পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন মাত্র ৯ মাস আগে। স্ত্রীর পক্ষ্যের সব আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে পরিচয় হয়নি। নতুন যাকে আমি স্ত্রী হিসেবে নিলাম, আমাকে বুঝে উঠতে তারও সময় লাগবে। ভুল-ভ্রান্তি হলে মানুষ তো সেভাবেই দেখবে। এখানে যদি দেখা যায়, আমার স্ত্রী কোনো দোষ করে থাকে, ইয়ে করে থাকে, এটা কিন্তু আমার নলেজে ছিল না। সে কারণেই বিনাটিকেটে রেল ভ্রমণ করা যাত্রীর সঙ্গে আত্মীয়তার কথা অস্বীকার করেছেন। অথচ তার স্ত্রীর ফোনের নির্দেশে একজন টিটিইকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এই ভুল স্বীকার করে গতকাল রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলামের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। একইসঙ্গে মন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আকতার মনির নির্দেশে শফিকুলকে বরখাস্ত করায় রেলের পাকশীর বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনকে শোকজ করা হবে বলেও জানান রেলমন্ত্রী। গতকাল রোববার রেল ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ তথ্য জানান রেলমন্ত্রী।
নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, একজন টিটিইর দায়িত্বই হচ্ছে, এটা দেখা কোনো যাত্রী বিনা টিকিটে ভ্রমণ করছে কি না। যাত্রীদের সহযোগিতা করা। ডিসিপ্লিন আনার ক্ষেত্রে একজন টিটিইর এটাই দায়িত্ব। আমি এই কথাটাই বলেছি। টিটিই বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং ডিসিওকে শোকজ করা হবে।
বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়া তিনজনের সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী জানান, মাত্র ৯ মাস হলো আমার বিয়ে হয়েছে। নতুন যে স্ত্রীকে আমি গ্রহণ করেছি, সে ঢাকাতেই থাকে। তার মামাবাড়ি ও নানাবাড়ি হলো পাবনা। আমি শুনেছি তারা আমার আত্মীয়। এটা এখন ঠিক, যেটা আমিও এখন শুনেছি। এর আগে আমি জানতাম না এরা কারা এবং আমার জানার কথাও নয়। রেলমন্ত্রী বলেন, আমার স্ত্রী যদি কোনো ধরনের ভুল করে থাকে এতে আমার ইনভলবমেন্ট ছিল না। যেটা বলা হচ্ছে বা টার্গেট করা হচ্ছে- মন্ত্রী, এই কারণে... এটা ঠিক না। মেসেজটা যেভাবে গেছে এটা সঠিক হয়নি।
তিন যাত্রীকে জরিমানা করায় টিটিই বরখাস্ত হওয়ার ঘটনায় মন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আকতার মনির নির্দেশনা ছিল বলে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী সুজন বলেন, আমিও বিষয়টি শুনেছি। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করার পরও টিটিই বরখাস্তের ঘটনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, নেতিবাচক ধারণা তো অবশ্যই হবে। এটা ভুলভ্রান্তি হলে মানুষ সেভাবে দেখবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শফিকুল ইসলামকে পদোন্নতি বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া হতে পারে। তাকে পুরষ্কৃত করার কথাও ভাববে রেলপথ মন্ত্রণালয়। রেলমন্ত্রী বলেন, সংশ্লিষ্ট ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির মাধ্যমে পুরো ঘটনা বের হয়ে আসবে। টিটিই শফিকুল ইসলামের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করার নির্দেশ এবং পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে বলা হয়েছে। টিআইবির বিবৃতি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, টিআইবি দ্রুত সময়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। এখানে মন্ত্রীর কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না তা দেখার আগেই তারা এটা করেছে।
গত ৪ মে রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করায় ৩ যাত্রীকে জরিমানার ঘটনা ঘটে। পরে বৃহস্পতিবার রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর টেলিফোন নির্দেশনা পেয়ে ঈশ্বরদীর পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনের নির্দেশে টিটিই শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্ত হওয়া টিটিই মো. শফিকুল ইসলাম রেলওয়ে জংশন ঈশ্বরদীর টিটিই হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে যুক্ত।
ঘটনার পর সমালোচনার মুখে পুরো বিষয়টি তদন্তে শনিবার রেলের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে পাকশীতে আজ ওই তিন যাত্রী ও টিটিইর সঙ্গে বসার কথা রয়েছে তদন্ত কমিটির সদস্যদের।
বিনা টিকেটে ভ্রমণ করা তিন যাত্রী রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তারের নিকটাত্মীয়। শুক্রবার টিটিইকে বরখাস্ত করার খবর প্রকাশের পর নানা মহলে সমালোচনা শুরু হয়। শনিবার রেলমন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে একটি গণমাধ্যমকে বলেন, কারা তার আত্মীয় পরিচয় দিয়েছেন, তাঁদের তিনি চেনেন না। পরে এ বিষয়ে রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর মামাতো বোন ও ওই তিন যাত্রীর একজন মো. ইমরুল কায়েসের মা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘ঘটনার পর রেলমন্ত্রী আমাদের চেনেন না বলায় কষ্ট পেয়েছিলাম। পরে তিনি রেলমন্ত্রী) নিজেই ফোন দিয়ে বলেছেন, ‘আপা, আমি যা বলেছি, এতে মন খারাপ করবেন না। রাজনীতি করি অনেক কথা বলতে হয়’। অথচ রোববার সাংবাদিকদের কাছে সেই ফোনালাপ ডাহা মিথ্যা বলে দাবি করেন রেলমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে ওনার কথা হয়েছে, এই কথাগুলো ডাহা মিথ্যা। তার সঙ্গে আমার টেলিফোনে কোনো কথাই হয়নি।’ মন্ত্রী আরও বলেন, রেলের সেবায় অসন্তুষ্ট হলে সাধারণ যাত্রী ও তার পরিবার হিসেবে অভিযোগ জানাতে পারে। কিন্তু মন্ত্রীর বউ হিসেবে অভিযোগ জানাতে পারে না। এ জায়গাটায় কিছু ব্যত্যয় হয়েছে বলে আমি মনে করি। অভিযোগের বিষয়ে স্ত্রীর সাথে কোনো কথা হয়নি বলেও দাবি করেছেন মন্ত্রী। তিনি বলেছেন, রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব স্বচ্ছভাবে আমি পালনের চেষ্টা করেছি। এই ঘটনায় আমি বিব্রত।
এদিকে এ ঘটনায় রেলমন্ত্রীকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), যাত্রী কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন।
টিআইবির পক্ষ থেকে রেলমন্ত্রীর ‘স্ত্রীর তিন আত্মীয়কে’ জরিমানার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট টিকিট পরিদর্শককে (টিটিই) সাময়িক বরখাস্ত করাকে ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ ওক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি নির্লজ্জ ও নিকৃষ্টতম উদাহরণ। এখানে মূলত দুইভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে, প্রথমত রেলমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়দের বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ অর্থাৎ তারা ধরেই নিয়েছিলেন যে রেলের প্রচলিত আইন তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়! ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।