Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারাদেশের ঈদগাহ প্রস্তুত

দুই বছর পর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ও দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ঈদগাহ মাঠে ব্যাপক প্রস্তুতি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

জাতীয় ঈদগাহ মাঠে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। গত দুই বছর মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ঈদের জামাত হয়নি। এবার করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তাই জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হবে ঈদুল ফিতরের জামাত। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২ বা ৩ মে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। এছাড়াও দুই বছর পর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ও দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ঈদগাহ মাঠসহ সারাদেশের ঈদগাহ মাঠগুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। তবে আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে ঈদের প্রধান জামাত সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের সার্বিক প্রস্তুতি আজ পরিদর্শন করবেন। এ তথ্য জানিয়েছেন ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের।
জানা যায়, ঈদ জামাতের জন্য প্রতিবারের মতো এবারও পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের পৃথক ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার জাতীয় ঈদগাহ ময়দান ঘুরে দেখা গেছে, মাঠজুড়ে ৮০-৯০ জন শ্রমিক মাঠ প্রস্তুতের কাজে মগ্ন। বাঁশ দিয়ে মাঠের চারদিকে ঘেরা ও ওপরের কাঠামো তৈরি শেষ। বৃষ্টিতে যাতে পানি না পড়ে সেজন্য দেয়া হয়েছে ত্রিপল। তার নিচে দিয়ে সাদা সামিয়ানা টাঙানো হচ্ছে। চারপাশ ঘেরার কাজও শেষপর্যায়ে।
মাঠে প্রবেশের প্রধান ফটকে চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। ঈদগাহের ঠিক সামনের দিকে মিনারের সৌন্দর্য বাড়াতে কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। মাঠের আশপাশজুড়ে দেয়াল ও গাছে চলছে রঙের কাজ। মাইক, বিদ্যুৎ সংযোগ, ফ্যান ও সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কাজও চলছে। সাধারণ অজুখানার পাশাপাশি থাকবে নারীদের জন্য অজুর ব্যবস্থা। এছাড়া ভিআইপিদের অজুর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে।
জাতীয় ঈদগাহ মাঠে এবার ৯০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। এছাড়া সাড়ে পাঁচ হাজার নারীর জামাতে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকবে। জাতীয় ঈদগাহ মাঠে প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, সচিবসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ঈদ জামাতে অংশ নেবেন। এজন্য ঈদগাহ মাঠকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়। সিসিটিভি ক্যামেরা, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি পাশাপাশি থাকবে ডগ স্কোয়াড। এছাড়া মোবাইল ওয়াচ টাওয়ার, মোবাইল কমান্ড সেন্টার, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সক্রিয় থাকবে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও পুলিশের দুটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থাকবে মাঠে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ঈদগাহ মাঠ প্রস্তুতে টেন্ডার পেয়েছে পিয়ারো সরদার অ্যান্ড সন্স। এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হক। তিনি সার্বক্ষণিক মাঠের প্রস্তুতির কাজ তদারকিতে ব্যস্ত। তিনি জানিয়েছেন, গত ৫ এপ্রিল থেকে মাঠ পরিচর্যাসহ ঈদ জামাতের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি শুরু করা হয়। দৈনিক দেড় শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষদিকে। এখন দিনে শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। আশা করছি-এক-দুদিনের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মাঠের দুই লাখ ৭০ হাজারের বেশি বর্গফুট জায়গায় ত্রিপল দেয়া হয়েছে। যাতে বৃষ্টির পানি সহজে মাঠে না ঢুকে। গরমে যাতে নামাজ আদায় অসহনীয় না হয়ে ওঠে এজন্য ১০টি বড় এয়ারকুলার থাকবে। এছাড়া ৭০০টি সিলিং ফ্যান এবং এক হাজার স্ট্যান্ড ফ্যানের ব্যবস্থা রয়েছে। ৯০ হাজারের মতো মুসল্লির একসঙ্গে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। নারীদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এদিকে, দুই বছর পর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মুখরিত হবে মুসল্লিদের পদভারে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে গত দুইবছর শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়নি। ফলে শোলাকিয়া ঈদগাহের ইতিহাসে গত দুই বার পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উভয় ঈদেই ঈদের দিন মুসল্লিশূন্য থাকে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। এজন্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শামীম আলম সভায় সভাপতিত্ব করেন।
১৭৫০ সাল থেকে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সে হিসাব অনুসারে শোলাকিয়া ঈদগাহের বয়স ২শ’ ৭২ বছর। প্রতিষ্ঠার ৭৮ বছর পর ১৮২৮ সালে প্রথম বড় জামাতে এই মাঠে একসঙ্গে ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়া লাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। এই সোয়ালাখ থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়ালাখিয়া’, যা উচ্চারণ বিবর্তনে হয়েছে শোলাকিয়া। বাংলার বারো ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশাখাঁ’র ষোড়শ বংশধর হয়বতনগরের জমিদার দেওয়ান মান্নান দাঁদ খান তার মায়ের অসিয়াত মোতাবেক ১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য ৪.৩৫ একর জমি ওয়াক্ফ করেন। সেই থেকে এ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
তিনি জানান, করোনা ছড়িয়ে পড়া রোধে সারাদেশে খোলা মাঠ ও ঈদগাহে ঈদের জামাতে নিষেধাজ্ঞা ছিল। সেই অনুযায়ী গত দুই বছর ঐতিহাসিক শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত আয়োজন করা যায়নি। এবার কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকায় শোলাকিয়ায় ১৯৫তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
মাহফুজুল হক আনার দিনাজপুর থেকে জানান, দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ঈদগাহ মাঠে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদজামাতের জন্য প্রস্তুতের শেষ প্রান্তে। এই মাঠে নির্মিত বিশাল সৌন্দর্যমন্ডিত মিনারটি এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মিনার বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে। ৫১৬ ফুট দীর্ঘ সর্বোচ্চ ৬০ ফুট উচ্চতার দুটি গম্বুজসহ মোট ৫২ গম্বুজ এর পাদদেশে আসন্ন ঈদুল ফিতর নামাজ আদায়ের জন্য দিন রাত কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
২০১৫ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মাত্র ৬টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। গোর এ শহীদ ময়দানের মিনারটি ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ঈদ কার্ডে স্থান করে নিয়েছে। গুগলসহ আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে ঈদগা মাঠটি। বিভিন্ন কারণে বৃটিশ শাসনামল থেকে ঐতিহাসিক দিনাজপুরের গোর এ শহীদ বড় ময়দানটি এখন দৃষ্টিনন্দন মিনার আর মুসুল্লির অংশগ্রহণের কারণে ঐতিহাসিক ঈদগা মাঠে পরিণত হয়েছে। করোনার কারণে নামাজ আদায় বন্ধ থাকার পর এবার ঈদুল ফিতর এর নামাজ আদায় হবে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর একসাথে সর্ববৃহৎ জামাতে নামাজ আদায়ের জন্য মুসুল্লীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। চলছে মিনার সংস্কার ও রঙ করা, ধোয়ামোছা, মাঠে মাটি ভারাটসহ আনুসাঙ্গিক কাজ। মুসুল্লিদের নিরাপত্তায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। এরই মধ্যে মাঠের বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যবেক্ষণের টাওয়ার।
দিনাজপুর গোর এ শহীদ ময়দানটি ২২ একর জমির উপর অবস্থিত। এর মধ্যে ১০ একর জমি নামাজের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৯ সালের জামাতে প্রায় ৬ লক্ষ মুসুল্লি জামাত আদায় করেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জায়গা ও মুসুল্লির উপস্থিতির দিক দিয়ে শোলাকিয়াকে ছাড়িয়ে গেছে দিনাজপুরের গোর এ শহীদ ঈদগা মাঠটি। এছাড়া এই মাঠে যে মিনারটি তৈরী করা হয়েছে তা শোলাকিয়া নয় দেশের এমনটি এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ মিনার বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। মাথা উচুঁ করে দাড়িয়ে থাকার জন্য মুল গম্বুজসহ বড় বড় মিনারগুলি পাইলিংয়ের মাধ্যমে মজবুত কাঠামোয় নির্মান করা হয়েছে।
এতদঅঞ্চলের বিশাল সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়া মাঠটিতে ঘিরে অনেক বড় বড় পরিকল্পনা হয়েছিল। মূলত সেনাবাহিনীর মালিকানার মাঠটি ছিল জনগনের ব্যবহারের জন্য উম্মুক্ত। ২০১৫ সালে মাঠের পশ্চিম প্রান্তে মিনার নির্মানের স্বিদ্ধান্ত নেন দিনাজপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম। দৃষ্টি নন্দিত মিনারের পাদদেশে খোলা আকাশের নীচে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতি এবং আল্লাহ প্রদত্ত খুশির দিনের নামাজ আদায়ের স্বপ্ন দেখেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। সেনাবাহিনীর সম্মতি পেয়ে যায় ঈদগা মাঠের মিনার নির্মাণ কার্যক্রম। রাতের বেলা আলোর ঝলকানিতে মিনারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে শত শত দর্শনার্থী এখন গোর এ শহীদ মাঠমুখি হয়।
এ ব্যাপারে হুইপ ইকবালুর রহিম এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় দৃষ্টিনন্দন মিনারটি নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। অনেক বড় বড় কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিনাজপুরের ঈদগা মাঠটি স্থান করে নিতে পেরেছে। দিনাজপুরের মানুষ এজন্য কৃতজ্ঞ। ইতিহাস সৃষ্টি করে আবার ইতিহাসের পাতায় ঠাই নিয়ে থাকে। এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ এই মিনারের পাদদেশে ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা নামাজ আদায়ের মাধ্যমে ঐতিহাসিক পাতায় ঠাই করে নিয়েছে। নিরাপদ ও সহজে বিশাল জামাতে অংশগ্রহনের জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থার দাবী উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। কর্তৃপক্ষ দেখছে বিষয়টি।
জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি জানান, দেশের সর্ববৃহৎ জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের লক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষা লক্ষ লক্ষ মুসুল্লির অংশগ্রহণে দু’রাকাত নামাজে শরীক হওয়া। দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের নামাজে ইমামতি করবেন দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শামসুল হক কাসেমী। ঈদুল ফিতরের জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে বলে জেলা প্রশাসন পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক মুসুল্লির ওজুর জন্য ট্যাপ স্থাপন করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, গোর এ শহীদ বড় ময়দানের দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগা মাঠের মুসুল্লিদের অংশগ্রহণ, যানজোট সৃষ্টি না হওয়াসহ যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। মাঠের চারিদিকে ট্রাফিক ব্যবস্থার পাশাপাশি যানবাহন রাখার জন্য গ্যারেজ বা ব্যবস্থা রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ