Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিথ্যার কিছু রূপ : বেঁচে থাকা জরুরি-১

মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম | প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : তোমরা সত্যকে অবলম্বন করো। কারণ সত্যবাদিতা ভালো কাজে উপনীত করে। আর ভালো কাজ উপনীত করে জান্নাতে। মানুষ সত্য বলে ও সত্যবাদিতার অন্বেষায় থাকে, একপর্যায়ে সে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসেবে লিখিত হয়ে যায়।

আর তোমরা মিথ্যা থেকে দূরে থাক। কারণ মিথ্যা উপনীত করে পাপাচারে। আর পাপাচার উপনীত করে জাহান্নামে। ব্যক্তি মিথ্যা বলে ও মিথ্যার অন্বেষায় থাকে, এভাবে একসময় আল্লাহর কাছে সে চরম মিথ্যুক হিসেবে লিখিত হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম : ২৬০৭)।

হাদীসের অর্থ একেবারেই সরল। মর্ম খুবই প্রাঞ্জল। অর্থাৎ সত্যবাদিতা যেমন একটি ভালো গুণ, তার বৈশিষ্ট্য হলো, মানব-জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও এটি ভালো প্রভাব সৃষ্টি করে, ভালোর দিকে পরিচালিত করে। ফলে লোকটির ঠিকানা হয় জান্নাত। পক্ষান্তরে মিথ্যা খোদ একটি মন্দ ও ঘৃণিত স্বভাব।

সাথে তার একটি মন্দ প্রতিক্রিয়া এ-ও যে, এটি মানুষের মধ্যে পাপাচার ও অবাধ্যতার প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করে। পুরো জীবনটাকে অন্যায় ও অনাচারে কলুষিত করে তোলে। ফলে তার পরিণতি হয় জাহান্নাম। (দ্র. মিরকাতুল মাফাতীহ ৯/১৪০ মাআরেফুল হাদীস, মনযুর নুমানী, হাদীস ১৯৪)। আরেকটি হাদীসে এসেছে : মুমিনের চরিত্রে সবকিছুর অবকাশ থাকতে পারে, কিন্তু প্রতারণা ও মিথ্যা নয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ২৬১২১)।

অর্থাৎ কেউ যদি প্রকৃত মুমিন হয়ে থাকে, তাহলে অন্য কোনো দোষ-ত্রুটি ও দুর্বলতা তার মধ্যে হয়ত থাকতে পারে, কিন্তু মিথ্যা ও খেয়ানতের কোনো অংশ তার চরিত্রে জায়গা করতে পারে না। ঈমানের সাথে মিথ্যা ও খেয়ানতের মতো মুনাফিকসুলভ বিষয় একত্রিত হতে পারে না। কাজেই কারো মধ্যে যদি মিথ্যা এবং প্রতারণার মতো মন্দ কোনো স্বভাব থাকে, বুঝতে হবে- ঈমানের হাকীকত এখনো তার অর্জিত হয়নি। (দ্র. মাআরেফুল হাদীস)।

মিথ্যার রয়েছে বহু ক্ষেত্র। ইসলামী শরীয়তে সবিস্তারে মিথ্যার পরিধি বর্ণনা করা হয়েছে। এমন কিছু মিথ্যা আছে, যেগুলোকে অনেকসময় মিথ্যাও মনে করা হয় না। ইসলাম সেগুলো থেকেও বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। নিম্নে মিথ্যার অবহেলিত কিছু দিক তুলে ধরা হলো।

যাচাই-বাছাই ছাড়া বলা ও প্রচার করাও মিথ্যা। মিথ্যার একটি সূক্ষ্ম রূপ, যাচাই-বাছাই ছাড়া যা শোনে তাই বলে বেড়ানো। কারণ এর মাধ্যমে অনায়াসেই একটি ভুল তথ্য সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। কাজেই আল্লাহ তাআলা বলেন : হে মুমিনগণ! কোনো ফাসেক যদি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে ভালোভাবে যাচাই করে দেখবে, যাতে তোমরা অজ্ঞতাবসত কোনো সম্পদ্রায়ের ক্ষতি না করে বস! ফলে নিজেদের কৃতকর্মের কারণে তোমাদের আনুতপ্ত হতে হয়। (সূরা হুজুরাত : ৬)।

হাদীসে এসেছে : কারো মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনে (কোনো বাছ-বিচার ছাড়া) তাই প্রচার করতে থাকে। (সহীহ মুসলিম : ৫)।
আর যদি দ্বীনী বিষয় হয় তখন তো ব্যাপারটা আরো ভয়াবহ হয়ে দাঁড়ায়! পরিভাষায় একে বলা হয়, ‘আলকাযিবু আলাল্লাহি ওয়া রাসূলিহি’-আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ব্যাপারে মিথ্যা বলা। কারণ এর মাধ্যমে শরীয়তের ভুল ব্যাখ্যা প্রকাশিত হয়। এর দায় কখনো ওই ব্যক্তি এড়াতে পারে না, যার অসতর্কতার কারণে এই ভুল তথ্যটি প্রচারিত হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস- ‘যে আমার ব্যাপারে মিথ্যা বলল, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়!’ (সহীহ বুখারী : ১০৭)।

কোনো বর্ণনায় আছে : ‘যে ‘ইচ্ছাকৃত’ আমার ব্যাপারে মিথ্যা বলবে...।’ বলা বাহুল্য, অসাবধানতা, অসতর্কতা, যাচাই-বাছাই ছাড়া দ্বীনের ব্যাপারে বেপরোয়া ও বল্গাহীন বলতে থাকাও প্রকারান্তরে ইচ্ছাকৃত বলার শামিল। তাই স্যোশাল মিডিয়া বা অন্য কোনো মাধ্যমে মুখরোচক যা শোনে তা-ই প্রচার করার ব্যাপারে সতর্ক থাকা কাম্য।



 

Show all comments
  • Mohamed Saleh ২৯ মে, ২০২২, ৫:২৯ এএম says : 0
    শ্রুত বিষয় যাচাইবিহীন প্রচার না করা : মানুষের মধ্যে একটি স্বাভাবিক প্রবণতা আছে যে, অন্যের নিকট থেকে শোনা বিষয় যাচাই-বাছাই ছাড়াই প্রচার করা। অথচ এটি মিথ্যাবাদী হওয়ার অন্যতম কারণ। কেননা মানুষের কাছ থেকে শোনা কথা সত্য নাও হতে পারে। তাই মিথ্যা থেকে বাঁচতে হলে শোনা কথা যাচাই না করে প্রচার করা যাবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Ismail Sagar ২৯ মে, ২০২২, ৫:৩০ এএম says : 0
    রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো লোকের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে (যাচাই না করে) তাই বলে বেড়ায়’।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Parves Hossain ২৯ মে, ২০২২, ৫:৩০ এএম says : 0
    রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা কারো সম্পর্কে (মন্দ) ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কেননা আনুমানিক ধারণা বড় ধরনের মিথ্যা’।
    Total Reply(0) Reply
  • Bazlur Rashid ২৯ মে, ২০২২, ৫:৩০ এএম says : 0
    মিথ্যাবাদীকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করলে তার প্রভাব অনুসারীদের উপর পড়বে। ফলে অনুসারীরাও মিথ্যায় অভ্যস্ত হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তুমি মিথ্যাবাদীদের অনুসরণ করো না’ (ক্বালাম ৬৮/৮)।
    Total Reply(0) Reply
  • মানিক ২৯ মে, ২০২২, ৫:৩১ এএম says : 0
    মিথ্যাই সব অধঃপতন, অশান্তি ও অধঃগতির মূল। ইহকাল ও পরকালে মিথ্যা মানুষকে ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত করে। বর্তমানে মিথ্যার সয়লাব চলছে। দিশেহারা জাতি অধঃপতনের অতল তলে তলিয়ে যাচ্ছে। জাতির উত্তরণের জন্য সর্বস্তরে সততা ও সত্যবাদিতার চর্চা হওয়া জরুরি।
    Total Reply(0) Reply
  • জামিল হোসেন ২৯ মে, ২০২২, ৫:৩১ এএম says : 0
    মহান রাব্বুল আরামিন আল্লাহ আমাদেরকে সত্যবাদিতা অবলম্বন করার এবং মিথ্যার ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক্ব দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ২৯ মে, ২০২২, ১২:০৭ পিএম says : 0
    আমাদের দেশটা তো চলে মিথ্যার উপর আমাদের দেশ এখন আমেরিকায় ইউরোপের মতো উন্নত হয়ে গেছে
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Shahinuzzaman ২৯ মে, ২০২২, ১:২৬ পিএম says : 0
    মিথ্য শুধু জীবনে কষ্টই ডেকে আনে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন