Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচারের হুমকি, বোয়ালমারীর ইউএনওকে তলব করলেন হাইকোর্ট

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০২২, ১০:১৪ পিএম

আদালতের নোটিশ জারিকারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচারের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ইউএনও মো. রেজাউল করিম ও নাজির উকিল মিয়াকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ২১ জুন তাদেরকে সশরীরে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।

একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেছেন আদালত। সংশ্লিষ্টদেরকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ সময় আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় উপস্থিত ছিলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেন, একজন ইউএনও উপজেলা প্রশাসনের প্রধান কর্মকর্তা। আদালতের আদেশ পালনের জন্যই নোটিশ জারিকারক তার কার্যালয়ে গিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই নোটিশ রিসিভ করা দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের। কিন্তু নোটিশ জারিকারকের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আবার ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচারের হুমকি দিয়েছে। যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি এ বিষয়ে খোঁজ নেব। প্রকৃত ঘটনা কি জানার চেষ্টা করব।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ছরোয়ার শেখ বনাম নির্বাহী প্রকৌশলী, সওজ’ মামলাটি ফরিদপুরের বোয়ালমারী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বিচারাধীন। এ মামলার নোটিশ জারির জন্য ফরিদপুর জেলা জজ আদালতের নেজারত শাখার জারিকারক কামাল হোসেন ও মেহেদী হাসান গত ২৭ এপ্রিল দুপুর আড়াইটার দিকে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে যান। ওই কার্যালয়ের নাজির উকিল মিয়াকে নোটিশ গ্রহণের অনুরোধ করেন তারা।

কিন্তু নোটিশ গ্রহণ না করে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে অপেক্ষায় রাখেন। বিকেল ৪টায় পুনরায় নাজিরের কাছে গেলে তাদেরকে ওপর তলায় গিয়ে বসতে বলেন। এ সময় নোটিশ জারিকারকরা বলেন, তাদের অন্যত্র নোটিশ জারি করতে হবে। তখন উকিল মিয়া বলেন, তাতে তার কি, জজ কোর্টের নোটিশ না রাখলে তার কি হবে? তিনি এর চেয়ে বড় কাজে ব্যস্ত আছেন। তিনি নোটিশটি পাশের টেবিলে দিতে বলেন। কিন্তু পাশের টেবিলের দায়িত্বরত কর্মচারী নোটিশ বুঝে নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় জারিকারক মেহেদী হাসান নোটিশ জারি না করে চলে আসার জন্য কামাল হোসেনকে বলেন। এছাড়া বিষয়টি কোর্টকে অবহিত করবেন মর্মে বলেন।

তখন উকিল মিয়া বলেন, জজের ভয় দেখিয়ে লাভ নাই। আমরা নির্বাহী বিভাগের লোক। নোটিশ না রাখলে আমাদের কিছু হবে না। তখন জারিকারক মেহেদী হাসান ঘটনাস্থল ত্যাগ করার জন্য পুনরায় কামাল হোসেনকে বললে ওই সময় নাজির উকিল মিয়া নোটিশ বুঝে নেন। ইতোমধ্যে উক্ত অফিসের একজন কর্মচারী বিষয়টি ইউএনওকে অবহিত করলে তিনি জারিকারকদের তার কক্ষে ডেকে নিয়ে দরজা আটকে জেরা করতে থাকেন। একইসঙ্গে ইউএনও অফিসের স্টাফদের সঙ্গে বাজে ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাদেরকে সাজা প্রদানের হুমকি দেন ইউএনও।

ইউএনও এ সময় তাদের উভয়ের মোবাইল ফোন জোরপূর্বক কেড়ে নেন এবং মুচলেকা দিয়ে চলে যেতে বলেন। তাদের এনআইডি কার্ডের নম্বর চান ও কার্ড জমা দিতে বলেন। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে জারিকারকদ্বয় রোজা রেখেছেন বললে ইউএনও তাদের জানান, মুচলেকা ব্যতীত তিনি তাদেরকে ছাড়বেন না। তিনি তাদেরকে পা ধরে মাপ চাইতে বাধ্য করেন এবং জোরপূর্বক তার নির্দেশনা মতে মুচলেখা লিখে ছেড়ে দেন।

পরে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট জেলার বিচার প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানান জারিকারকদ্বয়। এ অভিযোগের অনুলিপি আইন ও বিচার বিভাগের সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেল বরাবর পাঠান ফরিদপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. আকবর আলী শেখ। এরপর বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আসলে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে উপরোক্ত আদেশ দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ