Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশের দিকে আবারও ছুটছে রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারে সহিংসতায় কফি আনানের উদ্বেগ : রক্তপাত বন্ধের আহ্বান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দমন অভিযানের মুখে শত শত রোহিঙ্গা মুসলিম সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে চাইছেন। বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্যটিতে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ১৩০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে রয়টার্স জানিয়েছে। সংবাদ সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছেন মিয়ানমারের মুসলিম নাগরিকদের অনেকে। প্রতিবেশী দেশটিতে এই পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা পাহারা জোরদার করেছে। কক্সবাজারের বিজিবির ২ ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. আবু রাসেল সিদ্দিকী বলেন, গত মঙ্গলবার আব্রাং সীমান্ত হয়ে নৌকাযোগে নাফ নদী পার হয়ে ৮০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। এ সময় বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠায়। রোহিঙ্গাদের কয়েকটি নৌকা ফিরিয়ে দেয়ায় সেগুলো এখন সমুদ্রে ভেসে আছে বলে রয়টার্স জানায়।
ভয়েস অব আমেরিকার খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সহিংসতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে রক্তপাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান। এ প্রদেশে গত কয়েক দিনে কমপক্ষে ৭০ জন মুসলিমকে হত্যা করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সাত সদস্য প্রাদেশিক রাজধানী সিতওয়েতে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এরপর তিনি বিবৃতিতে বলেন, এ সহিংসতা প্রদেশটিকে নতুন করে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং নতুন করে অনেককে ঘরবাড়ি থেকে উৎখাত করছে। গত বুধবার অস্থিরতায় আক্রান্ত গ্রামগুলো পরিদর্শনে যায় কমিশন সদস্যরা। এদিকে, সহিংসতায় উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এলিজাবেথ ট্রুডো মিয়ানমার সরকারকে ‘গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ তদন্ত’ চালানোর অনুমতি দেয়ার আহ্বান জানান। খবরে আরো বলা হয়, রাখাইন প্রদেশের নিয়ন্ত্রণভার দেশটির সামরিক বাহিনী গ্রহণ করায় সহিংসতার শিকার হয়ে পলায়নরত প্রায় দুই শত মুসলিম রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থান নিয়েছেন।
মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গারা কয়েক যুগ ধরে বাংলাদেশে আসছিল। বর্তমানে ৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার ভার বহন করছে বাংলাদেশ। ২০১২ সালে রাখাইনে বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে ভয়াবহ দাঙ্গার পর অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকতে চাইলেও তখন বাংলাদেশ সীমান্ত আটকে দিয়েছিল। বাংলাদেশ সরকারের দাবি, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার ভার বহনের সঙ্গে নতুন আরও শরণার্থী নেয়া অসম্ভব। তাছাড়া রোহিঙ্গা বাংলাদেশের নাগরিক সেজে বিভিন্ন দেশে গিয়ে অপরাধে জড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। ওই দাঙ্গার পর এবারই রাখাইন রাজ্যে সবচেয়ে মারাত্মক রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটছে বলে রয়টার্সের ভাষ্য। পলায়নরত রোহিঙ্গাদের গুলি করা হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা রয়টার্সকে বলেন, স্থানীয়রা আমাকে বলেছে, নদীর পাড়ে প্রায় ৭২ জনকে হত্যা করা হয়েছে। সেনাবাহিনী নদীর পাড়ে অপেক্ষারতদের ভিড়ের মধ্যে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় ৯ সীমান্ত পুলিশের মৃত্যু হয়। এরপরই আশপাশের এলাকাগুলোতে ব্যাপক ধর-পাকড় শুরু হয়। গত সাত দিন ধরে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জেলাগুলোতে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান চলছে। সেখানে ত্রাণকর্মী ও নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না এবং গ্রামগুলোতে চিরুণি তল্লাশি অভিযান চলছে।
রয়টার্সের পক্ষ থেকে রাখাইন রাজ্য সরকারের সীমান্তবিষয়ক মন্ত্রী কর্নেল তাইন লিনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। মিয়ানমার পুলিশের মেজর কিয়াও মিয়াও বলেন, লোকজন পালিয়ে যাচ্ছে, কারণ তারাই সেনাবাহিনীর উপর হামলার চেষ্টা করেছিল। গ্রামবাসীরা জঙ্গি হয়ে গেছে, এমনকি গ্রামের নারীরাও জঙ্গি দলে যোগ দিয়েছে। গত মঙ্গলবার মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত সাত দিনের সহিংসতায় রোহিঙ্গা জঙ্গি দলের ৬৯ জন সদস্য এবং মিয়ানমার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৭ সদস্য নিহত হয়েছে। সাত মাস আগে নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অন সান সু চির দল মিয়ানমারের ক্ষমতায় এলেও রাখাইন রাজ্যের সংঘাত নিরসনে এখনও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। রোহিঙ্গা নির্যাতিনের বিষয়ে মিয়ানমান সরকার বরাবরই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে আসছে। বিবিসি, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ