বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোরআন মাজীদ একসাথে অবতীর্ণ হয়নি, অল্প অল্প করে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু অভাবনীয় ব্যাপার এই যে, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অবতীর্ণ হওয়া আয়াতগুলোতেই মানবজীবনের সকল বিভাগের জন্য সার্বজনীন, সর্বকালীন অপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবস্থাসমূহ পূর্ণতা লাভ করেছে, যা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয় যে, এই কালাম সেই সর্বজ্ঞানী মহান সত্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, যাঁর জ্ঞানের সামনে স্থান-কালের কোনো তফাৎ নেই। তিনি তাঁর বাণী ও বিধান প্রয়োজন মতো নাযিল করেছেন আর সব স্ব স্ব স্থানে ছকে ছকে মিলে গেছে। বিধি-ব্যবস্থার অবতারণ সম্পন্ন হওয়ার পর ঘোষণা করে দিয়েছেন: আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিআমত পরিপূর্ণ করলাম আর ইসলামকে তোমাদের ধর্মরূপে পছন্দ করলাম। (সূরা মায়েদা : ৩)।
কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, কোরআন মাজীদ শুধু বিধি-ব্যবস্থার গ্রন্থ নয়, এতে যেমন বিধান আছে, তেমনি আছে বৃত্তান্ত, উপমা, প্রতিশ্রুতি, হুঁশিয়ারি এবং আরো অনেক কিছু। আছে অসাধারণ শব্দ-চয়ন, অনন্য বাক্য-বিন্যাস, অপূর্ব ধ্বনিমাধুর্য, অতুলনীয় ছন্দময়তা। কিন্তু এই সকল অতুলনীয়তা সত্ত্বেও এর ভাষা অতি সহজ-সরল, সজীব-প্রাণবন্ত, একান্ত আপনার। ছোট একটি উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধা হবে :
বিখ্যাত আরবি অভিধানবিদ ইমাম আসমায়ী রাহ. এক বেদুঈন মেয়ের মুখে কয়েকটি পংক্তি শুনে খুব মুগ্ধ হন। তিনি তার প্রতিভায় বিস্ময় প্রকাশ করলে মেয়েটি বলে ওঠে- আক্ষেপ আপনার প্রতি। আল্লাহ তাআলার এই বাণীর তুলনায় আমার এই পংক্তিগুলোর কী মান হতে পারে? একথা বলে মেয়েটি তিলাওয়াত করল : আর আমি মূসার মায়ের অন্তরে একথা ঢেলে দিলাম যে, তুমি ওকে স্তন্য দান করো। যখন তার (প্রাণের) আশঙ্কা করবে তখন তাকে নদীতে ফেলে দেবে। ভয় করো না, দুঃখও করো না। আমি অবশ্যই তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে রাসূলদের একজন বানাব। (সূরা কাসাস : ০৭)
আয়াতটি তিলাওয়াত করে মেয়েটি বলল, দেখুন, সংক্ষিপ্ত একটি আয়াত, (কত সহজ-সরল কথা) কিন্তু এতে দুটি আদেশ, দুটি নিষেধ, দুটি সংবাদ ও দুটি প্রতিশ্রুতি আছে! ইমাম আসমায়ী রাহ. বলেন, আমি মেয়েটির কবিতা শুনে যতটা না বিস্মিত হয়েছিলাম তার উপলব্ধির পরিচয় পেয়ে তার চেয়ে বেশি বিস্মিত হলাম। (তাফসীরে কুরতুবী ১৩/২৫২)।
সহজ-সরল একটি কথার মধ্যেও কী অদ্ভূত সামঞ্জস্য; আদেশ দুটি হচ্ছে : ‘ওকে স্তন্য দান করো’; এবং ‘...তখন তাকে নদীতে ফেলে দেবে’। নিষেধ দুটি হচ্ছে : ‘ভয় করো না’, ‘দুঃখও করো না’। সংবাদ দুটি হচ্ছে : ‘ঢেলে দিলাম’, ও ‘আশঙ্কা করবে’। আর প্রতিশ্রুতি দুটি হচ্ছে : ‘ওকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিব’ ও ‘তাকে রাসূলদের একজন বানাব’।
এই অদ্ভূত সামঞ্জস্যপূর্ণ শব্দ-বাক্যের কাঠামো ও মাধুর্যপূর্ণ ভাষার মধ্যেই দেয়া হয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানবতার জন্য সর্বশেষ ও চূড়ান্ত জীবন-ব্যবস্থা। সেই জীবন-ব্যবস্থাও এত সহজ-স্বাভাবিকভাবে মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনেছে যে, অসংখ্য মানুষ নিজেও টের পায়নি, কীভাবে কোরআন মাজীদের স্পর্শে কোন কোন মরণব্যাধি থেকে সে আরোগ্য লাভ করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।