পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গ্রাহকের ২৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তৎকালীন প্রধান নির্বাহী এবং উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যরা। বিভিন্ন ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাত করা হয় বিপুল এ অর্থ। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উদঘাটিত হয় আত্মসাতের এই ঘটনা। কিন্তু জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণকারী দুই সংস্থার রশি টানাটানি শেষ হয়নি ৭ বছরেও। ফলে বিচারের আওতায় আনা যায়নি জড়িতদের। এতে আত্মসাতকারীরা ভোগ করছেন এক ধরনের দায়মুক্তি। কেউ কেউ উচ্চ বেতনে চাকরি করছেন অন্য প্রতিষ্ঠানে। কেউবা গেছেন অবসরে। তবে অদৃশ্য ইশারায় বিষয়টি ৫ বছর ধামাচাপা রেখে সম্প্রতি আইডিআরএ প্রোগ্রেসিভ ইন্স্যুরেন্স লাইফকেই ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে সংস্থাটি প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি: নামক একটি বীমা প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন ভুয়া বিল-ভাউচারে মোট ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অনুসন্ধান শুরু করে, যার ঢাকার (স্মারক নং-দুদক/বিকা/ঢাকা/১১-২০১৫/অনু:/ঢাকা-১/২৩১১, তারিখ ২৪/০৮/২০১৬ খ্রি:)। এর একটি ‘বিষয়’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ‘জনাব এম এ করিম, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপদেষ্টা, প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোং লি: এবং অন্যদের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য দিয়ে বেশি মূল্যে প্লট ক্রয়ের মাধ্যমে কোম্পানির ১৬ কোটি ৭০ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ।’
সূত্র মতে, অভিযোগ প্রমাণের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষা প্রতিবেদন। অডিট প্রতিষ্ঠান ‘হুডা ভাসি চৌধুরী কোম্পানি’ ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রোগ্রেসিভ লাইফের নিরীক্ষা প্রতিবেদন দেয়। তাতে প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া অনুমোদনহীন এজেন্টকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কোটি কোটি টাকা প্রদানের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। আত্মসাতের সঙ্গে এম এ করিম, এনায়েত আলী খান ছাড়াও তৎকালীন সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক (সুজন বীমা বিভাগ) মো. মনিরুজ্জামান খান এবং সিনিয়র ব্যবস্থাপক (ইসলামী বীমা তাকাফুল বিভাগ) মো. রফিকুজ্জামানসহ ১৯ কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা উঠে আসে। তারা পারস্পরিক যোগসাজশে ৭টি খাত ২২ কোটি ৩৪ লাখ ৩৬ হাজার ৮৪৮ টাকা হাতিয়ে নেন। আবাসিক প্রকল্পে প্লট ক্রয়, চট্টগ্রাম ও সিলেটে জমি ক্রয়, গাড়ি কেনা, ইসলামী বীমা (তাকাফফুল) বীমার সার্ভিস বন্ধ করে দেয়ার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের তথ্য ছিল অডিট রিপোর্টে। দুদক তাই আত্মসাতের তথ্য সম্বলিত হুডা ভাসি চৌধুরী কোম্পানির অডিট রিপোর্টের মূল কপি, ভুয়া বিল-ভাউচারের টাকা এন্ট্রিকৃত রেজিস্ট্রার বই, ক্যাশ রেজিস্ট্রার ও প্রাপ্তি রেজিস্ট্রার বই, বিল ভাউচারে অর্থ প্রাপ্তির আবেদনপত্র, অর্থ ছাড়, অর্থ বুঝে নেয়া সংক্রান্ত মূল রেকর্ডপত্র তলব করেছিল।
দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর তৎকালীন উপ-সহকারী পরিচালক মো. নূর আলম বিষয়টি অনুসন্ধান শুরু করেন। উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম অনুসন্ধানটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন। পরে অনুসন্ধানটি আর এগোয়নি। পাঠিয়ে দেয়া হয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্র্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)-এর কাছে।
দুদক সূত্র জানায়, প্রতিটি বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানি সরকার থেকে নিবন্ধনপ্রাপ্ত এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও শাসিত। তা সত্ত্বেও দুদক বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠানের আত্মসাত, প্রতারণা, জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধান করতে পারবে নাÑ মর্মে ব্যাখ্যা দিয়ে দুদক প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মতো অন্যান্য বীমা প্রতিষ্ঠানের অনুসন্ধানগুলোও বন্ধ করে দেয়। আইনগত এখতিয়ার খতিয়ে না দেখেই বীমা সংক্রান্ত সব অভিযোগ গণহারে ‘ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য’ দুদক বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্র্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)-এর কাছে ফেরত পাঠায়। ২০১৭ সালের ১৫ মে আইডিআরএ-এর চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এই অনুসন্ধান ফেরত পাঠানো সংক্রান্ত চিঠিতে (স্মারক নং-দুদক/অনু:ও তদন্ত-১/অনু:৩৭০/ঢাকা/২০১৪) উল্লেখ করা হয়, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, জনাব এম এ করিম এবং অন্যদের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য দিয়ে বেশি মূল্যে প্লট ক্রয়ের মাধ্যমে কোম্পানির ১৬ কোটি ৭০ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাতের একটি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কমিশন আইনের সংশোধনীর ফলে এটি কমিশনের এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ায় অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিসমাপ্ত করার এবং একই সঙ্গে এই অভিযোগের বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত দপ্তর/সংস্থা হিসেবে অভিযোগটি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বিধায় অভিযোগটি পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের নিমিত্তে নির্দেশক্রমে এতদসঙ্গে প্রেরণ করা হলো। চিঠিটিতে সংস্থার তৎকালীন উপ-পরিচালক (অনু: ও তদন্ত-১) মো. বেনজীর আহম্মদের স্বাক্ষর রয়েছে।
দুদকের এই চিঠির প্রেক্ষিতে আইডিআরএ কোনো আইগত ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি। এমনকি ন্যূনতম তদন্তেরও উদ্যোগ নেয়নি। জানা গেছে, আইডিআরএ-এর একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অদৃশ্য ইশারায় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রাখে। তবে সম্প্রতি বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দুদক বীমা খাতের দুর্নীতি অনুসন্ধান-তদন্তের এখতিয়ার ফিরে পায়। এর ভিত্তিতে সম্প্রতি বৃহৎ একটি বীমা প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাত এবং সংশ্লিষ্টদের অর্থ পাচারের অভিযোগে পৃথক ২টি মামলা করে। ওই মামলার পর প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির আলোচ্য ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনার বিষয়ে ‘ব্যবস্থা’ নিতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (আইন)-এর দপ্তরে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে একসময় আত্মসাতের বিষয়টি আইডিআরএ ফেরত পাঠানো হলেও বর্তমান বাস্তবতায় দুদক বীমা খাতের আত্মসাত, জালিয়াতি ও পাচারের মতো অপরাধের অনুসন্ধান-তদন্ত নতুন করে শুরু করেছে। এ বিষয়ে সংস্থার কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান এ প্রতিবেদককে বলেন, ব্যাংক-বীমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির অনুসন্ধান-তদন্ত এখন দুদকের এখতিয়ার। আইনগত সীমাবদ্ধতা যেটুকু ছিল সেটি কেটে গেছে। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেনÑ একটি বীমা প্রতিষ্ঠানের বেশ ক’জনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই মামলা হয়েছে। আরো অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। সুতরাং বীমা খাতে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে নিশ্চয়ই আমরা অনুসন্ধান-তদন্ত করব।
তবে সাত বছরেও আইডিআরএ কেন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়নিÑ জানার চেষ্টা করা হয় সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের কাছে। কিন্তু একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এ বিষয়ে প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কোম্পানি সেক্রেটারি জহিরউদ্দিন টেলিফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, আইডিআরএ কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি- এটি সত্যি নয়। চলতি বছর ২৩ মার্চ তারা আমাদের মুখ্য নির্বাহীকে চিঠি লিখে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।