পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ। তবে কি পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে সে বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আগের মতো ক্যাম্পাসে সশরীরে পরীক্ষা নেয়া হবে নাকি অনলাইনে সে বিষয়ে চলছে আলোচনা, বিশ্লেষণ চলছে বিকল্প পদ্ধতির। যদিও সশরীরে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষার পদ্ধতিকেই বেশি যৌক্তিক মনে করা হচ্ছে, তবে অনলাইনের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছে না বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় ভাবছে, অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার কথা।
অন্যদিকে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইনের ক্ষেত্রে কারচুপি ঠেকানো চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এদিকে পরীক্ষা পদ্ধতি এবং অনলাইনের চিন্তাভাবনা শুরুর পর থেকেই উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বিশেষ করে প্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ করা হলে তা গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত কিভাবে অংশগ্রহণ করবে তা নিয়ে তাদের মধ্যে রয়েছে দুঃশ্চিন্তা। করোনা সংক্রমণের কারণে এবার এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা গ্রহণ করতে পারেনি সরকার। এজন্য জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ফল প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই এই পরীক্ষার ফল প্রকাশের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ফল ঘোষণার পর উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন। তাই মন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকেই আলোচনা শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কি পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হবেন? বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। এর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাথে বৈঠকে বসেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা। সেই বৈঠকের পর শনিবার ভার্চুয়ালে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায় যুক্ত হন ভিসিরা। এই সভায় নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। ওই বৈঠকেই অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর মুনাজ আহমেদ নূরের নেতৃত্বে তৈরি করা সফটওয়্যার উপস্থাপন করা হয়। তবে ওই বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে আলোচনা করে।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি এবং চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মুহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন এই পরীক্ষা অনলাইনে হবে না কি সশরীরে হবে সেটি আরও আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে। তবে অনলাইনে পরীক্ষার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির ভিসির তৈরি করা একটি সফটওয়্যার উপস্থাপন করা হয়েছে। অনেক ভিসি তাতে ‘কনভিন্স’ হয়েছেন। তবে সরকার ও ইউজিসির সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
কবে ভর্তি পরীক্ষা হবে জানতে চাইলে মুহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, এটি নির্ভর করছে এইচএসসির মূল্যায়নের ফল কবে প্রকাশ করা হবে তার ওপর। এ বিষয়ে আগামী মাসে আরেকটি সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অনলাইনের বিষয়ে আলোচনায় আসার পর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। ভর্তিচ্ছু এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক সোহেল আহমেদ বলেন, অনলাইনে কিভাবে পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে? অনেক জায়গায় তো ইন্টারনেট থাকে না। অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ করলে জালিয়াতির সুযোগ থাকবে কিনা?
ঠাকুরগাঁওয়ের এক অভিভাবক মিজানুর রহমান বলেন, তার এলাকায় ইন্টারনেটের গতি কখনো ভালো থাকে কখনো অনেক কম। এই অবস্থায় তার ছেলে পরীক্ষায় কিভাবে অংশগ্রহণ করবে? তিনি মনে করেন, অনলাইনে পরীক্ষা হলে অনেক শিক্ষার্থীই এর সাথে মানিয়ে নিতে পারবে না। আবার অনেক অভিভাবক মনে করেন অনলাইনের চেয়ে সরাসরি পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।
দুঃশ্চিন্তায় আছে শিক্ষার্থীরাও। তানজিম হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষা হবে কি হবে না এটি নিয়েই আমরা দীর্ঘদিন উদ্বিগ্ন ছিলাম। এখন সেই বিষয়টি সমাধান হয়েছে। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে দ্রæত সিদ্ধান্ত না দিলে আমরা দ্বিধাদ্ব›েদ্ব থাকবো। অনলাইনের বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন পদ্ধতি চালু করলে অনেকেই উপকৃত হবে আবার অনেকের জন্য সমস্যা হবে।
জুনায়েদ তাহসিন নামে এক শিক্ষার্থী আশা প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে তা নিশ্চয় শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করেই নিবে। তবে অনলাইনের চেয়ে সরাসরি পরীক্ষা হলে ভালো হবে বলে মনে করেন এই শিক্ষার্থী।
পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, আমরা কিভাবে পরীক্ষা গ্রহণ করবো তা চূড়ান্ত হবে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায়। সেটি অনলাইনে নাকি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে তা সেখানেই চূড়ান্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, যেকোন ধরণের প্রযুক্তির আবর্তন ঘটবে এবং সেগুলোকে আমরা কতদ্রæত গ্রহণ করতে পারি তা চেষ্টা করতে হবে। সেটির সুফল শিক্ষার্থীরা কিভাবে পেতে পারে এবং আমরা কোথায় কোথায় কাজে লাগাতে পারি তা দেখতে হবে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি নেবো এটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটি অনলাইনে নাকি অন্য কোনভাবে সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এখনো এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলই ঘোষণা করা হয়নি। তাই অস্থির হওয়ার কিছু নাই। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
অনলাইনে পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সবসময় শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। যে সিদ্ধান্তই নেবো সেটি হবে শিক্ষার্থী বান্ধব। কোন পদ্ধতি শতভাগ প্রমাণিত ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে তা গ্রহণ করা হবে না। আমরা দেখবো যে পদ্ধতিই গ্রহণ করা হোক ছেলে-মেয়েদের ক্ষতি হবে এমন কিছু করা হবে না।
শনিবারের সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. হারুন উর রশিদ। তিনি বলেন, প্রথমত নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে সমন্বিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হবে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে আলাদা গুচ্ছ করে এই ভর্তি পরীক্ষা হবে। অনলাইনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির ভিসির নেতৃত্বে তৈরি করা একটি সফটওয়্যার আজকের বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। সেটির প্রশংসা করেছেন অন্যান্য ভিসিরা। আশা করা হচ্ছে, এটি ব্যবহার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছোট খাট পরীক্ষা নেওয়া হবে। এরপর সেটি ব্যবহার করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যাবে। এর আগে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আর ভর্তি পরীক্ষাটি হবে বহুনির্বাচনী প্রশ্নের (এমসিকিউ) ভিত্তিতে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য ড. দিল আফরোজ বেগম বলেন, অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুনাজ আহমেদ নুরের নেতৃত্বে তৈরি সফটওয়্যারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। এটি সফল হলে ঘরে বসেই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারবে। এই সফটওয়্যার ব্যবহারে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট লাগবে না।
যার সফটওয়্যার নিয়ে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ করার চিন্তা করা হচ্ছে তার সফটওয়্যারে কিভাবে পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব এবং কোন প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির ভিসি মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, প্রত্যেক জিনিসের ভালো-মন্দ আছে। করোনাভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতিতে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য সীমাবদ্ধতা মাথায় নিয়ে এই সফটওয়্যারের ভিত্তিতে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা নিতে বলা হয়েছে।
দেশে বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেটের সমস্যা রয়েছে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের গতি নামমাত্র সেক্ষেত্রে কোন সমস্যা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেকোন পরীক্ষার্থী চাইলে নিজের স্মার্টফোন কিংবা ল্যাপটপেই পরীক্ষা দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে বিদ্যুতের কোন সমস্যা হবে না। আর ইন্টানেটের বিষয়ে ড. মুনাজ আহমেদ বলেন, আমাদের সফটওয়্যারটি এমনভাবে তৈরি করা যে, পরীক্ষা শুরুর ১০ মিনিট এবং শেষের ১৫মিনিট ইন্টারনেট থাকলেই হবে। তবে আমরা এখনো কাজ করছি কিভাবে পুরো সময় ইন্টারনেট ছাড়া পরীক্ষা দিতে পারে।
পরীক্ষায় জালিয়াতি বা প্রতারণার কোন সুযোগ থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সফটওয়্যারটি ইন্সটল করার সাথে সাথেই প্রত্যেকের ফ্রন্ট ক্যামেরা অন থাকবে। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার সময় প্রতি ৪০জন শিক্ষার্থীকে অনলাইনেই নজরদারি করবেন ১জন করে পরীক্ষক।
প্রফেসর মুনাজ নূর আরও বলেন, আমাদের মানসিকতার সমস্যা রয়েছে। অনেকেই মনে করে অনলাইনে পরীক্ষা দেয়া সম্ভব না। আবার কেউ কেউ ভাববে অনলাইনে পরীক্ষা দিতে গেলে জালিয়াতির সুযোগ নেবে। কিন্তু যারাই এই চিন্তা করবে তাদের সকলের পরীক্ষা বাতিল হবে। কারণ প্রত্যেকের ওপর নজরদারি রাখা হবে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের মতে, অনলাইনে পরীক্ষা নিলে, নকল বা অন্য যেকোন কারচুপি ঠেকানো বড় চ্যালেঞ্জ। তথ্য-প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. শফিউল আলম খান বলেন, বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং। টেকনোলজিকে ব্যবহার করে জালিয়াতির সুযোগ আছে। সেটিকে কিভাবে সমাধান করা হবে এটা দেখার বিষয়।
জানা গেছে, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পরীক্ষার পরিবর্তে জেএসসি, এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফল মূল্যায়ন করা হবে। এই পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ১৩ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি। সরাসরি পরীক্ষা না হওয়ায় তাঁরা সবাই এবার উত্তীর্ণ হবেন।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।