পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদ থেকে পাসের সনদ আছে, কিন্তু নেই পেশাগত স্বীকৃতি। স্বাস্থ্য অধিদফতর পরিচালিত এবং ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অধিভুক্ত ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি ইন হেলথ/মেডিক্যাল টেকনোলজী (ডেন্টাল) কোর্সের পাসকৃত প্রায় ২ হাজার গ্র্যাজুয়েটদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ কিংবা প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ কোনোটাই নেই। সনদ থেকেও কর্মের সুযোগ না থাকায় দিশেহারা তারা। শুধুমাত্র একটি নীতিই যথেষ্ট ছিল এসব গ্র্যাজুয়েটদেরকে স্বাস্থ্যখাতে কাজে লাগানোর জন্য। সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন সময়ে এ সমস্যা নিয়ে তাদের সঙ্গে একমত পোষন করেছেন। কিন্তু সমাধানের দায়িত্বভার নেননি কেউই। ফলসরুপ বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ থাকলেও কোনো কাজে আসছে না। একদিকে নেই দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ অন্যদিকে বহির্বিশ্বে যেতে গেলেও পোহাতে হচ্ছে নানাবিধ বাধা। সরকার একদিকে কর্মমুখী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের কথা বলছেন। অন্যদিকে পেশাগত দক্ষতা থাকার পরও ২ হাজার শিক্ষার্থীর স্বীকৃতির কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
বিএসসি-ডেন্টাল কোর্সটির কারিকুলাম বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কারিকুলামের বিষয়বস্তু ক্লিনিক্যাল ও সম্পূর্ণ প্র্যাকটিস নির্ভর। অনেকাংশে বিডিএস কোর্স কারিকুলামের মতোই। এরপরও সনদধারীদের দেয়া হয় না প্র্যাকটিসের অনুমোদন। ৪ বছর মেয়াদি ডেন্টাল কোর্সটির ৩ বছর একাডেমিক এবং শেষ ১ বছর ইন কোর্স ট্রেনিং (ইন্টার্নি) এর মাধ্যমে শেষ হয়। ১ বছরের ইনকোর্স ট্রেনিং দেশের সরকারি ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে/মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডেন্টাল ইউনিটের বিভাগসমূহে সম্পন্ন হয়। কোর্সটিতে ভর্তির যোগ্যতা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস অথবা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ৩/৪ বছরের ডিপ্লোমা।
এ কোর্সের একজন শিক্ষার্থীকে দন্তচিকিৎসা বিষয়ক হিউম্যান এনাটমি, ফিজিওলজি, মাইক্রোবায়োলজি, প্যাথলজি, ওরাল অ্যান্ড ডেন্টাল এনাটমি, অর্থডোন্টিক্স, ডেন্টাল প্রস্থেটিক্স, ওরাল প্যাথলজি অ্যান্ড ওরাল মেডিসিন, কেমিস্ট্রি অব ডেন্টাল ম্যাটারিয়ালস, চিলড্রেন অ্যান্ড প্রিভেনটিভ ডেন্টিস্ট্রি, ডেন্টাল সার্জারি অ্যাসিস্টেন্স অ্যান্ড এনেসথেটিকস, জেনারেল অ্যান্ড ডেন্টাল ফার্মাকোলজি, কনজারভেটিভ ডেন্টিস্ট্রি এবং ডেন্টাল রেডিওলজিসহ বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল বিষয়ে (১৯৭০ ঘণ্টা তত্ত্বীয় ও ১২০৬ ঘণ্টা) ব্যবহারিক পড়ানো হয় যা বিডিএস কোর্সের বিষয়সমূহের সাথে প্রায় সদৃশ। এমনকি শিক্ষার্থীদের ক্লাস, পরীক্ষা ও হাতে-কলমে প্রশিক্ষণও দেন এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রীধারী চিকিৎসকরা। এছাড়া এক বছর ইনকোর্স ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে এই কোর্সের শিক্ষার্থীরা বিডিএস কোর্সের শিক্ষার্থীদের ন্যায় ডায়াগনসিস, কনজারভেটিভ, সার্জারি, প্রস্থডোন্টিক, অর্থডোন্টিক ও চিলড্রেন ডেন্টিস্ট্রিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে সরাসরি প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। তারপরও কোর্স টাইটেলের সঙ্গে জুড়ে আছে ‘টেকনোলজি’ শব্দটি। অথচ এ কোর্সের সিলেবাসে টেকনোলজির বিষয়বস্তুর ছিটাফোঁটাও নেই। বাস্তবিক অর্থে বিশ্বে ডেন্টাল টেকনোলজি ডিগ্রীর জন্য যে কারিকুলাম, ল্যাব ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা রয়েছে তার অস্তিত্ব এখনো বাংলাদেশে নেই। একজন ডেন্টাল ল্যাবরেটরী টেকনিশিয়ানের পঠিত বিষয় ও কাজ হলো কৃত্রিম দাঁত বানানো (আর্টিফিসিয়াল ডেনচার, ক্রাউন, ব্রীজ), দাঁতের ছাপ নেয়া, মডেল বানানো প্রভৃতি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ সকল কাজ করার জন্য বা শেখার জন্য শর্টকোর্স/সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করলেই হয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দন্তচিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাচেলর ডিগ্রীধারী হয়েও শুধুমাত্র বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) তফসিলে কোর্সটি অন্তর্ভুক্ত না করায় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পেশাগত চর্চার সুযোগ না পেয়ে সবাই হতাশায় ভুগছেন। দীর্ঘদিন পার হলেও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও এ সব গ্র্যাজুয়েটদের ডেন্টাল পেশায় এখনো কোনো সুযোগ সৃষ্টি করা হয়নি। এমনকি বহির্বিশ্বে এ সকল প্রশিক্ষিত জনবলের প্রচুর চাহিদা সত্ত্বেও শুধুমাত্র পেশাগত অনুমোদন অর্থাৎ বিএমডিসির স্বীকৃতি না থাকায় বঞ্চিত করা হচ্ছে।
এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সরকারিভাবে কোর্সটি অনুমোদনের সময় কোর্সটিকে বিএমডিসি’র অধির্ভুক্ত ও শর্তসমূহ প্রতিপালনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করে। কোর্সটিকে বিএমডিসি’র তফসিলভুক্ত করার সিদ্ধান্ত থাকলেও বিএমডিসি কোনোরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
শিক্ষার্থীরা আন্দেলনে নামলে, স্বাস্থ্য অধিদফতর ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটির ২০১৩ সালের ৩০ জানুয়ারি দুটি সুপারিশ প্রদান করা হয়। সুপারিশের একটি চিঠি বিএমডিসি’র কাছে এবং অন্যটি ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠায়। বিএমডিসি’র কাছে পাঠানো চিঠিতে বিএসসি ইন হেলথ/মেডিকেল টেকনোলজী ডেন্টাল কোর্সটিকে বিএমডিসি অনুমোদিত করে প্রাইভেট প্র্যাকটিস রেজিস্ট্রেশন প্রদানের সুপারিশ করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো চিঠিতে কোর্সটির বিদ্যমান ‘কোর্স টাইটেল’ পরিবর্তন করে ‘ব্যাচেলর অব ডেন্টিস্ট্রি’ অথবা ‘বিএসসি ইন ডেন্টিস্ট্রি’ করার সুপারিশ করা হয়। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো সুপারিশ বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির চাপে অকারণে ও ব্যাখ্যাহীনভাবে প্রত্যাহার করে নিলে বিএসসি-ডেন্টাল এসোসিয়েশন মহামান্য উচ্চ আদালতের দারস্থ হয়ে একটি রীট পিটিশন মামলা দায়ের করেন। এ মামলার রায়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর সুপারিশ দুটিকে প্রত্যাহার করাকে অবৈধ ঘোষণা করেন এবং সুপারিশ দুটিকে বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ ও বিএমডিসিকে নির্দেশ প্রদান করেন।
অপরদিকে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০ এর ধারা ১৪(২) অনুযায়ী বাংলাদেশে অবস্থিত বা বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থিত ডেন্টাল চিকিৎসা শিক্ষা যোগ্যতার ডিগ্রী বা ডিপ্লোমা প্রদানকারী কোন প্রতিষ্ঠানের নাম তফসিলে অন্তর্ভূক্ত না থাকলে উক্ত প্রতিষ্ঠানকে বা উক্ত ডিগ্রী বা ডিপ্লোমাধারী ব্যক্তিকে এ আইনের অধীনে উক্ত যোগ্যতার স্বীকৃতি অর্জনে কাউন্সিলের নিকট আবেদন করতে হবে। স্বীকৃতি অর্জনের লক্ষ্যে কাউন্সিলের নিকট আবেদনের পর ধারা ১৪ এর উপধারা ৪ অনুসারে কাউন্সিল আবেদনকারীদের কারিকুলাম পর্যালোচনা, নির্ধারিত মানদণ্ড যাচাই বাছাই করবে। পরে বিএমডিসি আইনের এসকল নিয়মনীতি অনুসরণ করে বারবার আবেদনও করা হয়। কিন্তু তারা বিষয়টি আমলে নেয়নি। এমনকি তাদের বিধি মোতাবেক মানদণ্ড যাচাই বাছাই এর কথা থাকলেও তারা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সর্বশেষ তারা আবেদনকারীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মূল বিষয়বস্তুকে পাশ কাটিয়ে অস্পষ্টভাবে ব্যখা প্রদান করে আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। আবেদনে বিএসসি ডেন্টাল কোর্সটিকে তফসিল ভুক্ত করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও বিএসসি ডেন্টাল কোর্স টাইটেলে সংযুক্ত ‘টেকনোলোজি’ শব্দটিকে অপব্যাখা করে ক্লিনিক্যাল কারিকুলামকে টেকনোলজিস্টের তকমা লাগিয়ে নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যায় ডেন্টাল কাউন্সিল।
যদিও বর্তমান আইনের ধারা ১৫ অনুযায়ী বাংলাদেশে অবস্থিত বা বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থিত কোন মেডিকেল প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত তিন বছরের কম নয় এমন সময়ব্যাপী মেডিকেল চিকিৎসা প্রশিক্ষন সমাপ্তির পর ওই মেডিকেল চিকিৎসা ডিপ্লোমাধারী এ আইনের অধীন কাউন্সিল থেকে নিবন্ধিত হওয়ার যোগ্য হবে। পাশাপাশি শুধুমাত্র এসএসসি পাসের পর বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ থেকে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট বিষয়ে ৩/৪বছর কোর্স সম্পন্ন করে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল থেকে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস রেজিস্ট্রেশন সনদ প্রাপ্তির মাধ্যমে বৈধভাবে মেডিসিন ও মিডওয়াইফারী প্র্যাকটিস করছেন।
অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ বছর মেয়াদী পেশাগত ডেন্টাল ডিগ্রী অর্জনের পরও বিএমডিসি স্বার্থান্বেষী মহলের প্রভাবে বা প্ররোচনায় নানা অজুহাত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ ডিগ্রীধারী গ্রাজুয়েটদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন বরে মনে করছে বিএসসি-ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব উত্তম কুমার।
বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির সভাপতি, ঢাকা ডেন্টাল কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. আবুল কাশেম বলেছেন, বিডিএস কোর্সের সিলেবাস এবং বিএসসি ডেন্টালের সিলেবাস প্রায় একই। তিনি বলেন, বিএসসি ডিগ্রিধারীদের স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে প্র্যাকটিস রেজিস্ট্রেশন প্রদানের জন্য যে সুপারিশের কথা বলা হয়েছিল সেটি সত্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।