Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

খুলনার আন্ডারওয়ার্ল্ড কিশোর সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:৩১ পিএম

আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে : বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের মানুষের জীবিকার প্রধান অবলম্বন আমন ধান। মূলত এক ফসলী এ অঞ্চলে আসন্ন ধান কাটার মৌসুমে কিশোর সন্ত্রাসী ও ক্যাডারদের ইশারায় বেদখল হয়ে যেতে পারে হাজার হাজার একর ফসলী জমির ধান। এখন অগ্রহায়ণ মাস। পাকা ধানে মৌ মৌ করছে গোটা উপকূলীয়াঞ্চল। অগ্রহায়ণ-পৌষের এই নবান্নে উৎসবের পরিবর্তে অনেক কৃষক পরিবার রিক্ত নিঃস্ব হয়ে পথে বসতে পারে। অতীত ইতিহাস তাই বলে।
প্রতি বছর রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গোলযোগপূর্ণ জমিতে এই কিশোর সন্ত্রাসীরা হামলা করে লুটে নেয় সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত ধান। টেন্ডারবাজি, স্মাগলিং, মাদক চোরাচালান এমনকি টার্গেট কিলিং-এ প্রভাব বিস্তারে কিশোর ক্যাডাররা এখন হটকেক। আন্ডারওয়ার্ল্ডে এদের পজিশন ও ডিমান্ড চোখে পড়ার মত। বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে এনকাউন্টারে বাঘা বাঘা সন্ত্রাসী নিহত হওয়ায় পর দল পরিচালনার দায়িত্ব এবং আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে কিশোর সন্ত্রাসীদের হাতে। উঠতি বয়সী এসব কিশোর সন্ত্রাসী এ অঞ্চলে হত্যা, অপহরণসহ নানা অপরাধ কর্মকাÐ ঘটাচ্ছে। তারা মৃত প্রায় চরমপন্থী দলগুলোকেও অনেকটা সংগঠিত করার অপচেষ্টা করছে। র‌্যাব পুলিশের অভিযান সত্তে¡ও কিশোর সন্ত্রাসীরা মাদকদ্রব্য পাচার, বিক্রি, অস্ত্র বেচা কেনা, মোবাইল ফোনে চাঁদাবাজি ও চরমপন্থী পরিচয়ে বেনামে চিঠি দিয়ে তটস্থ করছে সাধারণ মানুষকে।
খুলনাঞ্চলের চলতি আমন মৌসুমে কথিত জোতদার ও টাউট-বাটপারদের হয়ে এরা অন্যের জমির ধান কাটিয়ে দিচ্ছে মোবাইল ফোনে হুমকির মাধ্যমে। ভয়ে অনেকেই মুখ খুলছে না। এদের সিদ্ধান্তই এখানে চূড়ান্ত। অনেক রাজনৈতিক লেবাসধারী নেতা এদেরকে ব্যবহার করছে। টেন্ডারবাজিতেও শোডাউন করছে তারা। বিষয়টি খোদ সরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরই মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে এসব কিশোর সন্ত্রাসীকে চিহ্নিত করে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বহু অভিযোগ পুলিশ বিভাগ, র‌্যাব ও খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা পড়লেও এরা থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
জানা গেছে, খুলনা মহানগরীসহ বিভাগের চরমপন্থীপ্রবণ জেলাগুলোতে তালিকা করা হয়েছে সহস্রাধিক কিশোর সন্ত্রাসীর। এসব সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারের জন্য দ্রæত র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা অভিযানে নামবে। ইতোমধ্যে তালিকাভ্ক্তু এসব উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীর ওপর র‌্যাব-পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কড়া নজরদারি শুরু করেছে। তবে র‌্যাব পুলিশ এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। এদেরকে এতদিন বিশেষ কোন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। অথচ সা¤প্রতিক সময়ে বড় ধরনের কিলিং মিশনে কিশোর ও যুবক টেররদের অংশগ্রহণ উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে এই কিশোর সন্ত্রাসীরাই এখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার কাছে বিষ ফোঁড়ার মত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মূলত র‌্যাবের অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে গত দু’তিন বছরের মধ্যে খুলনা মহানগরীসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বাঘা বাঘা সন্ত্রাসী এনকাউন্টার নিহত হয়। এছাড়া পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে অনেকেই বর্তমানে কারাগারে অবস্থান করছে। কিন্তু এরই মধ্যে দীর্ঘদিন পরিস্থিত স্বাভাবিক থাকার পর আবারো আইন-শৃঙ্খলার অবনতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। স¤প্রতি খুলনার মাদক সম্রাট নাদিম হত্যাকাÐ, রোহান হত্যাকাÐ, সামজিক যোগাযোগের মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতাদের মৃত্যুর হুমকি, খুলনা জেল সুপারের বাসায় বোমা হামলা, বাস্তহারা কলোনীতে দুই শিশু অপহরণসহ ছিনতাই, চুরি, ডাকাতির ঘটনা এখন নিত্যদিনের ব্যাপার। এর কারণ উদ্ঘাটন করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে উঠতি বয়সী কিশোরদের অপরাধ কানেকশন। মূলত ক্রসফায়ারে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা নিহত হওয়া, আবার অনেকেই গা ঢাকা দেয়ায় দলের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই উঠতি বয়সী এসব কিশোরদের সংগঠিত করা হয়। তারা নতুন করে এ অঞ্চল আবারো অশান্ত করে তোলে। অধিকাংশ ঘটনার সাথে কিশোর অপরাধীদের কানেকশনের প্রমাণ হাতে পায় গোয়েন্দারা। এরই সূত্র ধরে খুলনা মহানগরীসহ বিভাগের ১০ জেলায় সহস্রাধিক কিশোর সন্ত্রাসীর তালিকা তৈরী করা হয়েছে বলে সূত্রটি জানায়।
সূত্র মতে, তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কিশোর নেশার টাকা জোগাড় করতে জড়িয়ে পড়েছে অপরাধ জগতে। আবার অনেকে সন্ত্রাসী পিতার উত্তরসুরী হিসেবে দায়িত্ব হাতে তুলে নিতে যোগ দিয়েছে আন্ডারওয়ার্ল্ডে। অনেকে রাজনৈতিক কারণে যোগ দিয়েছে এ জগতে। দক্ষিণাঞ্চলে কিশোর সন্ত্রাসের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে খুলনা জেলা। তালিকাভুক্তরা বেশিরভাগ রাজনৈতিক, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, আইনজীবী এ চরমপন্থীদের সন্তান ও স্বজন।
সূত্রটি জানায়, খুলনাঞ্চলে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা পুলিশি অভিযানের কারণে গ্রেফতার হলেও এবং অনেকে আত্মগোপন করলেও থেমে থাকছে না চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ ও খুনের ঘটনা। নেপথ্যে এসেছে উঠতি বয়সী কিশোরদের অপরাধে থাকার চিত্র। নেশার যুবক ও কিশোরাই এখন নানা অপরাধ কর্মকাÐ ও চরমপন্থী কানেকশনের সাথে স¤পৃক্ত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ