মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনা করার সময় ১৯৮৯ সালে তিয়েনআনমেন বিক্ষোভে অংশ নিতে আমি চীনে ফিরে গিয়েছিলাম। অনেক বিক্ষোভকারীর চেয়ে আমি ভাগ্যবান ছিলাম, কারণ অল্পের জন্য আমি গণহত্যার হাত থেকে বেঁচেছি। পরে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আসি। এরপর থেকে আমি এখানেই থাকছি এবং মানবাধিকার নিয়ে কাজ করছি।
সিটিজেন পাওয়ার ইনিশিয়েটিভ ফর চায়না- এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রেসিডেন্ট জিয়ানলি ইয়াং দ্য উইক পত্রিকায় নিজের অভিজ্ঞতার কথা লিখেন।
তিনি লিখেন, তিয়ানআনমেন স্কয়ারে গোলাগুলি শুরু হয়েছিলো ৪ জুন। আমি তখন সেখানেই ছিলাম। এতটা কাছে ছিলাম যে, আমি তখন সৈন্যদের লক্ষ্য করে চিৎকার করছিলাম, যেন তারা গুলি না চালায়।
এ জন্য আমরা দেশত্ববোধক গানও গেয়েছিলাম, যে গান প্রতিটি চীনা নাগরিকের হৃদয় স্পর্শ করে। কিন্তু সৈন্যরা তাদের ওপর আরোপিত নির্দেশ বাস্তবায়ন করে। চোখের সামনে ১১ জন ছাত্রকে ট্যাংকের নিচে পিষে যেতে দেখেছি।
ট্যাঙ্ক ম্যানের যে ছবিটি বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তৈরি করেছে সেটি তোলা হয়েছিলো পরেরদিন অর্থাৎ ৫ জুন সকালে। তখনো গণহত্যা চলছিলো। যে কোনো মাপকাঠিতে এই ছবিটি বীরত্বের দাবিদার। কিন্তু ছবিতে আমরা কজন বীর দেখি?
ছবিটি তোলার প্রায় নয় বছর পরে লেখক পিকো আইয়ার বলেছিলেন, ‘ট্যাঙ্কের ওই ছবির নায়ক দুজন। অজানা ব্যক্তি, যিনি ট্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন এবং ড্রাইভার যিনি তার স্বদেশীকে হত্যা না করতে ঝুঁকিপূর্ণ নৈতিক এক চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন।’
ট্যাঙ্ক চালক সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়া ওই ব্যাক্তিটিকে শুধু হত্যা করা থেকেই বিরত থাকেননি, নিঃসন্দেহে তিনি অন্যায় আদেশও অমান্য করেছিলেন। ছবিটি ব্যাপক সাড়া ফেলার পর সম্ভবত তিনি শাস্তিও পেয়েছেন।
সৈন্যরা শিক্ষার্থীদের হত্যা করছে, ৪ জুন এ দৃশ্য দেখার পর আমি আমি স্কয়ারের কাছে এক তরুণ সৈনিককে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। তার মাথায় হেলমেট ছিল না এবং কাছে বন্দুকও ছিল না। তাকে দেখতে কিশোরদের মতো লাগছিলো।
আমরা তখন ক্ষুব্ধ ছিলাম। ধাওয়া করে ধরে সবাই মিলে ওই সৈন্যকে মারছিরাম। এসময় তিনি চিৎকার করে বললেন, ‘আমি এটা করিনি! আমি গুলি করিনি!’ বুঝলাম- বড় ভুল হয়ে গেছে।
আমি পেছনে না তাকিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করলাম। কয়েক মিনিট পরে, পিছন থেকে চিৎকারের শব্দ পেলাম। জানলাম- তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমি কাঁদতে লাগলাম!
অন্যা সৈন্যদের মতো, তিনও হয়তো শক্তিহীন ছিলেন। কিন্তু নৈতিকতার জায়গা থেকে গুলি না চালিয়ে পালিয়ে এক কোনে চলে এসেছিলেন। যদি তাই হয়, তাহলে তিনও একজন নায়ক; বিপরীত শিবিরের আরেক ট্যাঙ্ক ম্যান!
কিন্তু আমরা কি করলাম! আমি যখন এই সৈনিককে দেখেছিলাম, তখন কেবল শত্রু হিসাবেই দেখেছিলাম। তিনি যে যন্ত্রণা ভোগ করেছেন এবং মারা যাওয়ার সময় তিনি কী ভাবছিলেন, কল্পনা করতেই আমার আত্মগ্লানি হয়।
আজ ৩৩ বছর ধরে এই গ্লানি আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। আমি তার পরিবারের কথা ভাবি। অপেক্ষা করি- হয়তো কোন একদিন আমি তাদের খুঁজে পাবো। নিজের দোষ স্বীকার করে তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রায়শ্চিত্তের চেষ্টা করবো।
সেদিন বেইজিংয়ের রাস্তায় ট্যাঙ্ক ম্যানের মতো অনেক বিক্ষোভকারী ছিলেন, যারা সৈন্যদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজেদের জীবন হারিয়েছেন।
কিন্তু সেখানে এমন কিছু সৈন্যও ছিলেন (দ্বিতীয় ট্যাঙ্ক ম্যান- ট্যাঙ্ক না চালানো ড্রাইভার এবং হত্যার শিকার সেই সৈন্য) যারা কমিউনিস্ট পার্টির আদেশ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
সুতরাং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেমন কর্তৃত্ববাদী কর্মকাণ্ড থাকে, তেমনি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রদীপ হাতে হেঁটে চলা কিছু নির্ভিক মানুষ থাকেন। এদের উপেক্ষা করে গোটা সমাজকে কোন আখ্যা দেওয়া সঠিক কাজ নয়।
সুতরাং অভিন্ন আদর্শ ও নৈতিক গুণসম্পন্ন মানুষদের প্রাপ্য সম্মান দেখানো উচিত। হোক সেটা গণতান্ত্রিক বা কর্তৃত্ববাদী সমাজে। আমাদের উচিত অন্তত ঢালওভাবে কোন সমাজকে ভ্রান্ত আদর্শ বা কর্তৃবাদী সমাজ হিসেবে আখ্যা না দেওয়া। হোক সেটা প্রাচ্যে অথবা পাশ্চাত্যের কোন দেশে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।