গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে রামপুরা বনশ্রীতে সাততলা বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে রিজন খান নামে এক কলেজছাত্র মারা গেছেন। আসাদগেটের আড়ংয়ের সামনে ট্রাকের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নৌবাহিনীর এক সদস্য নিহত হয়েছেন। কলাবাগানে বাস ধাক্কায় উজির আহমেদ নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় চান মিয়া নামে এক সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক আহত হয়েছেন।
রামপুরা বনশ্রীতে সাততলা বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে রিজন খান (২১) নামে এক কলেজছাত্র মারা গেছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে বনশ্রীর ই-ব্লকের ৮নম্বর রোডের একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে তার মৃত্যু হয়।
নিহত রিজনের রুমমেট মো. সম্রাট খান রাজ জানান, বনশ্রীর ওই বাসার সাতলায় তারা ৬ জন মিলে মেস করে থাকেন। রিজনের বাড়ি জয়পুরহাটের কালাই থানায়। সেখানকার একটি কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। গত দুই বছর আগে রিজন আমাদের মেসে থাকতে শুরু করেন। মাঝখানে পরীক্ষার জন্য আবার গ্রামে যান। গত ডিসেম্বর আবার ঢাকায় আসেন চাকরির জন্য। বিভিন্ন জায়গায় চাকরির সন্ধান করছিলেন। দুপুরে ছাদে কাপড় শুকাতে দিতে যান। পরে খবর পাই রিজন ছাদ থেকে পড়ে গেছেন। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তিনি আরো জানান, রিজন কয়েকদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে লাফিয়ে পড়েছেন, নাকি অসাবধানতাবসত পড়ে গেছেন তা বলতে পারছি না।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিষয়টি রামপুরা থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
রাজধানীর আসাদগেটের আড়ংয়ের সামনে সিগনাল পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি ট্রাকের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নৌবাহিনীর এক সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম হোসাইন মোস্তফা পরাগ। গত রোববার দিবাগত রাত ১২টার পর মোটরসাইকেল নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন নৌবাহিনীর অর্কেস্ট্রা দলের সদস্য পরাগ। পরাগের গ্রামের বাড়ি রাঙ্গামাটিতে। তার দুই সন্তান রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোটরসাইকেলটি ইউটার্ন নেয়ার সময় ট্রাকটি দ্রুত এ রাস্তায় প্রবেশ করে। এরপর মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে চালক ট্রাকের নিচে পড়ে যান। চাকায় পিষ্ট করার পাশাপাশি প্রায় দেড়শ ফুট পর্যন্ত তাকে টেনে নিয়ে যায় ট্রাকটি। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান পরাগ। লাশ উদ্ধার করে নেয়া হয় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ লতিফ বলেন, এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেছেন নিহতের ছোট ভাই। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ট্রাক ও ঘাতক চালককে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
এছাড়া কলাবাগানে বাস ধাক্কায় উজির আহমেদ (৭২) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় চান মিয়া নামে এক সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক আহত হয়েছেন। সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে কলাবাগান মাঠ সংলগ্ন রাস্তায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের দুজনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সকাল ৭টায় উজির আহমেদকে মৃত ঘোষণা করেন।
কলাবাগান থানার এসআই মো. সাইদুর রহমান জানান, কলাবাগান মাঠ সংলগ্ন স্টাফ কোয়ার্টারের গেটের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অটোরিকশার ভাড়া ঠিক করেছিলেন উজির। তখন পিছন থেকে সাভার পরিবহনের একটি বাস সিএনজিসহ ওই ব্যক্তিকে ধাক্কা দেয়। এতে চালক ও তিনি গুরুতর আহত হয়। পরে পথচারীরা তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি আরও জানান, ঘটনার পরপরই বাস জব্দ করা হয়েছে। তবে বাস চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে। লাশ মর্গে রাখা হয়েছে।
উজির আহমেদে ছেলে মাজেদ জানান, তাদের বাড়ির কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায়। কলাবাগান স্টাফ কোয়ার্টারে থাকেন তারা। তার বাবা পেশায় তেমন কিছুই করেন না। ভোরে তার বোন পারভীন ও তার ছেলেকে সিএনজিতে উঠিয়ে দেয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন তিনি। কোয়ার্টারের গেটের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিএনজির ভাড়া ঠিক করছিলেন। এ সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।