Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উত্তম স্বামী-স্ত্রী কারা

মাওলানা হাসীবুর রহমান | প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

কোরআন-হাদীসের বিবরণ থেকে জানা যায় যে, উত্তম স্ত্রী হলো যে স্বামীকে সম্মান করে। স্বামীর বশ্যতা স্বীকার করে। স্বামীর আদেশ-নিষেধ মান্য করে। স্বামীর ধন-সম্পদ হেফাযত করে এবং অন্যান্য হকসমূহ যথাযথভাবে আদায় করে। সাথে সাথে নিজের সতীত্ব রক্ষা করে, শরীয়তের বিধানুসারে জীবন পরিচালনা করে।
স্বামীর উপস্থিতি-অনুপস্থিতি সর্বাবস্থায় নিজের সতীত্ব এবং স্বামীর ধন-সম্পদ হেফাযত করা স্ত্রীর কর্তব্য। সাধারণত এদু’টি ক্ষেত্রে মহিলাদের থেকে সবচেয়ে বেশি খেয়ানত হয়ে থাকে। কোনো কোনো মহিলার ক্ষেত্রে এমনও ঘটে যে, স্বামী ঘর থেকে বের হলে, চাকরি বা অন্য কোনো স্থানে গেলে, সেই সুযোগে স্বামীর অজান্তে নিজেকে নাফরমানির কাজে জড়িয়ে ফেলে। স্বামীর উপস্থিতিতে এটা সে করতে পারত না।

বাহ্যিক দৃষ্টিতে এতে স্বামীকে ধোকা দেওয়া হলেও প্রকারান্তরে এটা হচ্ছে নিজের জীবনে অভিশাপ টেনে আনা। সুতরাং স্ত্রীর অবশ্যকর্তব্য হলো, আল্লাহকে হাযির-নাযির জেনে স্বামীর উপস্থিতি-অনুপস্থিতি সর্বাবস্থায় নিজের ইজ্জত-আব্রু সংরক্ষণ করা। হাদীস শরীফে আছে-‘উত্তম স্ত্রী হলো, যখন তুমি তার দিকে তাকাও তখন সে তোমাকে আনন্দিত করে। যখন তাকে আদেশ কর তখন সে আনুগত্য করে আর যখন তুমি স্থানান্তরে যাও তখন সে তার ইজ্জত-আব্রু রক্ষা করে এবং সম্পদ হেফাযত করে।’

আর যে স্ত্রী শরীয়তের হুকুম মেনে চলে, স্বামীর আদেশ মান্য করে, তার খেদমত করে, নিজের সতীত্ব রক্ষা করে হাদীস শরীফে তার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে, রমযান মাসের রোযা রাখে, লজ্জাস্থানের হেফাযত করে এবং স্বামীর অনুগত থাকে তাকে বলা হবে তুমি যে দরজা দিয়ে চাও জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৬৬১)।

পক্ষান্তরে যে স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে ভালো আচরণ করে না এবং স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকে তার সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে যে, ‘তার কোনো নামায কবুল হয় না, কোনো নেক আমল উপরে উঠানো হয় না যতক্ষণ স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট না হবে। (সহীহ ইবনে হিববান : ৫৩৫৫)।
অন্য হাদীসে আছে-হুসাইন ইবনে মুহসিন থেকে বর্ণিত, তাঁর এক ফুফু নবী করীম (সা.)-এর কাছে কোনো প্রয়োজনে এসেছিলেন। তাঁর প্রয়োজন পূর্ণ হলে নবী (সা.) বললেন, তুমি কি বিবাহিতা? তিনি বললেন, জ্বী হ্যাঁ। নবীজী বললেন, তুমি স্বামীর সাথে কেমন আচরণ করে থাক? তিনি বললেন, আমি একেবারে অপারগ না হলে তার সেবা ও আনুগত্যে ত্রুটি করি না। তখন নবী (সা.) বললেন, স্বামীর সাথে তোমার আচরণ কেমন তা ভেবে দেখ। কারণ স্বামীই তোমার জান্নাত কিংবা জাহান্নাম। (মুসনাদে আহমদ খ. ৪, পৃ. ৩৪১৩; খ. ৬, পৃ. ৪১৯)।
একটি পরিবার সুন্দর ও সুখময় করে গড়ে তোলার জন্য স্বামীর কর্তব্য সবচেয়ে বেশি। সুতরাং সে যেন স্ত্রীর খুটিনাটি বিষয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ না করে এবং স্ত্রীকে সব কথা মেনে নেওয়ার জন্য বাধ্য না করে। কেননা নারীদেরকে সৃষ্টিই করা হয়েছে নাযুক তবিয়ত দিয়ে। অতএব স্ত্রীর ওপর অধিক চাপ প্রয়োগ করতে থাকলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশংকাই বেশি।

হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড্ডি দ্বারা। তুমি যদি তাকে সোজা করতে যাও তাহলে ভেঙ্গে ফেলবে। তাই তার মন রক্ষা করে চল। তাহলেই একসাথে জীবন যাপন করতে পারবে। (সহীহ ইবনে হিববান : ৪১৭৮)।

আরেকটি হাদীসে আছে-রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ কর। কেননা তাদেরকে পাঁজরের হাড্ডি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড্ডিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বাঁকা হল উপরেরটি। সুতরাং তুমি যদি তা সোজা করতে যাও তাহলে ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি একেবারে ছেড়ে দাও তাহলে বাঁকাই থেকে যাবে। তাই স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ করা।’ (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)।

অতএব স্বামী নিজেকে সংযত রাখবে। সবকিছু ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবে। ছাড় দেওয়া ও মায়া-মমতার মাধ্যমে যতদূর সম্ভব দাম্পত্য জীবন স্থায়ী করার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। মাথা গরম করে দীর্ঘ দাম্পত্য জীবন এক নিমিষেই শেষ করে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন