Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাশ্চাত্যে কট্টর ডানপন্থার উত্থান

যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনের চলতি ঘটনাপ্রবাহের ধারাবাহিকতায় আগামী বছরগুলোতে ইউরোপের দেশগুলোতে কট্টর ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:৩২ পিএম

ইউরোপের কট্টর ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে আশাবাদী হয়ে উঠছে। বিশ্লেষকদের মতে, গোটা পশ্চিমা বিশ্বেই উদার গণতন্ত্রের বদলে উত্থান ঘটছে কট্টর ডানপন্থী রাজনীতির। এর দুটি বড় নিদর্শন হচ্ছেÑ ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছেড়ে যাওয়া এবং ট্রাম্পের নির্বাচন বিজয়। তাদের দাবি অনুযায়ী চলতি ঘটনাপ্রবাহের ধারাবাহিকতায় আগামী বছরগুলোতে ইউরোপে কট্টর ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থী রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেত্রী মেরি ল পেন ট্রাম্পের বিজয়কে বিশ্বব্যাপী শুরু হওয়া নতুন আন্দোলন বলে উল্লেখ করেছেন। এক টুইট বার্তায় মেরি জানান, ট্রাম্পের নির্বাচনী কমিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিফেন ব্যানন তাকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। আর তাতে সাড়াও দিয়েছেন তিনি। তবে একে সহজভাবে নিচ্ছেন না বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের একজন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের বাইরের কোনো দেশের ক্ষমতাসীন দলের নেতার সঙ্গে যোগাযোগের আগেই অন্য কট্টরপন্থী রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করাটা খুবই অস্বাভাবিক ব্যাপার। ট্রাম্পের মতোই মস্কোপ্রীতি আছে মেরিরও। ২০১৪ সালে একটি রুশ ব্যাংক থেকে প্রায় এক কোটি ডলার ঋণ গ্রহণ করেছেন তিনি। ফরাসি ব্যাংকের কাছে বারবার আবেদন করেও ঋণ সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। তাই ভবিষ্যতেও ঋণের জন্য মস্কোর দ্বারস্ত হওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে দলের অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে। মস্কো থেকে আনা ঋণের অর্থ দলটি আগামী বছর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে ব্যয় করছে। কট্টর ডানপন্থী রাজনীতি নিয়ে একইভাবে আশাবাদী ব্রিটেনের ইউকে ইনডিপেন্ডেন্টস পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজ। ব্রিটেনের ইইউ ছাড়ার প্রচারে প্রধান ভূমিকায় দেখা গেছে তাকে। ট্রাম্পের বিজয়ের পর ফারাজ বলেন, এর চেয়ে বেশি খুশির খবর আর হয় না। নিউইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ারে গিয়েছিলেন তিনি। এদিন দুজনের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের নতুন সরকার গঠনে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করছেন ফারাজ। নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের প্রচারেও তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। নেদারল্যান্ডসের উগ্র ডানপন্থী দল পার্টি ফর ফ্রিডমের প্রধান গির্ট উইল্ডার্স। ট্রাম্পের সঙ্গেই সুর মিলিয়ে এই ইসলামবিদ্বেষী নেতা বলেছেন, মেক নেদারল্যান্ডস গ্রেট এগেইন। আগামী বছরের মার্চে দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রাক-নির্বাচন জরিপগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে গির্টের দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। গির্ট নির্বাচনী প্রচারে জানিয়েছেন, দেশের জনগণের কাছে নেদারল্যান্ডসকে ফিরিয়ে দিতে চান তিনি। জার্মানিভিত্তিক আরেক কট্টরপন্থী দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানির প্রধান ফ্রাউকে পেট্রির মতে, ট্রাম্পের বিজয় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও গোটা বিশ্বকেই বদলে দিয়েছে। দেশটির আঞ্চলিক নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসীন অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের দলের বিরুদ্ধে তারা যথেষ্ট সক্ষমতা দেখিয়েছে। আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনেও তারা বেশ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। মার্কেলের শরণার্থীপন্থী নীতিকে যেসব জার্মান নাগরিক মেনে নিতে পারছে না, তাদের সমর্থনকেই কাজে লাগাচ্ছে অলটারনেটিভ ফর জার্মানি। ইতালিতে ডিসেম্বরের শুরুতে সাংবিধানিক সংস্কার প্রশ্নে গণভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বর্তমান মধ্য-বামপন্থী প্রধানমন্ত্রী ম্যাথিউ রেনজির জন্য একে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই মনে করা হচ্ছে। তবে প্রাক-নির্বাচন জরিপগুলো বলছে অল্প ব্যবধানে হলেও ডানপন্থী ফাইভ স্টার মুভমেন্টের কাছে হেরে যেতে পারেন তিনি। ফাইভ স্টার মুভমেন্ট যুক্তরাষ্ট্রয় ট্রাম্পের জয়কে সুসংবাদ হিসেবেই দেখছে। অস্ট্রিয়ান কট্টর ডানপন্থী নেতা দাবি করেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় ভোটাররা বামপন্থী রাজনীতিকে শাস্তি দিয়েছে। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ক্ষমতায় চলে আসার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে দেশটির কট্টর রাজনৈতিক নেতা নোরবেট হোফের। নোরবেট কঠোরভাবে অভিবাসনবিরোধী। এবারের নির্বাচনে তিনি জিতে গেলে তা হবে ইউরোপের কট্টর জাতীয়তাবাদীদের জন্য বড় একটি অগ্রগতি। এদিকে হাঙ্গেরির জাতীয়তাবাদী নেতা ভিক্টর ওবান নতুন করে রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করেছেন। ২০১৮ সালে দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া চেক রিপাবলিকেও মধ্য বামরা জনসমর্থন হারাচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বহুস্নাভ সবটকা গত অক্টোবরের আঞ্চলিক নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী দলের কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন। সাম্প্রতিক একটি জরিপে জানা গেছে, দেশটিতে মধ্য বামরা জনসমর্থনের দিক থেকে ১৫ শতাংশে পিছিয়ে আছে। ওয়াশিংটন পোস্ট, দি ইনডিপেন্ডেন্ট, দি আটলান্টিক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ