Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী শরীয়ত : কোরআনের সবচেয়ে বড় মু’জেজা

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

খুবই সাদামাটা একটি ঘটনা আলোচনা করা যাক। ঘটনাটি হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহ.-এর নিজের। তিনি লেখেনÑ আমি সাহারানপুর যাচ্ছিলাম। থানাভবন স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠেছি। এক নতুন আগন্তুক মৌলভী সাহেব ট্রেন থেকে নামলেন। তিনি দিল্লি থেকে আমার সাথেই সাক্ষাতের জন্য এসেছেন।

বিষয়টি জানার পর বললাম, ‘আমি তো এখন সফরে যাচ্ছি, আপনার ইচ্ছা হলে সাহারানপুর পর্যন্ত আমার সাথে যেতে পারেন। ট্রেনে কথা হবে। টিকিট নিয়ে নিন।’ কিন্তু সময় ছিল না। তিনি টিকিট নিতে পারলেন না। গার্ডকে বলে ট্রেনে উঠে পড়লেন। যখন ট্রেন নানূতা স্টেশনে পৌঁছল, এটা থানাভবনের পরের স্টেশন- আমি তাকে বললাম, এখন গার্ডের কাছে যান এবং তাকে টাকা দিয়ে রসিদ নিয়ে নিন। সামনের জন্যও টিকিট কেটে ফেলুন। গার্ড তাকে বলল, থানাভবন (থেকে নানূতা) পর্যন্তের ভাড়া মাফ করে দিচ্ছি, এরপর নানূতা থেকে সাহারানপুরের টিকিট দিয়ে দিলো।

মৌলভী সাহেব আমার কাছে এসে যখন ঘটনাটা জানালেন আমি বললাম, এটা তো না-জায়েয হয়েছে। গার্ড তো গাড়ির মালিক নয় সে রেলওয়ের একজন কর্মচারীমাত্র। তার তো মাফ করার অধিকার নেই। আপনার ওপর এই ভাড়াটা ঋণ হয়ে থাকছে, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে অবশ্যই আদায় করতে হবে, কিন্তু এখন তো গার্ডের কাছ থেকে এর রসিদ নেয়ার সুযোগ নেই। কাজেই আপনি পরে এই পরিমাণ অর্থের টিকিট কিনে তা ছিঁড়ে ফেলবেন। এভাবে রেলওয়েতে আপনার ভাড়া পৌঁছে যাবে।’

ওইসময় এক ইংরেজি শিক্ষিত হিন্দু ভদ্রলোকও গাড়িতে ছিলেন। আগাগোড়া গোটা বিষয়টা লক্ষ করে তিনি বললেন, জনাব, আমি আমার একটি দুর্বলতা আপনাদের কাছে প্রকাশ করছি। যখন গার্ড তাকে বলল, নানূতা পর্যন্ত ভাড়া মাফ করে দিয়েছি, আমি মনে মনে খুব খুশি হয়েছিলাম যে, এক গরিব বেচারার কিছু উপকার হলো। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, আমার খুশি হওয়াটা ঠিক ছিল না। আমি তো একটি অনৈতিক বিষয়ে খুশি হয়েছিলাম। ন্যায়ের কথা তো সেটাই, যা আপনি বলেছেন।

এই ঘটনা উল্লেখ করে হাকীমুল উম্মত বলেন : আমি বলি, এটা তো খুব সামান্য একটি ব্যাপার ছিল। এ তো ইসলামের খুব সামান্য একটি ঝলক মাত্র। ন্যায়নিষ্ঠ লোকেরা যদি আমাদের কাছে কিছুদিন থাকেন তাহলে তারা ইসলামের বড় বড় সৌন্দর্য সম্পর্কে জানতে পারবেন। (খুতুবাতে হাকীমুল উম্মত (মাহাসিনে ইসলাম), খ. ৮, পৃ. ৫৪-৫৫)

এভাবেই যুগে যুগে ইসলাম অসংখ্য মানুষের চিন্তা ও কর্মকে ন্যায়ের ছাঁচে গঠিত করেছে। প্রাত্যহিক জীবনের ছোট ছোট বিষয়েও ন্যায়-অন্যায়ের মাঝে পার্থক্যকারী স্বচ্ছ মানদণ্ড দান করেছে, যা চিন্তা ও কর্মকে নিখুঁতভাবে বিন্যস্ত করে, ভাষা ও ভূখণ্ডের সব সীমানা অতিক্রম করে কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানবতার সম্পূর্ণ জীবনের সকল খুটিনাটি পর্যন্ত যে দ্বীন এমন সহজ-স্বাভাবিক ও সুনিপুণ উপায়ে বিন্যস্ত করে তা কোরআন কারীমের দ্বীন। এর অলৌকিকত্ব দিবালোকের মতো স্পষ্ট।

মুফাক্কিরে ইসলাম হযরত মাওলানা সায়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রাহ. কোরআন মাজীদের ই‘জায নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, কোরআন মাজীদের সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে বড় মু‘জিযা হচ্ছে ইসলামী শরীয়ত। তিনি লেখেন-

‘মানুষকে তার স্রষ্টার সাথে এর চেয়ে বেশি সম্পৃক্তকারী, তার জীবনে লিল্লাহিয়্যাত ও রূহানিয়্যাত সৃষ্টিকারী, ঐসকল বিচ্যুতি ও প্রান্তিকতা থেকে সুরক্ষা দানকারী, যাতে বহু ধর্ম-গোষ্ঠী নিপতিত হয়েছে ও হয়ে আছে, দুসরা কোনো হেদায়েতগ্রন্থ মানুষের কল্পনাতেও আসতে পারে না।
‘কোরআন কারীম মানুষের জীবনের জন্য এমন এক আল্লাহপ্রদত্ত, চারিত্রিক ও সামাজিক ব্যবস্থা দান করেছে, যা পার্থিব জীবনে সর্বোত্তম নৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন সৃষ্টিতে সক্ষম এবং তা সৃষ্টি করে দেখিয়েছেও, যা আজ পর্যন্ত অন্য কোনো উপায়ে সম্ভব হয়নি।

‘কোরআন মানব-সমাজের ঐসকল প্রয়োজন ও সমস্যা, যা আজ পর্যন্ত উদ্ভূত হয়েছে বা ভবিষ্যতে কিয়ামত পর্যন্ত উদ্ভূত হবে, তা অলৌকিক উপায়ে সংক্ষিপ্ত ইশারার মধ্য দিয়েই সমাধান করে দেয়। কোরআন এমন মৌলনীতি দান করে, যার ভিত্তিতে প্রত্যেক যুগে পৃথিবীর সর্বোত্তম সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব এবং সম্ভব সকল অঞ্চলে মনুষ্য-জীবনকে নতুন বিন্যাসে বিন্যস্ত করা। (মুতালাআয়ে কোরআনকে উসূল ও মাবাদী, পৃ. ৪৯-৫০)।

কোরআনের ই‘জায অর্থাৎ তা মানবীয় সক্ষমতার ঊর্ধ্বের আল্লাহর কালাম হওয়ার বহু দিক ও দলিল যেমন মুসলিম মনীষীগণ আলোচনা করেছেন, অমুসলিম পণ্ডিতেরাও বিভিন্ন প্রসঙ্গে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। এইসকল শাস্ত্রীয় ও জ্ঞানগত উপলব্ধির সাথে সাথে হৃদয়গত উপলব্ধির সৌভাগ্যও অসংখ্য মানুষের হয়ে থাকে। আল্লাহর কালামের মহা ঐশ্বর্য ভাণ্ডারের সামনে এসে সবারই নিজেকে অতি দীন, হীন, রিক্ত, ভিখারীই মনে হবে।



 

Show all comments
  • Yousman Ali ২৮ মে, ২০২২, ৯:৩৮ এএম says : 0
    আসুন আমর সবাই দিন ও দিনের পথে চলি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন