Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রসঙ্গ : রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আহলে বাইত-২

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৩ এএম

পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আহলে বাইতের মধ্যে তাঁর রক্ত সম্পর্কিত আপনজন অর্থাৎ ‘আলে মোহাম্মাদের’ সদস্যগণ এক বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলতের অধিকারী। তাদের মধ্যে তাঁর তিনজন সাহেবজাদাই হলেন প্রধান। তাদের নাম হলো : (১) হযরত কাশেম (রা.), (২) হযরত আবদুল্লাহ (রা.) যাকে তায়্যিব, তাহেরও বলা হয়। কারো মতে তারা ছিলেন পৃৃথক সন্তান। (৩) হযরত ইব্রাহীম (রা.)। তাঁরপর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কণ্যাগণের ফজিলত সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁর কন্যাগণের নাম হলো : (১) হযরত যয়নাব (রা.); (২) হযরত রুকাইয়্যাহ (রা.); (৩) হযরত উম্মে কুলসুম (রা.); (৪) হযরত ফাতিমা (রা.)।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সকল কন্যাই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন এবং তাঁদের বিবাহ-সাদী হয়েছিল। হযরত ফাতিমা (রা.) ব্যতীত অন্য তিন কন্যাই তাঁর জীবদ্দশায় ইহলোক ত্যাগ করেন। হযরত ইব্রাহীম (রা.) ব্যতীত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সকল সন্তান আম্মাজান হযরত খাদীজাতুল কুবরা (রা.)-এর গর্ভজাত। একমাত্র হযরত ইব্রাহীম (রা.) তাঁর সেবিকা-দাসী-হযরত মারিয়া কিবতিয়ার গর্ভে জন্মলাভ করেন। ছোট মেয়ে হযরত ফাতিমা (রা.) ছাড়া অন্য কোনো সন্তানের মাধ্যমে তাঁর বংশধারা বিস্তার লাভ করেনি। মোট কথা, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বংশ একমাত্র হযরত ফাতিমা (রা.) হতেই বিস্তৃত হয়েছে। এর দুটি শাখা আছে। একটি শাখা হযরত সাইয়েদ ইমাম হাসান (রা.) হতে এবং অপরটি হযরত সাইয়্যেদ হুসাইন (রা.) হতে। (শারহুফিকহে আফরাব-১১০)

রাসূলুল্লাহ (সা.) তেইশের ঊর্ধ্বে বয়সন্ধিকালে হযরত খাদিজা (রা.)-এর সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। তাঁর নাবুওয়্যাতের কার্যক্রম শুরুর পূর্বে হযরত কাশিম (রা.), হযরত রুকাইয়্যা (রা.), হযরত যয়নাব (রা.) ও হযরত উম্মে কুলসুম (রা.)-এর জন্ম হয়। নাবুওয়্যাতের দায়িত্ব শুরুর পর হযরত তায়্যিব (রা.), হযরত তাহির (রা.), ও হযরত ফাতিমা (রা.) জন্মলাভ করেন। (উসুলে কাফী : ২৭৯, কিতাবুল হজ্জাহ, বাবু মাওলিদিন নাবিয়্যি (সা.)।
বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.) কোরআনুল কারীম ও আহলে বাইত সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন : আমি তোমাদের মধ্যে দুটি অতি বৃহৎ মূল্যবান বস্তু রেখে যাচ্ছি, প্রথম বস্তুটি হলো আল্লাহর কিতাব, যাতে রয়েছে হেদায়েত ও নূর। দ্বিতীয় বস্তুটি হলো আমার আহলে বাইত। আমি তোমাদেরকে আহলে বাইতের ব্যাপারে সতর্ক করে যাচ্ছি, তোমরা আহলে বাইতের হক ও অধিকারের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। এ দুটি বস্তুকে দৃঢ়তার সাথে ধরে রাখবে।

এতদ প্রসঙ্গে ইয়াযিদ ইবনে হাইয়্যান বলেন, একদা আমি, হুসাইন বিন সাবুরাহ ও ওমার বিন মুসলিম হযরত যায়েদ বিন আরকাম (রা.)-এর খিদমতে গমন করলাম। আমরা উপবেশন করার পর তিনি বললেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) খুৎবা দিবার উদ্দেশ্যে আমাদের মাঝে দ-ায়মান হলেন। তিনি বললেন : হে লোক সকল! আমি একজন মানুষ বৈ কিছু নই। অদূর ভবিষ্যতেই আমার নিকট মহান পরওয়ারদিগারের দূত (আজরাঈল ফেরেশতা) এসে পড়বেন। আমি তার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যাব। আমি তোমাদের মাঝে দু’টি ভারী ও মূল্যবান বস্তু রেখে যাচ্ছি। এর প্রথমটি হলো আল্লাহর কিতাব (আল কোরআন)। যাতে আছে হেদায়েত ও নূর। তোমরা আল্লাহর কিতাবকে গ্রহণ কর। একে সুদৃঢ়ভাবে ধারণ কর। তিনি কিতাবুল্লাহর ব্যাপারে উৎসাহ উদ্দীপনা দান করলেন।

অতঃপর বললেন : আর একটি বস্তু হলো আমার আহলে বাইত। আমি তোমাদেরকে স্মরণ করার নির্দেশ দিচ্ছি। আমার আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর। (সহীহ মুসলিম : ২/৩৭৯)। ‘আলে মোহাম্মাদ (সা.)’-এর অন্যতম সদস্যা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমা (রা.)-কে রাসূলুল্লাহ (সা.) জান্নাতী রমনীদের নেত্রী আখ্যা দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন : ফাতিমা আমার দেহের অংশ। যে ফাতিমাকে অসন্তষ্ট করল, সে আমাকে অসন্তষ্ট করল।

এতদপ্রসঙ্গে হযরত মেছওয়ার বিন মাখরামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ফাতিমা আমার দেহের টুকরা, যে ব্যক্তি তাকে দুঃখ-ব্যথা দিলো সে আমাকে দুঃখ ব্যথা দিলো। (সহীহ বুখারী : ১/৫৩২)।
আল্লাহ তায়ালা আলে মোহাম্মাদ (সা.)-এর সদস্যদের অন্তরকে ঈমানের দ্বারা সৌন্দর্য ম-িত করেছেন। কুফর, ফিসক ও গোনাহের প্রতি তাদের ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে : বরং আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি ঈমানকে প্রিয় করে তুলেছেন। তাঁকে তোমাদের অন্তরে সৌন্দর্যম-িত করে সাজিয়েছেন। কুফরী নাফরমানি ও সীমালঙ্ঘনের কর্মকে তোমাদের কাছে ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় করে উপস্থাপন করেছেন। এ লোকেরাই সঠিকভাবে পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছে। (সূরা আল হুজুরাত : আয়াত-৭)।

 



 

Show all comments
  • Obaidur Rahman Milton ৩১ জুলাই, ২০২১, ৪:৩৩ এএম says : 0
    নবী করিম (সা.)-এর আহলে বাইতকে ভালবাসার ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে কোন দ্বিমত নেই । তবে আহলে বাইত কারা– এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতানৈক্য বিদ্যমান ।
    Total Reply(0) Reply
  • Imam Hossain ৩১ জুলাই, ২০২১, ৪:৩৩ এএম says : 0
    কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে নবী! আপনি আপনার উম্মতদের বলে দিন, আমি আমার দাওয়াতের বিনিময়ে আমার আহলে বাইতদের প্রতি ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই চাই না (২:২৩)।
    Total Reply(0) Reply
  • Jahangir Hossain ৩১ জুলাই, ২০২১, ৪:৩৩ এএম says : 0
    রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর পরিবারের সদস্য, সব নিকটাত্মীয় ও আওলাদে রাসুলেরা আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত ও বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।
    Total Reply(0) Reply
  • Azad Azad ৩১ জুলাই, ২০২১, ৪:৩৩ এএম says : 0
    কোরআনিক অর্থে নবীজি (সা.)–এর আহলে বাইতের সদস্য ছিলেন চারজন—ফাতেমা (রা.), আলী (রা.), হাসান (রা.) ও হোসাইন (রা.)। মর্যাদার দিক থেকে তাঁরাই সবার ঊর্ধ্বে। নবীপত্নীরাও আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত।
    Total Reply(0) Reply
  • মিরাজ আলী ৩১ জুলাই, ২০২১, ৪:৩৪ এএম says : 0
    আহলে বাইতের ওপর আল্লাহর রহমত ও বরকত নাজিল হোক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাসূলুল্লাহ (সা.)
আরও পড়ুন