মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মবিদ্বেষী নানা বক্তব্যের মধ্যে মসজিদে মসজিদে নজরদারি এবং মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ পর্যন্ত বন্ধ করে দেবেন বলে তিনি যে হুংকার-ধমক ছেড়েছিলেন, তা-ই যেন বাস্তবে করতে চলেছেন। এখন পর্যন্ত ট্রাম্প তার সরকারের প্রশাসনে প্রধান যে ক’জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছেন, তাদের মধ্যে এমন এমন ব্যক্তিত্ব রয়েছেন, যারা কট্টর মুসলিমবিদ্বেষী বলে বিভিন্ন সময়ে বদনাম কামিয়েছেন। বিশেষত অ্যাটর্নি জেনারেল, সবচেয়ে প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে ট্রাম্প যে তিনজনকে নিয়োগ দিয়েছেন, তারা তাদের বক্তৃতায়-বইয়ে ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষী বিতর্কিত মন্তব্য করে বা অবস্থান জানিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন, হয়েছেন নিন্দিতও।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হয়ে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে উঠছেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইকেল টি ফ্লিন। আর অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে সিনেটর জেফ সেসন্স এবং সিআইএ পরিচালক হিসেবে মাইক পোম্পেও উঠছেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ‘প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে’। এ তিনজন কট্টর মুসলিমবিদ্বেষী বলে কেবল ইসলামী বিশ্বে নয়, খোদ আমেরিকাতেও পরিচিত, এমনকি তাদের সাবেক সহকর্মীরাও তিনজনকে গোঁড়া ধর্মবিদ্বেষী বলেই জানেন।
এদের ইসলাম বিদ্বেষের নমুনাটা এমন যে, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিআইএ) সাবেক প্রধান ফ্লিন একবার ইসলামকে বলেছিলেন ‘ক্যান্সার’। তার সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক আরেকটি মন্তব্য ছিল ‘মুসলিম ভীতি যৌক্তিক’। তিনি আরও বলেছিলেন, ইসলাম হচ্ছে ধর্মের ছদ্মবেশে রাজনৈতিক আদর্শ। সম্প্রতিই তিনি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার পর ‘অ্যাক্ট ফর আমেরিকা’ নামে একটি কট্টর সংগঠনের পরিচালক বোর্ডে যোগ দেন। এই সংগঠনটি যুক্তরাষ্ট্রের দুই ডজনেরও বেশি রাজ্যে ইসলামী বিধিবিধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিল উত্থাপনে কাজ করছে। আর ট্রাম্প যে তার প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম অভিবাসী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছিলেন তাতে গলা উঁচিয়ে সমর্থন দিয়েছিলেন সেসন্স।
পোম্পেও পরিচিত হয়েছেন মিসরের উগ্রবাদী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করতে উত্থাপিত বিলের সহ-প্রস্তাবক হয়ে। এই প্রস্তাব তাকে পরিচিত করলেও ২০১৩ সালের বোস্টন ম্যারাথনে বোমা হামলার আগে প্রকাশ্যে তেমন ধর্মদ্বেষী কথা বলতেন না। কিন্তু ওই হামলার পর পোম্পেও মুসলিম নেতাদের অভিযুক্ত করে বলেন, ‘উগ্রবাদের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে না পেরে তারা নিজেরাই এ ধরনের ঘটনায় জড়িত বলে শঙ্কার ভিত্তি দিয়েছেন।’ তার কথার জের ধরেই ট্রাম্প নিজের নির্বাচনী প্রচারণায় বলেছিলেন, আমেরিকান মুসলিমরা জানে তাদের মধ্যে সন্ত্রাসী কে! এমন আবোল-তাবোল কথক আর উগ্র মানসিকতার এ তিনজনকে এত বড় বড় পদে নিয়োগে যে কেবল মুসলিমদেরই উদ্বেগের কারণ আছে, তা মনে করছে না আমেরিকান সংবাদমাধ্যম।
এদিকে, আমেরিকার নাগরিক অধিকার সংগঠন ও বিশ্বাসবাদী সংগঠনগুলোর নেতাদের বক্তব্যেও প্রকাশ পায় এই নিয়োগ নিয়ে উদ্বেগ। ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শুক্রবার আমেরিকাজুড়ে কয়েকটি অনুষ্ঠানে অধিকার ও বিশ্বাসবাদী সংগঠনের নেতারা বলেছেন, ট্রাম্পের এ ধরনের নিয়োগে তারা বিরক্ত। যুক্তরাষ্ট্রে জর্দানের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বর্তমানে একটি চিন্তাবিদ সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মারওয়ান মুয়াশের বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে এই তিনজন (ফ্লিন, সেসন্স ও পোম্পেও) বেশ পরিচিত। তারা ইসলামের বিরুদ্ধে কড়া মানসিকতা পোষণ করেন। ফলে তাদের দায়িত্ব দেওয়ায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক লড়াইকে জটিল করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ পেয়েছে।
ওয়াশিংটনের প্রাচীন ও প্রখ্যাত ‘মসজিদ মুহাম্মদ’র প্রেসিডেন্ট ও ইমাম এবং মার্কিন বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা তালিব এম শরিফ বলেন, সব আমেরিকানেরই এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। এই নিয়োগে আমেরিকার বন্ধুরা দূরে সরে যাবে, সশস্ত্র বাহিনী ও সরকারের মধ্যে থাকা আমেরিকান মুসলিমরাও নিজেদের পর ভাবতে শুরু করবে। শরিফের পাঁচ সন্তানও মার্কিন সামরিক বাহিনীতে কর্মরত। তিনি বলেন, আগে প্রশাসন অনেক উদার হওয়া সত্ত্বেও কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে সন্তানদের, যার ফলে তাদের স্বাভাবিক তৎপরতা ব্যাহত হয়েছে। এখন এর মধ্যে যদি মানসিক অস্থিরতার কিছু ঘটে তবে কী হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
চিন্তাবিদ সংগঠন সাউদার্ন পোভার্টি ল সেন্টারের প্রেসিডেন্ট রিকার্ড কোহেন বলেন, বিপদের কথা হলো তারা তিন কর্মকর্তাই মুসলিম অভিবাসীদের নিয়ে যদি কোনো আইন প্রণয়ন করেন, সেটা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম বন্ধুদেরই দূরে সরিয়ে দেবে না, আমেরিকান মুসলিমদেরও আমাদের থেকে দূরে সরিয়ে দেবে। একই সঙ্গে আমাদের শত্রুতেও পরিণত করতে পারে তাদের। ওয়াশিংটন পোস্ট, ওয়েবসাইট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।