Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরু হচ্ছে সড়ক

বাজার, বাসস্ট্যান্ড ও পার্কিংয়ের কারণে ব্যবহার করা যাচ্ছে না অর্ধেক অংশ

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

দখল, পার্কিংসহ নানা কারণে সরু হয়ে যাচ্ছে রাজধানী ও আশপাশের সড়ক। এতে সৃষ্টি হয় যানজট। দুর্ভোগ বাড়ছে যাত্রী ও নগরবাসীর। রাজধানীর সড়কগুলোর বেশিরভাগ অংশই যানবাহন চলাচলের জন্য ব্যবহার হয় না। কোন কোন সড়কের চার লেনের মধ্যে ব্যবহার হচ্ছে মাত্র এক কিংবা দুই লেন। বাকী দুইলেন থাকে সব সময়ই ব্যস্ত। কোন কোন রাস্তায় নিয়মিত দোকান বসানোর কারণে স্থায়ীভাবে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আর যেসব রাস্তাতে যানবাহন চলাচল করে সেগুলোও পুরোটা ব্যহার করা যায় না। বিশেষ করে দোকান বসানো আর গাড়ির পার্কিংয়ের কারণে সড়কের ৫০ থেকে ৭০ শতাশ জায়গা দখল হয়ে যায়।
আর রাজধানীর বাইরের মহাসড়কের আংশেও দেখা যায় একই চিত্র। আবার কোন কোন স্থানে যানজট নিরসনের জন্য ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হলেও সেই ফ্লাইওভারের নিচের অংশের সড়ক থাকে খুবই সরু। যার কারণে ফ্লাইওভারের নিচের অংশ দিয়ে যানবাহন চলতে পড়তে হয় বিপাকে। সেসব সড়কের জায়গা দখল করে ভাড়া দিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। মহাসড়কে অবৈধ পার্কিংয়ের মাধ্যমে দুই লেনের সড়ককে অর্ধেক লেনে নামিয়ে এনেছে যাত্রীবাহী লোকাল বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে সকাল থেকে প্রায় সারাদিনই বসে মাছের বাজার। সড়কের উপরে মাছের বাজার বসার করণে দূরপাল্লার বাসগুলো ঢাকা থেকে বের হতে ও প্রবেশ করতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সায়েদাবাদ ও ফ্লাইওভারের নিচ, মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের রাস্তায় গড়ে উঠেছে টেম্পু স্ট্যান্ড। আরামবাগ-ফকিরাপুল, মহাখালী, গুলিস্তান, আজিমপুর ও মিরপুরের একাধিক স্পটে সড়কের উপরই বাস টার্মিনাল করা হয়েছে। এসব এলাকার মূল সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দূরপাল্লার বাস পার্কিং করে রাখা হয়। একারণে এসব এলাকার মূল সড়কের বেশকিছু আংশ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কমলাপুরের টিটিপাড়া ও কমলাপুর অতীশ দিপঙ্কর সড়কের উপর কার্গোসহ মালামালে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার কারণে রাস্তার অর্ধেক দিয়েও যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।
গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু স্কয়ার এলাকাসহ সব জায়গায়ই দোকান ও রাস্তায় বাস দাঁড় করিয়ে রাখার কারণে ব্যবহৃত হচ্ছে না সড়কের প্রায় অর্ধেক অংশ। মিরপুর এলাকার বিভিন্নস্থানে টেম্পুস্ট্যান্ড ও ট্রাকস্ট্যান্ড করা হয়েছে। গাবতলী, কল্যাণপুর এলাকার কয়েকটি স্থান দূরপাল্লার বাসের কাউন্টার খুলে রাস্তায় রাখা হয় যাত্রীবাহী বাস। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের (বিআরটি) কারণে গেল ৫ বছর ধরে এ পথে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। যানজটের কারণে গন্তব্যে পৌঁছাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের আটকে থাকতে হচ্ছে সড়কে। এই সড়কে প্রকল্পের কাজ চলার কারণে বেশকয়েকটি লেনে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। আর একারণে গাজীপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, রংপুরসহ দূরপাল্লার যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।
ঢকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগ স্থান কাঁচপুরে ফ্লাইওভারের নিচের অংশে নিয়মিত বসে বাজার। বাজারের দোকানগুলো এমনভাবে বসানো হয়েছে যে কোনভাবেই বুঝার উপায় নেই যে এটা মহাসড়কের অংশ। দোকানগুলোতে সারাদিইনই লেগে থাকে মানুষের ভিড়। আর এ এলাকায় বিকালে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ছুটি হলে দূরপাল্লার এবং স্থানীয় যাননবাহনগুলো চলাচল ব্যাহত হয়। কোন কোন সময় ঘটে দুর্ঘটনা। এখানে ফ্লাইওভারের উত্তর পাশে রাস্তায় কোনরকমে একটি গাড়ি পারাপারের জায়গা রেখে বাকী সবটুকুই দখল হয়ে গেছে।
এই মহাসড়টি আট লেনে উন্নিতকরণ অংশের জায়গাগুলোতেও রাস্তার পাশে যানবাহন দাঁড় করে রাখার ফলে অনেক অংশ অব্যবহৃত থেকে যায়। সাইনবোর্ড এলাকায় চলছে রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। উন্নয়ন কাজ চলমান থাকার মধ্যেও রাস্তার দুই পাশ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে কার্গো কোম্পানির কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক। এতে করে মূলসড়কের অধিকাংশ অংশই ব্যবহার হচ্ছে না। একই অবস্থা সাইনবোর্ড নারায়ণগঞ্জ সড়কের অংশে। রাস্তার মোড়ে সিএন্ডজি ও বাস সারি বদ্ধভাবে পাকিং করে রাখার কারণে ব্যবহার হচ্ছে না কয়েকটি লেন।
বেসরকারি চাকরিজীবী আসাদুর রহমান বলেন, ঢাকার সব এলাকার রাস্তাতেই দোকান ও রাস্তার উপর রেখে নির্মাণ কাজ করেন অনেকে। আবার কোন কোন জায়গায় যানবাহনগুলোও রাস্তায়ই দাঁড় করে রাখা হয়। এসব করণে রাস্তার অনেক অংশ ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পরে। এজন্য দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকেই।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, রাজধানীতে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে সবাইকে তৎপর হতে হবে। রাস্তার মোড়গুলোতে গাড়ি যেন আটকা না পড়ে সে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। মোড়গুলোতে পুলিশকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। ফুটপাথগুলো পরিস্কার রাখতে হবে। তা না হলে রাস্তাগুলোতে চলাচল স্বাভাবিক হবে না।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করবো যেন সড়ক ও মহাসড়কগুলোর এক ইঞ্চি জায়গাও দখল হতে না পারে সে ব্যবস্থা করার জন্য। রমজানের সময়গুলোতে আমরা দেখেছি যে যানজট কতটা ভয়াবহ হতে পারে। সরকার যে পদক্ষেপের মাধ্যমে যানজট নিরসনে কাজ করছে সে পদক্ষেপগুলো যেন অব্যাহত রাখে। রাস্তা দখলের মাধ্যমে যেন যানবাহন চলাচলে ব্যাহত না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ