বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
করোনার ভয়াবহতা কিছুটা কমার পরপরই বিশ্বের ক’টি দেশে এবার দেখা দিয়েছে মাঙ্কিপক্স। বিবিসির সূত্র মতে, বিশে^র বারোটি দেশে মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। ইউরোপের নয়টি দেশ ছাড়াও এ রোগ দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অষ্ট্রলিয়ায়। সন্দেহজনক আরো পঞ্চাশটি দেশে আক্রান্তের বিষয়ে তদন্ত চলছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান এই যে, আক্রান্তের সংখ্যা আরো ব্যাপক হতে পারে।
মাঙ্কিপক্সের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ইউরোপে। মহাদেশটির নয়টি দেশে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই রোগ নিয়ে করণীয় ঠিক করার জন্য জরুরি বৈঠক করছে ডব্লিউএইচও। এর আগে এই রোগটি আফ্রিকায় কিছু দেখা গেলেও কথিত উন্নত বিশে^ এর ব্যাপ্তি এবারই বেশি। সারা বিশে^ এটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশ^ সংস্থা সতর্কতা জারির পর বাংলাদেশসহ নানা দেশে সতর্ক অবস্থান গৃহীত হচ্ছে। দেশের বন্দরগুলোকে সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে প্রাণীবাহিত এই রোগটি গুটি বসন্তের মতো। এর নির্দিষ্ট কোনো টিকা বা ওষুধ নেই।
বিজ্ঞানীদের মতে বিকৃত যৌনাচার ও সমকামিতার ফলে মাঙ্কিপক্স হয়ে থাকে। ইঁদুর বা অন্য প্রাণীর মাধ্যমে পরে এটি সাধারণ মানুষকেও আক্রান্ত করতে পারে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, যখন অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও ব্যভিচার ব্যাপক হয়ে যাবে, মানুষ খোলামেলা অপরাধ বা গোনাহ করতে থাকবে, তখন খাদ্যের সঙ্কট দেখা দেবে, তখন এমন সব রোগ দেখা দিবে যা পূর্ববর্তীরা চিনত না। (মুসলিম)
পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা এখন থেকে কমপক্ষে সাড়ে চার হাজার বছর আগে সাদুম গোত্রকে ধ্বংস করে দেন। হযরত ইবরাহীম (আ.) এর ভাইয়ের ছেলে হযরত লুত (আ.) তুরস্ক, সিরিয়া ও জর্ডানের মধ্যবর্তী এলাকায় নবুওয়তি দায়িত্ব পালন করেন। পৃথিবীতে তার জাতিই প্রথম সমকামিতার প্রচলন করে এবং সম্প্রদায়ের প্রায় সবাই এর সমর্থক হয়ে উঠে। সমকাম, সমলিঙ্গে বিবাহ, বহুগামিতা ও দলবদ্ধ যৌনতা শয়তানের প্ররোচনায় সংঘটিত যৌন বিকৃতি বিশেষ। যা আল্লাহ হারাম করেছেন। কোরআন শরীফে একাধিক জায়গায় এই জাতির কথা বলা হয়েছে।
এদেরকে স্বাভাবিক ও বৈধ যৌন জীবনের প্রতি নবী লুত (আ.) দাওয়াত দেন। কিন্তু চিন্তার স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের নামে এরা আল্লাহর বিধানকে অস্বীকার করে। তখন আল্লাহ আজাবের দ্বারা তাদের জনপদকে ধ্বংস করে দেন। কোরআনে বর্ণিত এই কাহিনী বেশ দীর্ঘ ও শিক্ষনীয়। দু’জন ফেরেশতা পরদেশী মেহমান রূপে হযরত লুত (আ.) এর কাছে আসে। তারা ছিল মানবরূপধারী অতীব সুদর্শন। তখন গোত্রের সর্বাপেক্ষা উদ্ধত ও সীমালঙ্ঘনকারী নেতারা এই অতিথিদের উত্যক্ত করে।
হযরত লুত (আ.) তার জাতিকে এসব অবাধ্যতা ত্যাগ করে সভ্য মানুষ হওয়ার জন্য আহ্বান জানান। বলেন, তোমরা সমকাম ও বিকৃতি পরিহার করে মেয়েদের বিয়ে করো। এমনকি আমার বংশের মেয়েদের বিয়ে করে হলেও পবিত্র জীবন যাপন করো। স্বভাব ও প্রকৃতি বিরোধী যৌনাচারের চিন্তা থেকে তওবা করে এসব নাফরমানি বাদ দাও। খারাপ লোকেরা তখন হযরত লুত (আ.) কে বিদ্রুপ করে বলল, পবিত্র ও ভালো চিন্তার মানুষ আমাদের সমাজে থাকতে পারবে না। আপনি দেশ ছেড়ে চলে যান।
তারা যখন ছদ্মবেশী ফেরেশতাদের সাথে অসদাচরণ করতে শুরু করল তখন হযরত লুত (আ.) বললেন, গোটা জাতির মধ্যে সুস্থ ও স্বাভাবিক লোক কি নাই হয়ে গেল, তোমাদের মধ্যে কি একজনও ভালো মানুষ নেই? আল্লাহ তখন হযরত লুত (আ.)-কে সান্তনা দিয়ে বললেন, হে নবী, আপনাকে আমি এদের ছেড়ে চলে যেতে বলছি। ফেরেশতারা তাদের কাজ শুরু করবে। আপনি দ্রুত দেশত্যাগ করুন। তবে, আপনার স্ত্রী খারাপ লোকেদের সমর্থন করত, তাই তাকে আজাবে নিমজ্জিত হতে হবে। সে আপনার সঙ্গী হতে পারবে না।
এরপর এই জাতিকে এমনভাবে ধ্বংস করা হয়, যার নজির পৃথিবীতে কমই আছে। মূল জনপদটি ফেরেশতারা আকাশে তুলে নেয় এবং উল্টো করে আবার মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে। যে জায়গাটির কিছু নিদর্শনস্বরূপ মৃত সাগর অঞ্চলটি এখনো দুনিয়াতে রয়েছে। মুফাসসিরগণ বলেন, এই ‘ডেড সী’ এলাকাটি ছিল এই জাতির বিশাল জনপদের অংশ বিশেষ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।