Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নদী দূষণমুক্ত করা বড় চ্যালেঞ্জ

জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০২২, ১২:০৩ এএম

ঢাকার বাতাসে বিষ। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় ঢাকা বার বার শীর্ষে উঠে আসছে। ভয়াবহ দূষণে ঢাকার পাশের নদীগুলো এখন মৃত। মরণবাঁধ ফারাক্কার প্রভাবে দেশের প্রায় সব নদীই ধুকছে। পরিবেশের এমন বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘অনলি অন আর্থ: লিভিং সাসটেইনেবিলিটি ইন হারমনি উইথ ন্যাচারৎ, এর ভাবানুবাদ, ‘একটাই পৃথিবী: প্রকৃতির ঐকতানে টেকসই জীবন।’

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় পরিবেশ মেলা এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলার আয়োজন করেছে। জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘বৃক্ষ-প্রাণে প্রকৃতি প্রতিবেশ, আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ।’ এ উপলক্ষে আজ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ৫ থেকে ১১ জুন পর্যন্ত পরিবেশ মেলা ও ৫ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলাও প্রধানমন্ত্রী শুভ উদ্বোধন করবেন।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি এডভোকেট মনজিল মোরসেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারর‌্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ নদী মার্তৃক দেশ। পানির অপর নাম জীবন। অথচ ভয়াবহ দূষণের ফলে এখন এই পানিই আমাদের জন্য মরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মার্চ মাসে আমি ঢাকার উত্তরে নদী সফর করেছি, আমি খুঁজেছি কোথায় গেলে আমি এমন একটা নদী পাবো যেখানে মানুষ গোসল করছে। রাজধানী থেকে ৯৫ কিলোমিটার দূরে গিয়ে সুচিয়া নদী নামে গোসল করার মত একটা নদী পাওয়া গেল। সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম সেখানে কিছু মানুষ তাতে গোসল করছে, কেউবা মাছ ধরছে। কিন্তু সেখানে গিয়েও জানা গেল সেই নদীতে যখন আকিজ ফ্যাক্টরি তাদের বর্জ্য ফেলায় সেটিও দূষিত হয়ে পড়ছে।

রাজধানী ঢাকার পাশের চার নদী দূষণে ঢাকা ওয়াসাকে দায়ী জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারর‌্যান বলেন, নদী দূষণে যদি কোন একক প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হয়, তাহলে সেটি হবে ঢাকা ওয়াসা। ঢাকা শহরে যত মলমূত্র যত আছে, তার ৯৯.৯ শতাংশই এই চারটি নদীতে যায়। এটা কিভাবে যায়। ওয়াসার দায়িত্ব ছিল এটা ঠিক করা।
তিনি বলেন, রাজধানী থেকে একই পাইপ দিয়ে মলমূত্র, বৃষ্টি পানি ইত্যাদি নদীতে গিয়ে পড়ে। অথচ ওয়াসার দায়িত্ব ছিল টয়লেটের ময়লাসহ পানি এবং গোসলখানাসহ অন্যান্য লাইনের পানি পৃথকভাবে বের হওয়ার ব্যবস্থা করা। সেটা তারা করেনি বরং সবকিছু একই লাইন দিয়ে নদীতে সংযোগ দেয়া হয়েছে যার ফলে নদী দ্রুতই দূষনের শিকার হয়েছে।

ঢাকার চারপাশে এসব নদীতে কোনো ঝিনুক নাই, মাছ নাই, নাই কোনো মাছ রাঙ্গা পাখি বা চিল। এখন নদীতে পাওয়া যাচ্ছে সাকার ফিশ। এসব নদীতে সাকার ফিশ বাঁচতে পারে তার কারণ তারা পানি থেকে অক্সিজেন নেয় না। জলের উপরে সাকার ফিশ ৩০ ঘন্টার বেশি সময়ও বাঁচতে পারে। এ থেকে নদীগুলোর অবস্থা কি দাঁড়িয়েছে তা সহজেই বুঝা যায়। পরিবেশ দূষনের কারনেই আজকে ডায়েরিয়া বা কলেরায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এসব পানি এখন কলেরার উৎস।

তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্ম বার্ষিকীর আগেই বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, টঙ্গীখাল, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী দূষণমুক্ত করতে চ্যালেঞ্জ নিয়ে নদী রক্ষা কমিশন কাজ করছে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম বার্ষিকী উৎযাপনের আগেই আমরা নদীগুলোকে দূষণ মুক্ত করবো। এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। অনেকেই এটাকে অসম্ভব বলে উল্লেখ করেছেন, তবে আমি বলবো ৯ মাসে যদি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা যায়, তাহলে এই ৯ মাসে আমরা কেন নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করতে পারবো না?

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি ড. সুলতান আহমেদ, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এখলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ