Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

আলেমদের হেয়প্রতিপন্ন করে ইসলামকে স্তব্ধ করতে চায় গণকমিশন

ইসলামী দলের তীব্র প্রতিবাদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০২২, ৮:৪৭ পিএম

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমন্বয়ে গঠিত কথিত গণকমিশন দেশ বরেণ্য আলেম ও ধর্মীয় বক্তাদের বিরুদ্ধে দুদকে কাল্পনিক, মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করে ইসলামের প্রচার প্রসার স্তব্ধ করতে চায়। হক্কানি আলেম উলামা এবং ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদরাসাকে হেয়প্রতিপন্ন করে ইসলামের অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করা যাবে না। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত গণকমিশনের কথিত নেতাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ইসলাম প্রিয় জনতা এদের ষড়যন্ত্রের লাগাম টেনে ধরতে রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। গণকমিশন দেশের আলেম ও মাদরাসার বিরুদ্ধে দুদকে কাল্পনিক মিথ্যা অভিযোগ পেশ করার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বিবৃতি ও সভায় এসব কথা বলেন।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ঃ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি শায়খুল হাদিস আল্লামা মনসুরুল হাসান রায়পুরী, নির্বাহী সভাপতি মাওলানা আবদুর রহিম ইসলামাবাদী ও মহাসচিব শায়খুল হাদিস হাফেজ মাওলানা ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, গণকমিশন এদেশের ইসলামপ্রিয়, দেশপ্রেমিক ও শান্তিপ্রিয় উলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে দুদকে শ্বেতপত্র জমা দিয়ে এদেশের সকল শান্তিকামী মানুষের বিরুদ্ধে দুশমনি ঘোষণা করেছে। এই তথাকথিত গণকমিশন ইসলাম বিদ্বেষী। আলেম ও উলামাদের বিরুদ্ধে তাদের এই গর্হিত কাজ ও কর্মকা-কে চরমভাবে ঘৃণা ও প্রত্যাখ্যান করেছেন এদেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে বিনষ্ট করার জন্যই তারা এই শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। তারা রাষ্ট্র ও ইসলামকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চক্রান্ত করছে। তাদের এই চক্রান্ত সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দিতে হবে। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, মূলত তারাই ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী ও ইসলাম অবমাননাকারী। তারা ইসলামের অপব্যাখ্যাকারীদেরকে অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান জানান।

খেলাফত মজলিস ঃ দেশের শতাধিক আলেম ও ইসলামী বক্তাকে হেয়প্রতিপন্ন করে দুদকে মিথ্যা অভিযোগ দায়েরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে খেলাফত মজলিস। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে গৃহীত এক প্রস্তাবে দেশের আলেম উলামাদের বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা অভিযোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয় তথাকথিত গণকমিশনের এ অপতৎপরতা এদেশের উলামায়েকেরাম ও ইসলামের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। একই সাথে এটা দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টের হীন চক্রান্তেরও অংশ। তথাকথিত গণকমিশনের এ তৎপরতা ইসলামের প্রচার-প্রসারকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য একদল পরজীবী ইসলাম বিদ্বেষী চক্রের ধারাবাহিক অপচেষ্টার অংশ। ইসলামের দাওয়াত ও প্রচার প্রসারের কার্যক্রমকে স্তব্ধ করতে ইসলাম ও আলেম উলামাদের বিরুদ্ধে অপতৎপরতা তৌহিদী জনতা কোনভাবেই বরদাশত করবে না।
প্রস্তাবে দেশে, ইসলাম ও আলেম-উলামাদের বিরুদ্ধে চিহ্নিত ইসলাম বিদ্বেষী মহলের এহেন হীন চক্রান্ত ও অপতৎপরতা অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানানো হয় তা না হলে দেশ প্রেমিক জনতা ইসলাম বিদ্বেষী চক্রের বিরুদ্ধে কঠিন আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে।
আজ শুক্রবার সকালে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমীর সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দলের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল হালিম, যুগ্মমহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক মো. আবদুল জলিল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী, অ্যাডভোকেট মো. মিজানুর রহমান, প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু।

জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ ঃ জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সভাপতি আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী বলেছেন, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে কথিত ‘গণকমিশন’ কর্তৃক এক হাজার মাদরাসা ও পরশপাথরতুল্য ১১৬ জন আলেমের বিরুদ্ধে শ্বেতপত্র প্রস্তুত দেশবিরোধী ও সংবিধানবিরোধী কাজ। তিনি বলেন, দেশে আইন আদালত থাকতে তথাকথিত‘গণকমিশন’ মাদরাসা ও আলেমদের বিরুদ্ধে তদন্ত বা তালিকা তৈরির এখতিয়ার নেই। এধরণের কাজ দেশের স্বাধীনতা ও সংবিধান বিরোধী কাজ। আলেমদের তালিকা করে তাদেরকে হেয়প্রতিপন্ন করার অধিকার তাদেরকে কে দিয়েছে? তিনি ইসলাম ও দেশবিরোধী এধরণের চক্রান্ত রুখতে ওলামায়ে কেরামকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। অবিলম্বে তথাকথিত ‘গণকমিশন’এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘন করে আলেম ও মাদরাসার বিরুদ্ধে তালিকা ও তদন্ত করার দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা মুফতী হেমায়েতুল্লাহ কাসেমী, মুফতী কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, মাওলানা কামাল উদ্দিন সিরাজ, মাওলানা আব্দুল আজিজ কাসেমী, মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী, মুফতি রফিকুন্নবী হক্কানী। আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী বলেন, কথিত গণকমিশনের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ নিজের মায়ের সম্পদ কুক্ষিগত করা ও মানবতা বিরোধী অপরাধের প্রসিকিউটর থাকাকালীন অবৈধ অর্থের লোভে আসামির সাথে বোরকা পরে সাক্ষাৎ করার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় তাকে অপসারণ করা হয়েছে। এধরণের গণধিকৃত ব্যক্তিদের আলেম ও মাদরাসা নিয়ে কথা বলার অধিকার নেই। তুরিন ও মানিকদের অনৈতিক কর্মকান্ডের বিচার করতে হবে।

ইসলামী ঐক্যজোট ঃ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মাওলানা আব্দুর রকিব অ্যাডভোকেট এবং মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা আবুল করিম খাঁন আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ইসলাম, মুসলমান ও ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চায়। তারা দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সরকার যদি এখনই শক্ত হাতে তথাকথিত এই ভুঁইফোড় সংগঠনকে দমন না করে তাহলে ইসলাম প্রিয় আপামর তৌহিদী জনতা কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশবরেণ্য উলামা মাশায়েখ এবং ইসলামী আলোচকগণের এ তালিকা প্রকাশ করে চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে গণকমিশন। অবিলম্বে এসব ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঃ গণকমিশনের আলেমদের ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের তালিকার শ্বেতপত্র দুদকে প্রদানের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর শায়খুল হাদীস আল্লামা ইসমাঈল নূরপুরী ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমন্বয়ে গঠিত তথাকথিত গণকমিশন ইসলাম ও আলেম-উলামাদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে নেমেছে। দেশের জনগণ তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন ও সজাগ। সুতরাং ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার অপচেষ্টা জাতি রুখে দিবে। নেতৃদ্বয় বলেন, আলেম উলামারা ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে মানুষদের কুরআন হাদিসের বক্তব্য শুনান। আল্লাহর হুকুম ও নবীর তরীকায় জীবন পরিচালিত করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন খারাবি ও যুব সমাজকে ধ্বংসের সকলধরণের মাদকের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন ও মানুষদের সচেতন করেন। আলেম-উলামাদের কথা মানুষ অন্তর দিয়ে শুনে এবং আমল করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এ নাস্তিক্যবাদী গোষ্ঠীগুলোর আলেম উলামাদের কাজগুলো ভালো লাগে না। তারা সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবাজদের আড়াল করতে আলেম-উলামা ও ইসলামের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করছে এবং দেশে সাম্প্রদায়িক ও সম্প্রীতি বিনষ্টের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা তৈরির পাঁয়তারা করছে। তা কোনোভাবে দেশের জনগণ মেনে নিবে না প্রয়োজনে তাদের প্রতিরোধ করবে। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ঃ বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের (একাংশ) আমীরে শরীয়ত মাওলানা আবু জাফর কাশেমী ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর আমির মাওলানা মুহাম্মদ হোসাইন আকন্দ আজ এক বিবৃতিতে বলেন,সরকারের উচিৎ এই মূহুর্তে জঙ্গি অর্থায়ন ও দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিনষ্ট কারি সংগঠন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা। এরা দেশ,জাতি ধর্ম মানবতা
শিক্ষা রাজনীতি সমাজ অর্থনীতি পরিবেশ সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে । এই দেশটিকে রক্ষার স্বার্থে উক্ত দেশদ্রোহী, জনগণের দুশমন, যুদ্ধাপরাধী ঘাদানিক রাজাকারদের বিচারের আওতায় আনতে ওদের তালিকা করা সরকারেরর জন্য অপরিহার্য মনে করি।
তাদের এ শ্বেতপত্র সম্পূর্ণভাবে ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মিথ্যার তথ্যে ভরপুর । এটি পুরো দেশবাসীর সামনে দিবালোকে মতো পরিস্কার । আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তা প্রত্যাখ্যান করার জোর দাবি জানাচ্ছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ