Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জাতিসংঘের

মিয়ানমারের মংডুর গ্রামে মুসলমানদের দগ্ধ লাশ ধরে স্বজনের আর্তি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:৩৬ পিএম

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের কারণে পালাতে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। ১৮ নভেম্বর সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান জানানো হয়। সেখানে আরও বলা হয়েছে, দেশটির উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যের সাধারণ জনগণের নিরাপত্তায় সংস্থাটি ভীষণ উদ্বিগ্ন।
মিয়ানমার সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক আইন এবং বাধ্যবাধকতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সুরক্ষা নিশ্চিতের তাগিদ দেন। সেই সঙ্গে চলমান সেনা অভিযানের কারণে গৃহহীন প্রত্যেকটি পরিবারকে আবাসস্থলের নিরাপত্তা দেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই অভিযানে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে বলে ধারণা করছে ইউএনএইচসিআর।
সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সংস্থাটির মুখপাত্র বলেন- সেনা অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের যেনো জীবন সংশয়ের মুখে না পড়ে, সেই জন্য রাখাইন রাজ্য লাগোয়া বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে রাখা উচিত। ইউএনএইচসিআর-র মুখপাত্র আড্রিয়ান এডওয়ার্ডস গত শুক্রবার জেনেভায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। অভিযানের মুখে পালাতে থাকা রোহিঙ্গাদের অনেকে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টার প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি সীমান্তে বাড়তি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকারী অনেককে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কথা জানিয়েছেন বিজিবি কর্মকর্তারা।
অপর দিকে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান সমর্থিত রোহিঙ্গা ভিশন নামে একটি ওয়েবসাইটে পোস্ট করা একটি ভিডিওচিত্রে, কিছু আগুনে দগ্ধ লাশ এবং এগুলোকে ঘিরে তাদের স্বজনদের আর্তনাদ করতে দেখা গেছে। ভিডিওটিতে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যের মংডুর উত্তরাঞ্চলীয় একটি গ্রামে গত ১৩ নভেম্বর অন্তত ৯ জন মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরে ফেলে দেশটির সেনাবাহিনী। ওই দিনের পর থেকে ওই গ্রামের আরো ৯০ জন নারী-পুরুষ-শিশুর সন্ধান আজো পাওয়া যায়নি বলেও এতে উল্লেখ রয়েছে। ভিডিওটিকে নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষকে বিভিন্ন সময়ে আঞ্চলিক ভাষাতে কথা বলতে দেখা গেছে। ভিডিওতে আগুনে পোড়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তিনটি লাশও দেখানো হয়। লাশগুলোর আকার দেখে বোঝা যায় এগুলো মানুষের লাশ, তবে পরিচয় উদ্ধারের কোন উপায় নেই। ভিডিওতে একটি লাশের পাশে বসে দুই মহিলাকে কাঁদতে দেখা যায়। এক মহিলা লাশটির মুখে হাত বোলাচ্ছিলেন এবং বিলাপ করছিলেন। পাশেই ছিল আরো একটি লাশ। ভিডিওচিত্রটিতে একজন ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন, সম্ভবত ভিডিওটিও তিনিই ধারণ করছিলেন। তাকে দেখা যায়নি। তবে তিনি বলছিলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গত ১৩ই নভেম্বর এই ঘটনা ঘটিয়েছে। গত অক্টোবর মাস থেকেই রাখাইন রাজ্যে অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। এই অভিযানে রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে নির্বিচারে হত্যা, মহিলা ও কিশোরীদের ধর্ষণ, তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ব্যাপক ভিত্তিক অভিযোগ আছে। সেনাবাহিনী বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। টানা অভিযোগের এক পর্যায়ে তারা সম্প্রতি শুধুমাত্র ৬৯ জন বাঙ্গালী এবং সহিংস হামলাকারীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। রোহিঙ্গা ভিশন টিভি নামে এই ওয়েবসাইটটিতে প্রকাশিত ভিডিওটিকে যাচাই করা না গেলেও মিয়ানমারের একটি সুপরিচিত ইংরেজি দৈনিক নিউ লাইট অব মিয়ানমার-এ এই রোহিঙ্গা ভিশন নামক ওয়েবসাইটটির উল্লেখ রয়েছে। পত্রিকাটির খবরে দেশটির কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গা ভিশন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক একটি সংস্থা যেটি কর্তৃপক্ষের ভাষায় আন্তর্জাতিক চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহে লিপ্ত। নিউ লাইট অব মিয়ানমারের খবরে আরো বলা হয়, কর্তৃপক্ষ রাখাইন প্রদেশে তদন্ত করে এমন একজন যুবকের খবর পেয়েছে যে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া এবং সৌদি আরবে চরমপন্থীদের কাছে মিথ্যা ও অবমাননাকর খবর প্রচার করে।  গত অক্টোবরে এক পুলিশ চেকপোস্টে সমন্বিত হামলার জের ধরে রাখাইন প্রদেশে ব্যাপকভিত্তিক সেনা অভিযান শুরু হবার পর থেকেই ওই এলাকায় সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রবেশের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ফলে ওই এলাকায় আদপে কী ঘটছে তার প্রকৃত তথ্য জানা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিবিসি, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ