বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সূরাতুল কদর। শুধু একটি রাতকে কেন্দ্র করে নাজিল হওয়া একটা সম্পূর্ণ সূরা, সূরা কদরই বলে দেয় শবে কদরের গুরুত্ব কতখানি। সেই সূরায় আল্লাহপাক ইরশাদ করেন : (১) আমি এ (কোরআন) নাজিল করেছি কদরের রাতে। (২) তুমি কি জানো, কদরের রাত কী? (৩) কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও বেশি ভালো। (৪) ফেরেশতারা ও রূহ এই রাতে তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রতিটি হুকুম নিয়ে নাজিল হয়। (৫) এ রাতটি পুরোপুরি শান্তিময় ফজরের উদয় পর্যন্ত।
আলহামদুলিল্লাহ, বলতে গেলে আমরা কেউই শবে কদরের মর্যাদা ও ফজিলত সম্পর্কে কম ওয়াকিবহাল নই। অতএব, এ রাতের ফজিলত থেকে বঞ্চিত হওয়া হবে নিতান্তই এক দুর্ভাগ্য।
শবে কদর আসলে কবে? বুখারি ও মুসলিমের হাদিস থেকে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, আমাকে শবে কদর দেখানো হয়েছিল; কিন্তু পরে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অতএব, তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে তা অনুসন্ধান করো। সে হিসেবে, আমরা বেশির ভাগই ধরে নিই যে, ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ রমজানের যেকোনো এক রাতে শবে কদর।
তবে আমরা যদি সালাফদের দিকে তাকাই, তাহলে দেখব যে, অনেকেই ব্যাখ্যা করেছেন শুধু বিজোড় রাত নয়, যেকোনো জোড় রাতেও শবে কদর হয়ে যেতে পারে! শবে কদরের হাদিসগুলো নিয়ে ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রা.)-এর ব্যাখ্যাটি সত্যিই আকর্ষণীয়।
আলহামদুলিল্লাহ, নিশ্চয়ই রমজানের শেষ দশকের কোনো এক রাত হচ্ছে শবে কদর। আর এ রাতটি হচ্ছে কোনো এক বিজোড় রাত, যেভাবে হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। আর সাধারণত এই বিজোড় রাতটি ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ রমজানের যেকোনো এক রাতে ধরে নেয়া হয়।
কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত অন্য এক হাদিস থেকে জানা যায়, ‘রমজানের (শেষ দশকের) অবশিষ্ট নবম রাতে, অবশিষ্ট সপ্তম রাতে, অবশিষ্ট পঞ্চম রাতে এবং অবশিষ্ট তৃতীয় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান করো।’ (আবু দাউদ, তিরমিযী)।
এ হাদিস থেকে আমরা দেখতে পারি যে, যদি কোনো রমজান মাস ৩০ দিনের হয়, তাহলে অবশিষ্ট নবম রাতটি হবে ২২ রমজানের রাত, অবশিষ্ট সপ্তম রাতটি হবে ২৪ রমজানের রাত, অবশিষ্ট পঞ্চম রাতটি হবে ২৬ রমজানের রাত এবং অবশিষ্ট তৃতীয় রাতটি হবে ২৮ রমজানের রাত! আর এভাবেই আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা.) শবে কদরের রাত সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন।
অন্য দিকে, যদি কোনো রমজান মাস ২৯ দিনের হয়, তাহলে উক্ত হাদিস অনুযায়ী শবে কদরের রাত পড়বে শেষ দশকের বিজোড় তারিখের রাতগুলোর যেকোনো এক রাতে। অতএব, মুমিনের উচিত, রমজানের শেষ দশ রাতের প্রতিটি রাতেই শবে কদর অনুসন্ধান করা।’
সুতরাং পুরো রমজান মাসেই শবে কদরের তালাশে থাকা উচিত। রমজানের প্রত্যেকটি রাত যদি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটানো যায়, তবে শবে কদর অবশ্যই ভাগ্যে মিলবে বলে আশা করা যায়। আর তা সম্ভব না হলে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে জাগ্রত থেকে জিকির-আজকার, নফল নামাজ ও কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদির মাধ্যমে যদি কাটানো যায়, তবে শবে কদর মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
এটা সম্ভব না হলে, অন্তত এই রাতগুলোতে যেন এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করা হয়। এতে আশা করা যায়, শবে কদরের ফজিলত থেকে মাহরুম হতে হবে না। কারণ, হাদিস মতে এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় সম্পূর্ণ রাত ইবাদত করার সমতুল্য। আর যদি বেজোড় রাতগুলো পূর্ণভাবে ইবাদতের মধ্যে অতিবাহিত করার সুযোগ না হয়, তবে অন্তত ২৭ তারিখের রাতের গুরুত্ব দেয়া এবং পুরো রাত ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকা দরকার।
যে জন্য শেষ দশ দিন ইতিকাফ সুন্নত করা হয়েছে। নবী করিম (সা.) জীবনভর রমজানে ইতিকাফ করেছেন। যেন জোড়-বিজোড় প্রতিটি রাতেই মানুষ শবে কদর তালাশ করার সুযোগ পায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।