয় কয়েকটি দেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বানও ক্রমবর্ধমান হারে জোরালো হচ্ছে। -এএফপি, ব্লুমবার্গ

বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপসাগরীয় দেশগুলোতে নবীকে অবমাননার প্রতিবাদে টুইটার এবং ফেসবুকে ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন’, ‘নবী মুহাম্মদ (সা.) কে অবমাননা বন্ধ করুন’ প্রচারণা ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির মোট বাণিজ্যের এক দশমাংশেরও বেশি হয় উপসাগরীয় দেশগুলোতে। ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাবেক মুখপাত্র নুপুর শর্মা গত মাসে এক টেলিভিশন শোতে অংশ নিয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। পরে দলটির নয়াদিল্লি শাখার গণমাধ্যম প্রধান নবীন জিন্দালও নুপুর শর্মার মন্তব্যের সমর্থনে টুইট করেন। তাদের এই মন্তব্য দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এমনকি বিজেপির দুই নেতার মন্তব্যের জেরে ভারতের কয়েকটি রাজ্যের মুসলিমরা বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন। এই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে তাবৎ বিশ্বে।

বিজেপির দুই সদস্যের বিতর্কিত এই মন্তব্যের জেরে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের তলব করে নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। গত আট বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং ভারতীয় শস্য, পোষাক এবং যন্ত্রপাতির বাজার তৈরিতে সম্পর্ক গড়ার পেছনে ব্যয় করেছেন নরেন্দ্র মোদি। এমন পরিস্থিতিতে উপসাগরীয় অঞ্চলে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান নরেন্দ্র মোদির জন্য আরও বেশি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই আহ্বানে সাড়া মিলবে কিনা তা এখনও দেখার বাকি। তবে কুয়েতের একটি সুপারমার্কেট ইতোমধ্যে তাদের তাক থেকে ভারতীয় চাল, মসলা এবং মরিচ সরিয়ে ফেলছে বলে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে। ভারতের ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের প্রায় ১০ শতাংশই হয় কেবল সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সউদি আরবের সাথে। লাখ লাখ ভারতীয় কর্মীও মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতির চালিকা শক্তি। আবার দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির প্রবাসী রেমিটেন্সের অর্ধেকের বেশি আসে উপসাগরীয় ছয়টি দেশ থেকে।

দেশটির বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেছেন, উপসাগরীয় দেশগুলো শুধু বলেছে যে, নবী মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য করা উচিত নয়। গয়ালের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘উপসাগরীয় দেশগুলোতে বসবাসরত সব ভারতীয় নিরাপদ আছেন এবং তাদের চিন্তা করতে হবে না। বৈশ্বিক এই ক্ষোভ ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। ২০১৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য মোদি এবং বিজেপি জয় পাওয়ার পর ভারতে কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর জন্য জয়জয়কার হয়েছে। হিন্দুত্ববাদী এমন তৎপরতার ফায়দাও পেয়েছে দলটি। গত মার্চে দেশটির একাধিক রাজ্যের নির্বাচনে জয়ের পাশাপাশি ভোটারদের সমর্থন ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে দলটি। ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত দেশটির সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করেছে নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন। একই সঙ্গে ধর্মের ভিত্তিতে দেশটির নাগরিকত্ব আইনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই আইন নিয়েও দেশে-বিদেশে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে নয়াদিল্লি।

গত মার্চে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের হাই কোর্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কার্ফ পরিহিত মুসলিম শিক্ষার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গত মাসে দেশটির একটি টেলিভিশন বিতর্কে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নবী মুহাম্মদ (সা.) এবং ইসলামের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করেন বিজেপির মুখপাত্র নুপুর শর্মা। পরে মুসলিমদের বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান সমালোচনা এবং নিন্দার মুখে দলের মুখপাত্র নুপুর শর্মাকে বরখাস্ত এবং জিন্দালকে বহিষ্কার করেছে বিজেপি। কোনও সম্প্রদায় অথবা ধর্মের অবমাননা অথবা কাউকে হেয় করে— বিজেপি এমন মতাদর্শের বিরোধী বলে জানিয়েছে দলটি।

লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক হর্ষ ভি পান্ত বলেছেন, এই পর্বটি ভারতের সুনামের ক্ষতি করলেও এটি এখন নির্ভর করবে ইসলাম সম্পর্কে আরব অংশীদারদের উদ্বেগের প্রতি আগামীতে নয়াদিল্লি কতটা সংবেদনশীল এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেবে তার ওপর। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি নিরাপত্তা, কাজের ভবিষ্যৎ এবং মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরব বিশ্ব ও ভারত এবং বৈশ্বিক ব্যবস্থার মধ্যে যথেষ্ট মিল রয়েছে।



 

Show all comments
  • Mohmmed Dolilur ৯ জুন, ২০২২, ৪:৪১ এএম says : 0
    আরব দেশ থেকে হিন্দু প্রবাসীদের বাহির করলেই ওদের উচিত শিক্ষা হবে,এরা আরবের টাকা নিয়ে ভারতে মুসলমানদের ইবাদত করা জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে থাকে,মসজিদ ভেংগে দিয়ে মন্দির করার চেষ্টা করে,মুসলমানদের হত্যা করে,অত্যাচার করে ,অথচ আমাদের মুসলমান এর টাকা আরব থেকে এনে এই গুলি করেন,তাই আরব দেশ গুলি থেকে হিন্দুদের বাহির করে দেওয়া দরকার,অন্য দিকে এরা আরব দেশে এসে মদ গাঁজা বিভিন্ন নেশা করে,এতে আরব দেশের আগামী ভবিষ্যত্ হুমকির মুখে,ছেলে মেয়েরা ওদের ঐ গুলি দেখে খারাপ রাস্তায় চলে যাচ্ছে,হিন্দু কখন ও মুসলমানদের সাথে থাকবে না,যারা নিজেদের মা বাবার মুখে আগুন ধরিয়ে দিয়ে জালিয়ে দেয় এরা কতটা জানেয়ার সেটাতেই বুঝতে হবে,
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আনোয়ার আলী ৯ জুন, ২০২২, ৭:২৯ এএম says : 0
    বাংলাদেশেরও উচিৎ ভারতীয় পন্য বর্জন করা।
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ৯ জুন, ২০২২, ১১:০০ এএম says : 0
    সারা বিশ্বের হিন্দু ইহুদি-খ্রিস্টান বুদ্ধ কম্যুনিস্ট সবাই মুসলিমদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে শুধু তাই নয় 57 টি মুসলিম অধ্যুষিত দেশের সরকার ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে যারা আল্লাহর আইন চাই তাদেরকে মেরে ফেলা হয় না হলে গুম করে ফেলা হয় আর এই জন্যই সারা বিশ্বের কাফেররা মুসলিমদেরকে ইঁদুরের মতো মারছে মুসলিম অধ্যুষিত দেশে হিন্দুরা কাজ করে বিশেষ করে মিডিলিস্ট মিলিয়ন মিলিয়ন হিন্দুরা কাজ করে বাংলাদেশে হিন্দুরা কাজ করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে এখনই সময় এদেরকে সব দেশ থেকে বহিষ্কার করা দরকার| আমরাই ইসলাম ও মুসলিম এর শত্রু আমরা কুরআন এবং সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপন করি না এই জন্যই আজকে আমাদের উপর জঘন্যতম অত্যাচার চলছে
    Total Reply(0) Reply
  • Younus ৯ জুন, ২০২২, ৯:২৯ এএম says : 0
    ভারতের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী বিজেপি ও তার আরএসএস ইজম বর্ণবাদী রাজনীতি শুরু করে বৃহৎ সংখ‍্যালঘু মুসলিমদের জন‍্য বিপদের কারন হয়ে দারিয়েছে। অত‍্যাচারের মাত্রা দিনকে দিন বাড়ছে। ইসলাম ধর্মের ক্ষতিসাধন হেয় করা। আমাদের শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর পরিবার সম্পর্কে বিরুপ অবমাননা করা সারা বিশ্বের মুসলমানদের মনে আঘাত দিয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ৯ জুন, ২০২২, ১১:০৩ এএম says : 0
    মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পক্ষ থেকে কঠোর সতর্কবাণী: সূরা:আল-আনফাল: আয়াত: 73.. এবং যারা অবিশ্বাসী তারা একে অপরের মিত্র, [এবং] যদি তোমরা [সমস্ত বিশ্বের মুসলিমরা সম্মিলিতভাবে] একতাবদ্ধ না হও [অর্থাৎ: সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জন্য একজন প্রধান মুসলিম শাসক) ইসলামিক একেশ্বরবাদের আল্লাহর ধর্মকে বিজয়ী করতে), যদি একতাবদ্ধ না হও তাহলে সারা বিশ্বে ফিতনা [যুদ্ধ, ধর্ষণ, ব্যভিচার, খুন, শিরক] এবং পৃথিবীতে অত্যাচার, এবং এক বিরাট ফাসাদ ও দুর্নীতি পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে।]
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ