বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আব্দুর রহমান আস-সুমাইত আফ্রিকায় গিয়েছিলেন কয়েক মাসের সফরে। কিন্তু, আফ্রিকার এমন অবস্থা দেখে তিনি চিন্তায় পড়ে গেলেন। কিয়ামতের দিন যদি তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, মুসলিমদের এমন শোচনীয় অবস্থা দেখে তিনি কেন পালিয়ে গেলেন? তিনি কেন একটি উন্নত জীবনের আশায় মানুষকে ঈমানহারা হতে দেখেও চলে যান উন্নত দেশে? এসব চিন্তা তাঁর মাথায় জেঁকে বসে। তিনি স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করেন, আমাদের তো যাবার কথা ছিলো পূর্ব-এশিয়ায়, এ অবস্থায় আমরা কী করব?
তাঁর স্ত্রী জবাব দেন, এটা হয়তো আল্লাহরই পরিকল্পনা। মসজিদ প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদেরকে আফ্রিকায় নিয়ে এসেছেন, যাতে আমরা আফ্রিকার অবস্থা দেখতে পারি। আপনি চিন্তা করবেন না, আমি চাই না বিলাসী জীবন। আমি আফ্রিকায়ই থাকতে চাই। এই বলে উম্মে সুহাইব (আব্দুর রহমানের স্ত্রী) নিজের সব স্বর্ণালঙ্কার স্বামীকে দিয়ে বলেন, এগুলো দিয়ে দাওয়াতের কাজ শুরু করেন। জান্নাতে গেলে আমি এমনিতেই স্বর্ণালঙ্কার পাব। দুনিয়ার স্বর্ণালঙ্কার আমি জান্নাতের জন্য বিনিয়োগ করলাম।
একটি মসজিদ স্থাপনের জন্য আসা ডাক্তার আব্দুর রহমান আস-সুমাইত তাঁর ঈর্ষণীয় ক্যারিয়ার পেছনে ফেলে বসবাস শুরু করলেন আফ্রিকায়। আফ্রিকার মানুষের কল্যাণে প্রতিষ্ঠা করেন আফ্রিকান মুসলিম এজেন্সি। বৈদেশিক ত্রাণ আফ্রিকার অভাবী মানুষের হাতে পৌঁছে দেবার জন্য গঠন করেন আরো কয়েকটি সংগঠন। আফ্রিকার এক দেশ থেকে আরেক দেশে, এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে পায়ে হেঁটে, সাঁতার কেটে, গাড়িতে চড়ে দাওয়াতের জন্য সফর করেন। এমনও দিন অতিবাহিত হয়েছে, যখন তাঁর খাওয়ার জন্য পানি ছাড়া কিছুই ছিল না। মানুষের মলমূত্র এসে পতিত হয়, এরকম পুকুর থেকেও খাবার পানি সংগ্রহ করে খেতে হয়েছে মাঝেমধ্যে। বেশ কয়েকবার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। দুইবার তিনি জেলেবন্দি হন। তবুও তিনি দমে যাননি।
একবার একটি গ্রামে প্রবেশ করতে চাইলেন। সেখানকার অধিবাসীরা ছিল খ্রিস্টান। দাওয়াতের জন্য সেই গ্রামে তাঁকে ঢুকতে দেয়া হবে না। তারা শর্ত দিল, আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, আল্লাহ যেন আমাদের গ্রামে বৃষ্টি দেন। এই গ্রামে গত ৩-৪ বছর ধরে বৃষ্টি হয় না। আপনার দোয়ায় যদি বৃষ্টি হয়, তবেই আমরা ইসলাম গ্রহণ করব। নতুবা আপনার এ ইসলামের কোনো দরকার নেই।
ডাক্তার আব্দুর রহমান বললেন, এটা তো আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। আমি দোয়া করলেই আল্লাহ বৃষ্টি দিবেন, এমন কোনো নিশ্চয়তা তো আমি দিতে পারি না। লোকজন তাঁকে জোরাজুরি করল। একবার দোয়া করেই দেখেন। যদি আপনার দোয়ায় কাজ হয়, তাহলে তো আমরা ইসলাম গ্রহণ করব। তিনি তাঁর সঙ্গীদের সাথে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। তারাও পরামর্শ দিলো, আপনি একবার দোয়া করেন।
আব্দুর রহমান আস-সুমাইত হাত তুললেন। তিনি বলেন, আমি হাত তুলে দোয়া করতে লাগলাম। আমার মনের আকুতি মিশিয়ে আল্লাহর কাছে যতটা নত হওয়া যায়, হয়ে কান্না করতে লাগলাম। আমার মনে হলো আমার সমস্ত চোখের পানি ছেড়ে দিই। আমি কাঁদতেই থাকলাম, কাঁদতেই থাকলাম। আমি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলাম, হে আল্লাহ, আমার পাপের জন্য আপনি আপনার বান্দাদের এমন সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হতে দিবেন না। আমার পাপ যেন তাদের ইসলাম গ্রহণে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। হে আল্লাহ, আপনি বৃষ্টি বর্ষণ করুন।
আমি দোয়া করতে করতে আকাশের দিকে তাকালাম। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হতে শুরু করেছে, মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে। অতঃপর ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। এমন বৃষ্টি হলো, আফ্রিকার এ এলাকার মানুষ তাদের জীবনে এভাবে মুষলধারে বৃষ্টি হতে আর দেখেনি। গ্রামবাসী তাদের কথা রাখল। পুরো গ্রাম ইসলাম গ্রহণ করল।
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ডাক্তার আব্দুর রহমান আস-সুমাইতের উদ্যোগে এমনসব কাজ হয়, যেগুলো রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেও হবার চিন্তা করা দুঃসাধ্য। পুরো আফ্রিকাজুড়ে ডাক্তার আব্দুর রহমান আস-সুমাইত যা করেন, ৯৫০০টি এতিমখানা স্থাপন করেন। ৯৫ হাজার শিক্ষার্থীর পড়ালেখার জন্য বৃত্তি প্রদান করেন। ৫,৭০০টি মসজিদ স্থাপন করেন। নারীদের জন্য ২০০টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেন। ৮৬০টি স্কুল স্থাপন করেন। ১০২টি ইসলামিক সেন্টার স্থাপন করেন। তানজানিয়া, জানজিবার, কেনিয়ায় ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন। পানি সঙ্কট নিরসনে ৯৫০০টি কূপ খনন করেন। ৫ কোটি ১০ লাখ কোরআন বিতরণ করেন। ডাক্তার আব্দুর রহমান আস-সুমাইতের সঙ্গীদের দেয়া তথ্যমতে, তাঁর কল্যাণে সাম্প্রতিক সময়ে আফ্রিকার এক কোটির বেশি মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। -কিছু তথ্য ইন্টারনেট থেকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।