বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
জাগতিক নিয়ম ও ক্রমধারা অনুসারে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা লাভের জন্য মানুষকে উস্তাদ বা শিক্ষকের সাহচর্য গ্রহণ করতে হয় এবং উস্তাদের দেয়া শিক্ষা আতস্থ করতে হয়। কিন্তু বিশ্বনবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জ্ঞান, মনীষা ও প্রজ্ঞা লাভের জন্য কোনো উস্তাদের দ্বারস্থ হতে হয়নি। বরং মহান রাব্বুল আলামীনই ছিলেন তাঁর শিক্ষক। তিনি তাঁকে যখন যতখানি জ্ঞান দানের প্রয়োজন তখন ততখানি জ্ঞান দান করতেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জাগতিক হায়াত ৬৩ বছরের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা বিষয়ক বিষয়াদির প্রতি অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে তাকালে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয় যে, মহান রাব্বুল আলামীনের নিকট থেকে তিনি যে, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা লাভ করে ছিলেন, তা সমগ্র সৃষ্ট জীবের জ্ঞান হতে অনেক বেশি ছিল। আল কোরআনে আল্লাহ জাল্লা শানুহু এতদপ্রসঙ্গে যে সকল দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন, তার একটু ঝলক নিম্নে উদ্ধৃত আয়াত সমূহের মাধ্যমে অবশ্যই অবলোকন করা যায়। আসুন এবার এদিকে লক্ষ করা যাক।
(ক) ইরশাদ হয়েছে : (হে প্রিয় হাবীব (সা.)! আল্লাহ পাক আপনার প্রতি আল কিতাব (আল কোরআন) ও আল হিকমাত (সুন্নাহ) নাজিল করেছেন এবং আপনাকে এমন জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না। (সূরা নিসা : আয়াত -১১৩)।
(খ) ইরশাদ হয়েছে : তিনি (রাসূলুল্লাহ (সা.) তোমাদেরকে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনান, এবং তোমাদেরকে পবিত্র করেন এবং তোমাদেরকে আল কিতাব ও আল হিকমাত শিক্ষা দান করেন। এবং তিনি তোমাদেরকে ঐ সকল বিষয়াদি শিক্ষা দেন, যা তোমরা জানতে না। (সূরা বাক্বারাহ : আয়াত-১৫১)।
(গ) ইরশাদ হয়েছে : তিনি (রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে আল্লাহ পাকের আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনান এবং তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দান করেন। (সূরা জুময়া, আয়াত-২)।
উল্লিখিত আয়াতসমূহের অর্থ ও মর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে অতি সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইজতিহাদ করার অধিকার স্বয়ং আল্লাহপাক প্রদান করেছিলেন। এটা ছিল আল্লাহ পাকের অফুরন্ত দান। এই দানকে বিশ্লেষণ করলে পাঁচটি বিষয় প্রভাত সূর্যের আলোর মতো মূর্ত হয়ে ফুটে উঠে। যথা :
(এক) যে সকল বিষয় সম্পর্কে কোরআনুল কারীমে কোনো স্পষ্ট উক্তি বর্ণিত নেই, সে সকল বিষয়াদিতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিজের মতামত দ্বারা ইজতিহাদ করার অধিকার ছিল। একান্ত প্রয়োজনে তিনি জরুরি বিষয়াদিতে অনেক ফায়সালা স্বীয় ইজতিহাদের দ্বারা নিষ্পন্ন করতেন।
(দুই) পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) কোরআনুল কারীম থেকে যা কিছু জ্ঞান ও প্রজ্ঞা লাভ করতেন, তা ছিল আল্লাহ পাকেরই দান বা বুঝানো বিষয়। এতে ভুল ও ত্রæটির কোনো সম্ভাবনাই নেই বা ছিল না। কিন্তু অন্যান্য জ্ঞান-মনীষীগণের অবস্থা এমনটি নয়। তাদের বুঝ ও জ্ঞান সম্পর্কে একথা বলা যায় না যে, এগুলো তাদেরকে আল্লাহ পাক বলে দিয়েছেন। অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, ‘আপনি সে অনুযায়ী ফায়সালা করুন, যা আল্লাহ পাক আপনাকে দেখিয়ে দিয়েছে। এ বৈশিষ্ট্য কেবলমাত্র রাসূলূল্লাহ (সা.)-এর জন্যই সুনির্দিষ্ট। অন্য কারো জন্য নয়।
(তিন) যে সকল ইজতিহাদ কোরআন ও সুন্নাহর মূল নীতি থেকে গৃহিত, আল্লাহ পাকের কাছে সে ইজতিহাদই গৃহীত ও যথার্থ। সুতরাং ব্যক্তিগত মতামত ও ধারণা ইসলামী শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি তাকে ইজতিহাদ বলা ও সমীচীন নয়।
(চার) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইজতিহাদ অন্যান্য গবেষক ও চিন্তাশীলদের মতো ছিল না। যাতে ভুলভ্রান্তির সম্ভাবনা থেকেই যায়। বরং তিনি যখন ইজতিহাদের মাধ্যমে কোনো ফায়সালা করতেন তাতে ভুল থাকলে আল্লাহপাক তাঁকে সতর্ক করে প্রদত্ত ফায়সালাকে নির্ভুল ও সঠিক করে দিতেন। আর যদি কোনো হুঁশিয়ারি বাণী উচ্চারিত না হতো, তাহলে প্রতিভাত হতো যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ফায়সালাটি আল্লাহ পাকের পছন্দনীয় ও নির্ভুল হয়েছে।
(পাঁচ) এতদপ্রসঙ্গে স্মরণ রাখা দরকার যে, মিথ্যা মোকাদ্দমার ও মিথ্যা দাবির তদবির ও সহযোগিতা করা, মিথ্যা ও অসত্যের ওকালতি করা, মিথ্যার সমর্থনে আত্মনিয়োগ করা ইসলামী শরীয়তে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও হারাম। যারা এই হারামকে আরাম মনে করে সপ্তডিঙ্গা মধুকরের রোমাঞ্চে অবগাহন করবে, তারা একান্তই সত্যচ্যুত ও বল্গা হারা। তাদের শেষ পরিণাম প্রকৃতই ভয়াবহ হতে বাধ্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।