Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাপ পঙ্কিলতা থেকে বাকি ১১ মাস মুক্ত থাকতে হবে জুমাতুল বিদায় মসজিদে মসজিদে মুসল্লির ঢল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০২২, ৫:৪০ পিএম

মাহে রমজানের শিক্ষা নিয়ে বাকি এগারো মাস অন্যায়-অবিচার, পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে সমাজে সুবিচার, ন্যায় মানুষের অধিকারের প্রতি যতœবান হতে হবে। রমজানে কতটুকু ঈমানী তাকওয়া অর্জন হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। জুমাতুল বিদা-এর খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। জুমাতুল বিদায় রাজধানীসহ সারাদেশের মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের ঢল নেমেছিল। মহান আল্লাহর নৈকট্য হাসিল এবং গুনাহ মাফসহ গোটা মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া মোনাজাত করা হয়।
ঢাকার শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি সিফাতুল্লাহ রাহমানি জুমাতুল বিদার খুৎবার বয়ানে বলেন, ঈদ অর্থ আনন্দ, খুশি। আর ফিতর অর্থ রোজা শেষ করা। তাহলে বাক্যটির অর্থ হবে রোজা শেষ করার আনন্দ।
এ আনন্দের অর্থ হলো আমরা দীর্ঘ এক মাস মহান আল্লাহ পাকের বড় একটি হুকুম ফরজ রোজা রেখে শেষ করতে পেরেছি। তাই তার শুকরিয়া স্বরূপ দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ পাকের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আল্লাহ তা‘আলাই দয়া করে রোজা রাখার শক্তি দান করেছেন। শুধু নিজ ক্ষমতাবলে রোজা শেষ করা সম্ভব হয়নি। ঈদের আনন্দ এজন্য নয় যে, এখন আর রোজা রাখতে হবে না। রোজা রাখার কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়ে গেছি, এখন আর কষ্ট হবে না।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘যখন ঈদুল ফিতরের দিন আসে, তখন আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের কাছে গৌরব করে বলেন, হে আমার ফেরেশতাগণ! বলো তো যে শ্রমিক তার কাজ পূর্ণ করে তার বিনিময় কী? ফেরেশতাগণ বলেন, প্রভু হে! তার বিনিময় ও পুরষ্কার এই যে তাকে পূর্ণভাবে প্রতিদান দেওয়া। আল্লাহ পাক বলেন, হে ফেরেশতাগণ! আমার বান্দা বান্দীগণ আরোপিত ফরজ (রোজা) আদায় করেছে, অতঃপর তাকবির ধ্বনি দিতে দিতে দোয়ার জন্য বের হয়েছে। আমার ইজ্জত, মহিমা, বুজুর্গি, উচ্চ মর্যাদা ও উচ্চাসনের শপথ! নিশ্চয় আমি তাদের দোয়া কবুল করবো। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যাও তোমরা ফিরে যাও। আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। তোমাদের গুনাহগুলোকে নেকিতে পরিবর্তন করে দিলাম। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারা তখন ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েই ফিরে যাবে। (শু‘আবুল ঈমান লিল বায়হাকি, হাদিস-৬১৮)।
খতিব বলেন, ঈদুল ফিতরের জামাত আমাদেরকে মানবতার শিক্ষা দেয়। কেননা একই কাতারে সব ধরণের মানূষ ধনী-গরিব, আমীর-ফকির একত্রে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে। এ শিক্ষাটুকু সমাজের সর্বস্তরে সব সময়ে ধরে রাখতে হবে। ঈদুল ফিতর বিশ্বভ্রাতৃত্ব জাগ্রত করে।
ঢাকার মোহাম্মদপুর লালমাটিয়া মসজিদে বায়তুল হারামের খতিব মাওলানা কাজী আবু হোরায়রা জুমার বয়ানে বলেন, মাহে রমজানের বিদায় সুর বেজে উঠেছে। মুমিন বান্দাদের হৃদয়ে এক মহা আবেগের সঞ্চালন আরম্ভ হয়েছে। আফসোস! আর একটি রমজান নসিব হবে কিনা? এবারের রমজানে গুনাহ ক্ষমা করাতে পারছি কিনা? এ রমজানে লাইলাতুল কদর নসিব হলো কিনা, নাজাতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারলাম কিনা, রমজান ও কোরআনের সুপারিশ পাওয়ার উপযোগী হতে পেরেছি কিনা? এতসব চিন্তায় মুমিন বান্দাগণ মানসিক ভাবে ব্যাকুল ও অস্থির। এ ধরনের ব্যাকুলতা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
কিন্তু আমাদের যেসব গুণাবলী রমজান থেকে অর্জন করার কথা সেগুলো আমরা অর্জন করতে পেরেছি কিনা? রমজানের শিক্ষা তথা খোদাভীতি আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে কি না, আমাদের আতœার সংশোধন কতটুকু হয়েছে, আমরা কি এ মাহে রমজানের শিক্ষা নিয়ে অন্যায় অবিচার, পাপ পঙ্কিলতা থেকে বাকি ১১ মাস মুক্ত থাকতে পারবো কি না! নাকি রমজান শেষ হয়ে যাওয়ার পর আবারো পূর্বের ন্যায় সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনে ফিরে যাবো কি-না? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে রমজান শতবার আসলেও আমাদের চরিত্র পরিবর্তন হবে না, তাতে রমজান ও কোরআন আমাদের সুপারিশকারী না হয়ে কেয়ামতের ময়দানে আসামীর কাঠগড়ায় আমাদের দাঁড় করিয়ে দিবে?
আমাদের বাংলা ভাষায় একটি কথা প্রচলিত আছে যে, ‘সব ভালো যার, শেষ ভালো তার’। আসুন, আমরা রমজানের শেষ মুহূর্তে কায়োমনোবাক্যে মহান রবের নিকট তওবাহ করি নেককার বান্দা হওয়ার তৌফিক চাই, ঈমান ও আমলের সাথে তার নিকট প্রত্যাবর্তন করার তৌফিক চাই, আমীন, ইয়া রব্বাল আলামীন।
ঢাকা উত্তরা ৩ নং সেক্টর মসজিদ আল মাগফিরাহ এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম জুমাতুল বিদা এ খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, আজ রমাজানের শেষ জুমা হতে পারে আমাদের জীবনেরও শেষ জুমা। রমজানের একটি মাস আমরা যেমন রোজা,তারাবিহ, তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল নামাজ, তিলাওয়াত, জিকির আজকার, তাসবীর তাহলীল, দরুদ শরীফ, দুআ মোনাজাতসহ বিভিন্ন নেক আমলের মধ্যে কাটিয়েছি এবং সকল প্রকার গুনাহ হতে বেচে থাকতে চেষ্টা করেছি অর্থাৎ আত্মশুদ্ধির পথে ও তাকওয়া অর্জনের পথে সাধনা করেছি, রমাজানের পরেও মৃত্যু পর্যন্ত এভাবেই আমাদেরকে দ্বীন ইসলামের পথে সুদৃঢ় থাকতে হবে ইন শা আল্লাহ। খতিব বলেন, ঈদের দিনের সুন্নাতগুলো, সদকায়ে ফিতর আদায় করা ও শাওয়াল মাসের ৬ রোজার প্রতি আমাদের বিশেষ যতœবান হওয়া উচিত। আল্লাহ তা‘আলা তৌফিক দান করুন ।
গুলিস্থানস্থ ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব আল্লামা মুহিউদ্দীন রব্বানী জুমাতুল বিদার খুৎবায় বলেন, জুমাতুল বিদা রমজানের অন্যান্য জুমার মতোই ফজিলত রাখে; এর বাড়তি কোনো ফজিলত প্রমাণিত নয়।
তবে হ্যাঁ, জুমার দিন একটি ফজিলতপূর্ণ দিবস। ইসলামে আলাদাভাবে শুক্রবারের বিভিন্ন ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু জুমাতুল বিদার কোনো কথা বলা নেই। রমজান হিসেবে এ মাসের নামকরণের কারণ হলো, রমজানের নেক আমল সব গুনাহ জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দেয়। রমজান মাসের প্রতিটি ক্ষণ মুসলিম উম্মাহর জন্য মহামূল্যবান। এই মাস প্রাপ্তিতে পরকালীন চূড়ান্ত সাফল্যের জন্য মুমিনমাত্রই অবিমিশ্রিত আমল করে। প্রথম ১০ দিনে আল্লাহর রমহতে বান্দা নিজেকে পূততায় সিক্ত করে নেয়, দ্বিতীয় ১০ দিনে ক্ষমা লাভের মাধ্যমে বান্দা নিজেকে আল্লাহর কাছে পৌঁছতে সক্ষম হয় আর শেষ ১০ দিনে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার নিশ্চয়তা লাভের চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করে। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ