বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
রাসূলুল্লাহ (সা.) দশজন সাহাবায়ে কেরাম সম্বন্ধে তাঁদের জীবদ্দশায় সুসংবাদ দিয়েছেন যে, তাঁরা হবেন জান্নাতি। এ দশজনের মধ্যে প্রথম চারজন খলিফা (খোলাফায়ে রাশেদীন) অন্যতম। আরো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপলক্ষে কোনো কোনো শাহাদাত বা মৃত্যুবরণকারীকেও হুজুর (সা.) জান্নাতি বলে আখ্যায়িত করেছেন। এমনকি একজন নও-মুসলিম ইসলাম গ্রহণের পর একটি যুদ্ধে গিয়ে শাহাদত বরণ করেন এবং তার সংক্ষিপ্ত জীবনে (ইসলাম গ্রহণের পর) এক ওয়াক্ত নামাজ পড়ারও সময় পাননি, হুজুর (সা.) তাকেও জান্নাতি বলেছেন। এ সাহাবীর নাম ওসায়রাম ইবনে আব্দুল আশহাল। হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি প্রায়ই বলতেন, তোমরা এমন এক ব্যক্তির নাম বল, জীবনে যে কখনো এক ওয়াক্ত নামাজও পড়েনি অথচ জান্নাত লাভ করেছে? লোকেরা বলল, আপনি বলে দিন। তখন তিনি বললেন ওসায়রাম ইবনে আব্দুল আশহাল।
ওসায়রামের ঘটনা সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, আমের ইবনে সাবেত বলেন, আমি মাহমুদ ইবনে লাবীদকে জিজ্ঞাসা করলাম, ওসায়রামের ঘটনাটি কিভাবে ঘটল? জবাবে তিনি বললেন, সে ইসলামকে অস্বীকার করত কিন্তু ওহুদ যুদ্ধের সময় যখন হুজুর (সা.) জেহাদের উদ্দেশ্যে বের হন, তখন ওসায়রামের অন্তরে ইসলামের সত্যতা স্পষ্ট হয়ে উঠে এবং সে তৎক্ষণাৎ ইসলাম গ্রহণ করে এবং তরবারি হাতে নিয়ে জেহাদ করার জন্য বের হয়ে পড়ে। জেহাদরত অবস্থায় সে শাহাদাত বরণ করে। হুজুর (সা.)-এর নিকট যখন সাহাবাগণ তাঁর শাহাদতের ঘটনাটি উল্লেখ করেন, তখন তিনি বলেন, সে তাহলে জান্নাতের অন্তর্ভুক্ত । (হায়াতুল হায়ওয়ান)।
হুজুর (সা.) যাদের সম্পর্কে যা বলেছেন, তা অকাট্যরূপে সত্য। সাহাবায়ে কেরামের জীবদ্দশায় হুজুর (সা.) যাদের সম্পর্কে জান্নাতি হওয়ার সুসংবাদ দান করেছেন, তাদের ন্যায় সৌভাগ্যবান আর কে হতে পারে! কিন্তু তা সত্ত্বেও জীবদ্দশায় জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত খলিফা হজরত ফারুকে আজম (রা.)-এর অবস্থা চিন্তা করলে প্রত্যেক ঈমানদার মুসলমানের হৃদয় প্রকম্পিত না হয়ে পারে না।
বর্ণিত আছে, একবার খলিফা হজরত উমর (রা.)-কে ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখে একজন জিজ্ঞাসা করল, আমিরুল মোমেনীন! আপনি কাঁদছেন কেন? জবাবে তিনি বললেন : যদি আল্লাহর পক্ষ হতে ঘোষণা করা হয় যে, একজন লোক ব্যতীত সকল লোক জাহান্নামী হবে, তাহলে সকলের মধ্যে আমার নাম থাকাটাই স্বাভাবিক। আর যদি এইরূপ ঘোষণা আসে যে, একজন ব্যতীত সকল লোক জান্নাতে যাবে, তাহলে সে একজন তো আমিও হতে পারিÑ এ উভয় অবস্থার শিকার আমিও; উভয় অবস্থায় জাহান্নাম-ভীতিই আমার কান্নার কারণ।
জাহান্নামের ভয়ভীতির বিবরণ কোরআন ও হাদিসে নানা আঙ্গিকে যেমন বর্ণিত হয়েছে, অনুরূপভাবে জান্নাত লাভের জন্য মোমেন মুসলমানদের কি কি করা উচিত, তার বিশদ বিবরণও রয়েছে। কিন্তু কোন ব্যক্তির জীবদ্দশায় মৃত্যুর পর তার কি পরিণতি ঘটবে তা কে বলতে পারে? এরূপ প্রশ্নের জবাব একটি হাদিসে পাওয়া যায়।
বোখারী ও মুসলিমের বরাতে বলা হয়েছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন. ‘তোমাদের মধ্যে যখন কোনো ব্যক্তি মৃত্যুমুখে পতিত হয় তখন সকালে ও বিকেলে উভয় সময়ে তার (ভবিষ্যৎ গন্তব্য) স্থান তাকে দেখানো হয়। সে যদি জান্নাতি হয়ে থাকে, তাহলে তাকে জান্নাতিদের স্থান দেখানো হয়, আর যদি সে জাহান্নামী হয় তাহলে তাকে জাহান্নামীদের স্থান প্রদর্শন করা হয়। অতঃপর তাকে বলা হয়, এটি তোমার স্থান (অপেক্ষা করো)।
এ হাদিসে মৃত্যুপথযাত্রীর কথা বলা হয়েছে। যে ব্যক্তি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে, মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে, জীবিতদের কাছে তাকে প্রদর্শিত স্থান সম্পর্কে অবহিত করার ক্ষমতা কোথায়? যখন তার জান কবচ হয়ে যায় তখন তো বরজখ জগত (কবরে), তাকে প্রদর্শিত স্থানের প্রতীক্ষায় থাকতে হয়। জীবিতরা জানতেই পারে না তার স্থান জান্নাতে না জাহান্নামে।
কেউ কেউ বলে থাকেন, মৃত্যুপথযাত্রীকে তার মৃত্যুর চল্লিশ দিন পূর্বে তার প্রকৃত স্থান প্রদর্শন করা হয়। (চল্লিশ দিন কথাটি কোন হাদিসে আছে, তা প্রশ্ন) তবে একটি হাদিস হতে জানা যায় যে, মৃত্যুর ফেরেশতা প্রতিদিন প্রত্যেক লোকের অবস্থা অবগত হওয়ার জন্য দিনে পাঁচবার তার কাছে এসে থাকেন এবং পর্যবেক্ষণ করে চলে যান। যেদিন আল্লাহর পক্ষ হতে জান কবচ করার অনুমতি হয় সেদিনই জান কবচ করেন, এর আগে প্রাণ হরণ করার ক্ষমতা তার নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।