বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সূরা নিসা-এর ১১৩ নং আয়াতে মহান রাব্বুল আলামীন পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলূল্লাহ (সা.)-এর প্রতি আল কিতাব (আল কুরআন) এবং আল হিকমাত বা বিশেষ শ্রেণির প্রজ্ঞা ও জ্ঞানবত্তা নাজিল করেছেন বলে ঘোষণা প্রদান করেছেন। এ পর্যায়ে অবশ্যই অনুধাবন করা দরকার যে, হিকমাত বা বিশেষ প্রজ্ঞা বলতে কি বোঝানো হয়েছে। আসুন, এবার সে দিকে লক্ষ করা যাক। তবে, উল্লিখিত বিষয়টি সহজতর করে উপস্থাপন করার লক্ষ্যে একে কয়েকটি স্তরে বিন্যস্ত করে আলোচনা করা দরকার। যথাÑ প্রথম স্তর: সূরা নিসা-এর ১১৩ নং আয়াতে হাবীবে কিবরিয়া মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে সম্বোধন করে বলা হয়েছে যে, মহান রাববুল আলামীনের অনুগ্রহ ও কৃপা আপনার সঙ্গী না হলে কূটচক্রী অবিশ্বাসীর দল আপনাকে বিভ্রান্ত ও দিশেহারা করার পাঁয়তারা করত।
অথচ মহান রাব্বুল আলামীন ওহীর (আল কিতাব) মাধ্যমে আপনাকে সত্য ঘটনা বলে দিয়েছেন, মূল সত্যের পর্দা উন্মোচন করেছেন। তা এ জন্য যে, আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ ও কৃপা আপনার চির সাথী চির সঙ্গী। তাই কখনো অবিশ্বাসী চক্রান্তকারীরা আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না এবং আপনাকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হবে না। বরং নিজেরাই পথভ্রষ্টতার অথই সাগরে নিমজ্জিত হয়ে যাবে। এমনকি তারা এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে যে, সে অন্ধকার থেকে বের হওয়ার কোনো পথই খুঁজে পাবে না। কেননা, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপনার প্রতি ঐশী গ্রন্থ (আল কিতাব) এবং হিকমাত (প্রজ্ঞা ও জ্ঞানগর্ভ বিষয়াদি) নাজিল করেছেন, যা সম্পর্কে আপনি ইতঃপূর্বে অবগত ছিলেন না।
দ্বিতীয় স্তর : সূরা নিসা-এর ১১৩ নং আয়াতে আল কিতাব এবং আল হিকমাত শব্দদ্বয় উল্লেখ করে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, আল কিতাব হচ্ছে আল কুরআন, যা ওহী এবং যা আল্লাহ পাকের তরফ হতে প্রিয় নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি নাজিল করা হয়েছে। অনুরূপভাবে হিকমাত বা প্রজ্ঞা ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ (জীবন দর্শন) ও আল্লাহ পাকেরই অবতারিত ও নাজিলকৃত।
তবে পার্থক্য এই যে, আল কিতাবের শব্দাবলি আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে সরাসরি ঘোষিত হয়েছে। আর হিকমাত বা সুন্নাহর (হাদিসের) শব্দাবলি আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে নয়, বরং তা বিশ্বনবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পক্ষ থেকে ঘোষিত হয়েছে। এ কারণেই হিকমাত, সুন্নাহ বা হাদিসের শব্দাবলি আল কুরআনের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে অবশ্যই আল কুরআন ও সুন্নাহ অর্থাৎ হাদিসের ভাব এবং তথ্যসমূহ আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকেই আগত এবং উভয়টির বাস্তবায়নই ওয়াজিব বা অপরিহার্য।
তৃতীত স্তর : স্মরণ রাখা দরকার যে, আল কিতাব ও আল হিকমাত উভয়টিই ওহী। আরবি ওহী শব্দটির অর্থ প্রেরণ করা, প্রত্যাদেশ করা বা ইঙ্গিত করা। হযরত জিব্রাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে যুগে যুগে, কালে কালে বিভিন্ন নবী ও রাসূলগণের কাছে মানুষের জন্য উপযোগী উপদেশ সম্বলিত আল্লাহ পাকের অবতারিত ভাষণকেই ওহী বলে। মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর যে সকল ওহী নাজিল করেছেন তা দু’প্রকার। যথা :
(ক) ওহীয়ে মাতলু অর্থাৎ পঠিত প্রত্যাদেশ। আরবি মাতুলু শব্দটির অর্থ যা তিলাওয়াত করা হয়েছে। এর দ্বারা কুরআনুল কারীম উদ্দেশ্য। এ প্রকার ওহী আল্লাহপাকের বাণী বাহক ফিরিশতা হযরত জিব্রাঈল (আ.) নূর নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে তিলাওয়াত করে শোনাতেন। যার অর্থ ও শব্দাবলি উভয়টিই আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে অবতারিত। এক্ষেত্রে যে যে শব্দ ও বাক্যে ওহী নাজিল হয়েছে তা রাসূলুল্লাহ (সা.) হুবহু বহাল রেখেছেন। সালাত বা নামাযে কেবল এ প্রকার ওহী-ই-তিলাওয়াত করা হয়।
(খ) ওহীয়ে গায়রে মাতলু বা অপঠিত প্রত্যাদেশ। এ প্রকার ওহী হিকমাত অর্থাৎ সুন্নাহ তথা হাদিস। এর শব্দাবলি রাসূলূল্লাহ (সা.)-এর পক্ষ থেকে কিন্তু এর ভাব ও মর্ম মহান আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে। এ ধরনের ওহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত মূল বক্তব্যকে বা ভাবকে নিজ ভাষায় প্রকাশ ও উপস্থাপন করার অধিকার আল্লাহ পাক রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে প্রদান করেছিলেন। এটিই হলো ওহীয়ে গায়রে মাতলু বা অপঠিত ওহী। এ ধরনের ওহী নামাযে তিলাওয়াত করা যায় না।
ওহীর বিশেষত্বকে আল কুরআনে এভাবে বিবৃত করা হয়েছে : ‘এটি (ওহী) সৃষ্টিকুলের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে নাজিলকৃত। যদি সে রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার নামে কোনো মিথ্যা রচনা করত, তবে আমি তার ডান হাত পাকড়াও করতাম। তারপর অবশ্যই আমি তার হৃদপিণ্ডের শিরা কেটে ফেলতাম। অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউই তাকে রক্ষা করার থাকত না। আর এটি তো মুত্তাকীদের জন্য এক নিশ্চিত উপদেশ। (সূরা হাক্কাহ : ৪৩-৪৮)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।