বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
রমজানের পরের মাস শাওয়াল। আর রমজানের আগের মাস হলো শাবান। শাওয়াল ও শাবান হলো রমজান সংশ্লিষ্ট ও রমজানের আগে-পরের মাস। তাই রমজানের সম্মানার্থে শাবান ও শাওয়াল মাস এবং এ দুই মাসে রোজা রাখার প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত। বিশেষত শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখার ব্যাপারে যত্নবান হওয়া চাই। কেননা হাদীস শরীফে এর প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
আবু আইয়ূব আনছারী রা. বলেন, নবী (সা.) বলেছেন : যে মাহে রমজানের রোজা রাখল এরপর শাওয়ালে ছয়টি রোজা রাখল এটি তার জন্য সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য হবে। (সহীহ মুসলিম : ১১৬৪)। রমজান মাস ও শাওয়ালের ছয় দিন রোজা রাখলে কীভাবে পুরো বছর রোজা রাখার সওয়াব হবে- এর বিবরণ এসেছে আরেক হাদীসে। ছাওবান রা. বলেন, নবী (সা.) বলেছেন : রমজান মাসে রোজা রাখা দশ মাস রোজা রাখার সমান এবং শাওয়ালে ছয় দিন রোজা রাখা দুই মাস রোজা রাখার সমান। সুতরাং রমজান ও ছয় রোজা মিলে এক বছরের রোজার সমান। (সুনানে কুবরা, নাসাঈ : ২৮৭৩)।
আল্লাহ এক নেকীতে দশ নেকীর সওয়াব দান করেন। এক দিনের রোজা দশ দিনের সমান, তিন দিনের রোজা এক মাসের সমান। ছয় দিনের রোজা দুই মাসের সমান। আর এক মাসের রোজা দশ মাসের সমান। সুতরাং যে রমজানের এক মাস ও শাওয়ালের ছয় দিন রোজা রাখবে সে এক বছরের সমান সওয়াব পাবে।
রমজানের রোজা কবুল হওয়ার আলামত : শাওয়ালের রোজার একটি ফযীলত হলো, এই রোজা রমজানের রোজা কবুল হওয়ার একটি আলামত। রমজান মাসের রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসে কিছু রোজা রাখা একথার আলামত যে, আল্লাহ তাআলার দরবারে রমজানের রোজা কবুল হয়েছে। কেননা আল্লাহ তাআলা যখন বান্দার কোনো আমল কবুল করেন তখন অন্য একটি নেক আমলের তাওফীক দান করেন।
সাঈদ ইবনে জুবায়ের রাহ. ও আরো কোনো কোনো সালাফের বক্তব্য হলো, নেক আমলের প্রতিদান হচ্ছে, এর পর আরো নেক আমলের তাওফীক পাওয়া। আর গোনাহের শাস্তি হলো, এর পর আরো গোনাহে লিপ্ত হওয়া। (মাজমূউল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া ১০/১১)। সালাফের এই কথার সমর্থন কোরআন মাজীদেই বিদ্যমান। আল্লাহ তাআলা বলেন : যারা হেদায়েতের পথ অবলম্বন করেছে, আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েতে উৎকর্ষ দিয়েছেন এবং তাদেরকে দান করেছেন তাদের (প্রয়োজনীয়) তাকওয়া। (সূরা মুহাম্মাদ : ১৭)।
আয়াতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, হেদায়েত ও নেক আমলের পথে চললে আল্লাহ তাআলা তাকে আরো বেশি তাকওয়া ও হেদায়েতের তাওফীক দান করেন। হাদীস শরীফেও অনুরূপ এসেছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বর্ণনা করেন, নবী (সা.) বলেছেন : তোমরা সত্যকে আঁকড়ে ধর। কেননা সত্য আনুগত্যের দিকে নিয়ে যায়। আর আনুগত্য জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। মানুষ সত্য বলতে থাকে এবং সত্যের জন্য চেষ্টা করতে। এক পর্যায়ে আল্লাহর নিকট তার নাম লেখা হয় ‘ছিদ্দীক’।
তোমরা মিথ্যা থেকে দূরে থাক। কেননা, মিথ্যা পাপের পথে নিয়ে যায়। আর পাপ জাহান্নাম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। মানুষ মিথ্যা বলতে থাকে এবং মিথ্যার জন্য চেষ্টা করতে থাকে। একসময় আল্লাহর নিকট তার নাম লেখা হয় ‘কায্যাব’। (সহীহ মুসলিম : ২৬০৭)।
উল্লিখিত আয়াত ও হাদীস থেকে জানা যায়, মানুষ যখন কোনো ভালো আমল করে তার জন্য আরো অনেক ভালো আমল করা সহজ হয়ে যায়। সুতরাং একটি ভালো আমলের পর আরেকটি ভালো আমলের তাওফীক হওয়া একথার অলামত যে, পূর্বের ভালো আমলটি আল্লাহ কবুল করেছেন। তাই তাকে আরো কিছু আমলের তাওফীক দান করেছেন। অতএব রমজান মাসের পর শাওয়াল মাসে রোজা রাখা এ কথার একটি দলিল যে, তার রমজানের রোজা আল্লাহ তাআলা কবুল করেছেন।
রমজানের রোজা, রমজানের তারাবি ও অন্যান্য আমল মুমিন বান্দার গোনাহ মিটিয়ে দিয়েছে সুতরাং গোনাহমাফ ও অন্যান্য নিআমতের দাবি হলো রমজানের রোজার পর আরো কিছু রোজা রাখা। এটাই হলো, এসব নিআমতের শুকরিয়া। সুতরাং আসুন, রমজানের রোজা ও অন্যান্য ইবাদতের শোকরস্বরূপ শাওয়াল মাসে কিছ রোজা রাখি। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।