পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইসলামের নাম নিশানা মুছে দিতে চক্রান্ত শুরু হয়েছে মন্তব্য করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ইসলামের নাম নিশানা মুছে দিতে একটি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও দেশের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতে হয়। সমাজের প্রত্যেক সেক্টর অসৎ ও দুর্নীতিবাজরা দখল করে রেখেছে। স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ ওয়ালা ঈমানদার আলেমদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, শিক্ষা-সিলেবাসে ধর্মীয় শিক্ষার সংকোচন বন্ধের প্রতিবাদে এবং ইসলাম, দেশ ও মানবতাবিরোধী মদের বিধিমালা বাতিলের দাবিতে গতকাল শুক্রবার রংপুর জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ইসলামই একমাত্র জীবনব্যবস্থা, যেখানে মানুষের জন্য শুধু কল্যাণই রয়েছে। আমরা এই কল্যাণ প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করি। দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নাগরিক মূল্যবোধকে ইসলামের আলোকে সাজিয়ে তোলাসহ আলেমদের ঐক্যবদ্ধ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের সবাইকে হিংসা-বিদ্বেষ ও পরস্ত্রীকাতরতা পরিহার করে উত্তম আখলাকের মাধ্যমে সবাইকে কাছে টানতে হবে। আসুন, আমরা কল্যাণ প্রতিষ্ঠার জন্যে সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বাজার নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রীদের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে বলেন, রক্তে কেনা ৫০ বছরের বাংলাদেশ, কিন্তু সেই দেশটা এখন অদক্ষ মন্ত্রী, ভোট চোর সরকার, দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী-আমলা, অসৎ ব্যবসায়ী আর চাঁদাবাজ-মাস্তানদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। দেশে উৎপাদিত পন্যের দাম বাড়ে সরকার দলীয় মধ্যস্বত্ত্বভোগি ও চাঁদাবাজদের দৌরাত্মে। আমদানীকৃত পণ্যের দাম বাড়ে অসৎ ব্যবসায়ীদের কারসাজীতে। প্রশাসন বখরা পেয়ে চুপ থাকে এবং জালিয়াতিদের নিরাপত্তা দেয়। মন্ত্রীর মতলববাজী বিশ্বাসে বাজার থেকে পণ্য উধাও হয়ে যায়। এই দুষ্টুচক্রের রোষাণলে পড়ে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষাবস্থা তৈরী হয়েছে। প্রতিটি জিনিষের লাগামহীন মুল্যবৃদ্ধি দেশের মানুষকে চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভোজ্যতেলের মুল্যবৃদ্ধি সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। দ্রব্যমুল্যের এই লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। ফলে দেশজুড়ে জনমত সরকারের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, নাগরিকদের অন্ন, বস্ত্র, নিরাপত্তা, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য যে সরকার, বাংলাদেশে সে সরকারই অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে আছে। ভোটবিহীন নির্বাচন করে তারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে লুটপাট চালাচ্ছে। দেশের সাধারণ নাগরিকদের কোনো অধিকার ও সম্মান নেই। সকল অধিকার ভোগ করছে ক্ষমতাসীন এবং তাদের দোসররা। স্বাধীনতার পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে, সবাই জনগণের স্বপ্ন গলা টিপে হত্যা করেছে। সবাই জনগণের সাথে অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। গণ-মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। দেশ শাসনের নামে জনগণকে জিম্মি করে রেখেছে। জনগণের সকল মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। গণতন্ত্রের নামে সর্বত্র দলীয়করণ এবং স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। গুম ও খুনের রাজত্ব কায়েম করেছে। দুর্নীতি, লুটপাট এবং সুদ ও ঘুষকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
তিনি আরও বলেন, শাসক শ্রেণীর এসব কর্মকাণ্ডের ফলে স্বাধীনতা আজ অর্থহীন হয়ে পড়েছে। গোটা সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। জনতাকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতি দেশে এক ধরনের দুর্ভিক্ষের জন্ম দিয়েছে। খাবারের জন্য মানুষ ট্রাকের পেছনে মানুষ। এভাবে দেশ এভাবে চলতে পারে না।
মুফতি ফয়জুল করিম আরও বলেন, জনগণের প্রতি দায়িত্বহীন এই সরকার মানুষের মন থেকে নাগরিকবোধ দুর করে মানুষকে মোহাচ্ছন্ন করার অশুভ চিন্তায় মদের লাইসেন্স দেয়ার আড়ালে মাদককে সহজলভ্য করেছে। অনৈতিকভাবে ক্ষমতা দখল করা এই সরকার নানা ছল চাতুরি করে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলামকে ক্রমান্বয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। ডারউনের মিথ্যাচারকে বিজ্ঞানের নামে শিক্ষার্থীদের পড়তে বাধ্য করছে। বিজ্ঞানের এই উৎকর্ষের যুগে এরা কল্পকথাকে বিজ্ঞানের মানে চালিয়ে দিচ্ছে। সামগ্রীকভাবে এই সরকার ও এদের দেশি-বিদেশি দোসররা বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে বহুমাত্রিক চক্রান্ত করে যাচ্ছে এবং দেশক একটি নৈতিকতাহীন মাদকাচ্ছন্ন, ক্ষুধাতুর দেশে পরিণত করছে। এই অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। আমরা জীবন-রক্ত দিয়ে এদেশকে স্বাধীন করেছি। আমাদের চোখের সামনে এই দেশটা ধ্বংস হয়ে যাবে-তা বরদাস্ত করা হবে না। তিনি আরও বলেন, দেশে নির্বাচন আসলেই অশুভ কিছু গোষ্ঠি মাথা চাড়া দেয়। এবারও সেই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। দেশের মানুষের প্রধান সমস্যা যখন দুমুঠো খাবার যোগাড়ের চিন্তা ও ভোটাধিকার ফিরে পাওয়া, তখন একটি গোষ্ঠি কৃত্রিমভাবে জঙ্গিবাদকে দেশের প্রধান সমস্যা আকারে হাজির করার পায়তারা করছে। জাতি এই ধান্দাবাজ অশুভ গোষ্ঠিকে চেনে। দেশের মানুষ এদের পাত্তা দেয় না। গুটি কয়েক মতলববাজী মিডিয়ার হুল্লোড় ছাড়া এদের কোন জনভিত্তি নেই। জনতা এদের প্রতিহত করবে। এদের বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসা সেবার করুণ দশা গত করোনা মহামারি দেখিয়ে দিয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও দেশে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। নিরীহ উলামায়ে কেরামসহ হাজার হাজার নাগরিককে কেবল রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে বিনাবিচারে কারান্তরীণ করে রাখা হয়েছে।
তিনি পবিত্র আল কোরআন ও ইসলামের দিক নির্দেশনা মেনে সঠিক রাস্তা বেছে জীবন গড়ে মহান সৃষ্টিকর্তার ইবাদতে মশগুল থাকতে মুসলিম উম্মাহর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
দলের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও রংপুর জেলা সেক্রেটারী মাহামুদুর রহমান ও নগর জয়েন্ট সেক্রেটারী জয়নুল আবেদীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন-প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আক্কাস আলী সরকার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান, শ্রমিক আন্দোলনের সহ-সভাপতি আমিরুজ্জামান পিয়ালসহ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।