বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
তিস্তার রুপালী চরে বাদাম চাষ করে ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। শতধিক চরে বাজাম চাষ করা হয়েছে। প্রতিটি চরেই ফলন ভালো হওয়ায় বাদাম নিয়ে ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্ন দেখছেন তারা। নিলফামারী, লালমনির হাট, রংপুর, কুড়িগ্রামের তিস্তা নদীর জেগে উঠা চরগুলো ঘুরে দেখা গেছে, চরের পর চর জুড়ে চাষ করা হয়েছে বাদামের। প্রায় প্রতিটি চরেই বেশ ভালো ফলন হয়েছে। সঠিক দিক নির্দেশনা এবং প্রশিক্ষন পেলে চরাঞ্চলে বাদাম চাষে ভাগ্য বদলে যাবে কৃষকদের। বাদাম হয়ে উঠবে চরাঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক ফসল।
গত দু’দিন তিস্তার বিভিন্ন চর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তিস্তার বুক চিরে জেগে ওঠা ধু ধু বালুচরে এখন সবুজের সমারোহ। রুপালী চর এখন সবুজে সবুজে ছেয়ে গেছে। চাষ করা হয়েছে বাদাম, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল ও রবিশস্য। কৃষকরা পরিচর্যায় ব্যস্ত এসব ফসলের ক্ষেত। দিগন্ত জুড়ে বাদামের ক্ষেত দেখে মনে হচ্ছে রুপালী চরে যেন সবুজ চাদর বিছানো হয়েছে। মাঝে মাঝে বাদামের সবুজপাতা বাতাশে দোল খেয়ে যেন সবুজ ঢেউয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। যা দুর থেকে এক অপরূপ শোভা বর্ধন করছে। চরের এসব বাদাম ক্ষেত ঘুরে দেখা যায় প্রায় প্রতিটি বাদাম ক্ষেতের গাছগুলো বেশ পরিপক্ক হয়ে উঠেছে। ডাল ধরে টান দিলেই মাটির নিচ থেকে উঠে আসছে থোকা থোকা বাদাম। এ যেন সবুজের সমারোহ। অনেক বাদাম ক্ষেত ইতিমধ্যেই পরিপক্ক হয়ে হলদে রং ধারণ করেছে। আর ক’দিন পরেই কৃষকরা এসব চর থেকে বাদাম তুলে রোদে শুকিয়ে ঘরে নিবেন। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাদাম চাষ অত্যন্ত সহজ, খরচ কম এবং ঝামেলা নেই। বন্যায় তিস্তার চরগুলোতে পলিমাটি জমে থাকায় এগুলো বাদাম সহ অন্যান্য রবিশস্যের জন্য বেশ উপযোগি হয়েছে। তাই এসব চরাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী জমিগুলোতে বাদামের ফলন ভালো এবং তুলনামূলকভাবে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা বাদাম চাষে ঝুঁকছেন।
কাউনিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এই উপজেলার প্রায় ৬’শ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। এরমধ্যে তিস্তার চরাঞ্চলেই প্রায় ৫’শ ৫০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছে। বাদাম সাধারণত তেল জাতীয় ফসল। বেলে, দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটিতে বাদামের ভালো ফলন হয়। তাই তিস্তার চরাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বেশি বাদাম চাষ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগের মতে, চরাঞ্চলে বেশির ভাগ বারি চিনাবাদাম-৭ ও ৮ এর চাষ হয়। এ ছাড়া, বিনা-৪ ও বিজি-২ এর ফলনও ভালো হয়ে থাকে। বীজ বপনের ১২০ থেকে ১৫০ দিনের মধ্যে চিনাবাদাম পরিপক্ক হয়। মৌসুমের শুরুতে বপন করা বাদাম ইতিমধ্যে ঘরে তোলা শুরু হয়েছে।
চরে বাদাম চাষ করা কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগাম জাতের আলু তুলে চলতি মৌসুমের শুরুতে বাদাম চাষ করা হয়। বীজ বপন থেকে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হয় প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। রোপণের পর অন্য ফসলের ন্যায় পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। কোন প্রকার রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না। বীজ বপণ ও বাদাম উঠানোর শ্রমিক খরচ ছাড়া আর কোনো খরচ নেই। ফলন মোটামুটি ভালো হলে বিঘা প্রতি ফলন হয় প্রায় ৮ থেকে ১০ মণ বাদাম। ফলন ভালো হলে বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১২ মণ পর্যন্ত বাদাম হয়ে থাকে। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২শ’ থেকে ২ হাজার ৫’শ টাকা দরে। সব খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি লাভ থাকে প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো। যা একেবারেই ঝামেলা বিহীন এবং অত্যন্ত কম পরিশ্রমের ফসল।
বিভিন্ন চরাঞ্চল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কোথাও বাদাম তোলা হচ্ছে। আবার কোথাও বাদামের চারা পরিপক্ক হয়েছে, তোলার অপেক্ষায় রয়েছে। পরিবারের নারী ও শিশুরাও এ কাজে সহযোগিতা করছেন। নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়া জমি থেকে ফসল তুলতে পারায় বেজায় খুশি কৃষকেরা।
শুধু কাউনিয়ার চরাঞ্চলেই নয়, নীলফামারী জেলার ডোমার, ডিমলা, লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ, আদিতমারীসহ কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তার রুপালী চর এবং নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ব্যাপক হারে বাদাম চাষ হচ্ছে।
সরেজমিনে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিংগীমারী, সিন্দূর্ণা ও ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, সর্বনাশা তিস্তা নদী এখন আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। তিস্তার বুক চিরে চর জেগে ওঠায় চরাঞ্চলের ভুমিহীন মানুষগুলোর মুখে কিছুটা হাসি ফিরে এসেছে। সর্বগ্রাসী তিস্তা নদীর বুক চিরে জেগে উঠেছে হাজার হাজার একর চর। পলি মিশ্রিত এসব চরে এখন চাষাবাদ করা হচ্ছে নানা প্রজাতির ফসল। বিশেষ করে ভুট্টা, টমেটো, বাদাম, তরমুজ, আলু, বেগুন, মরিচ, পিঁয়াজ, রসুন, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া এবং পাটসহ বিভিন্ন শাকসবজি ও রবিশস্য চাষ করা হচ্ছে।
বাদাম ক্ষেত পরিচর্যারত কৃষক শফিকুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এ বছর তিনি ৪ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। এই চার বিঘা জমিতে তার খরচ হয়েছে ২২ হাজার টাকা। বাদামের গাছগুলো বেশ হৃষ্ট-পুষ্ট হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ফলন ভাল হবে। কম করে হলেও বিঘা প্রতি ৯ থেকে ১০ মন বাদাম পাওয়া যাবে। বর্তমানে বাদামের মুল্য ২২’শ থেকে ২৫’শ টাকা। তিনি জানান, অল্প পরিশ্রমে অল্প খরচে বেশ ভালো ফলন পাওয়ায় গত বারের চেয়ে এবছর দ্বিগুণ জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। তার মত আরও অনেকেই এবছর বাদাম চাষ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলে ৫’শ ৫০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
কৃষকদের দাবী, নদী তীরবর্তী এবং চরাঞ্চলের কৃষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়া হলে তারা বাদাম চাষে আরও বেশি আগ্রহী এবং পারদর্শী হবে। আর এতে করে বাদাম হয়ে উঠবে চরাঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক ফসল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।