পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ই‘তিকাফের উদ্দেশ্য হ’ল আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন করা। নিজের গোনাহ মাফ করে নেওয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হ’ল ই‘তিকাফ। তাবেঈ মাসরূক (রহ.) বলেন, ব্যক্তির জন্য করণীয় হ’ল সে এমন কোন স্থানে একাকী হবে, যেখানে সে নিজের গোনাহ স্মরণ করে তা হ’তে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। (সিলসিলা আসারুস সহীহাহ, আসার নং-৩৪৫) এক্ষেত্রে ই‘তিকাফ এক উত্তম মাধ্যম। আর এর মাধ্যমে ‘লাইলাতুল ক্বদরকে’ অন্বেষণ করা যায়।
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (স.) কবদরের রাত অন্বেষণের উদ্দেশ্য তার কাছে স্পষ্ট হবার পূর্বে রমাযানের মধ্যেই দশ দিন ই‘তিকাফ করলেন। দশদিন অতিবাহিত হবার পর তিনি তাঁবু তুলে ফেলার নির্দেশ দিলেন। অতএব তা গুটিয়ে ফেলা হ’ল। অতঃপর তিনি জানতে পারেন যে, তা শেষ দশ দিনের মধ্যে আছে। তাই তিনি পুনরায় তাঁবু খাটানোর নির্দেশ দিলেন। তাঁবু খাটানো হ’ল। এরপর তিনি লোকদের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, হে লোকসকল! আমাকে ক্বদরের রাত সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল এবং আমি তোমাদের তা জানানোর জন্য বের হয়েছিলাম। কিন্তু দু’ব্যক্তি পরস্পর ঝগড়া করতে করতে উপস্থিত হ’ল এবং তাদের সাথে ছিল শয়তান। তাই আমি তা ভুলে গেছি। অতএব তোমরা তা রামাযান মাসের শেষ দশ দিনে অন্বেষণ কর। (বুখারী হদীস-২০১৮, মুসলিম হাদীস : ১১৬৭)।
ই‘তিকাফের প্রকারভেদ : ই‘তিকাফ দুই প্রকার। যথা- সুন্নাত ও ওয়াজিব। ফিকহুস্ সুন্নাহ, (১/৫৪০ পৃষ্ঠা) ১) সুন্নাত : সুন্নাত ই‘তিকাফ হ’ল যেটা রসূল (স.), তার স্ত্রীগণ এবং ছাহাবায়ে কেরাম করেছেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘রসূল (স.) মৃত্যু পর্যন্ত রামাযান মাসের শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করেছেন। অতঃপর তার পরে তার স্ত্রীগণ ই‘তিকাফ করেছেন’। বুখারী, হাদীস-২০২৬, মুসলিম হাদীস : ১১৭২)
২) ওয়াজিব : ওয়াজিব ই‘তিকাফ হ’ল, যা ই‘তিকাফকারী নিজের ওপর আবশ্যক করে নেয়। যেমন যদি কেউ কোন ভালো কাজের উদ্দেশ্যে ই‘তিকাফ করার মানত করে তাহ’লে তার মানত পূরণ করা আবশ্যক। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ‘ওমর (রাঃ) নবী করীম (স.)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, আমি জাহেলী যুগে মসজিদুল হারামে এক রাত ই‘তিকাফ করার মানত করেছিলাম (আমি কি তা পূরণ করব?) নবী করীম (স.) বললেন, তোমার মানত পূরণ কর’। (বুখারী, ২০৩২)
ই‘তিকাফের স্থান : মসজিদেই ই‘তিকাফ করতে হবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর যতক্ষণ তোমরা ই‘তিকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা কর না’ (বাক্বারাহ : ২/১৮৭)
রসূল (স.) মসজিদে ই‘তিকাফ করতেন। তদ্রুপ তার স্ত্রীগণ মসজিদে ই‘তিকাফ করেছিলেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘মসজিদে ই‘তিকাফরত অবস্থায় নবী করীম (স.) আমার দিকে তার মাথা ঝুঁকিয়ে দিতেন আর আমি ঋতুবতী অবস্থায় তার চুল আঁচড়িয়ে দিতাম’। বুখারী হাদীস-২০২৮, মুসলিম হাদীস-২৯৭)
যে কোনো মসজিদে ই‘তিকাফ করা জায়েয। (সহীহ্ ফিকহুস্ সুন্নাহ্ পৃঃ ১৫১) কেননা আল্লাহ তা‘আলা সাধারণভাবে ‘মসজিদসমূহে’ (বাক্বারাহ : ২/১৮৭) উল্লেখ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস এবং হাসান (রা.) হ’তে বর্ণিত, হাদীসে এসেছে যে, সলাত (তথা জামা‘আত) হয়, এরূপ মসজিদ ব্যতীত ই‘তিকাফ হবে না। বায়হাক্বী : ৮৩৫৫।
মহিলাদের ই‘তিকাফের বিধান : মহিলাদের জন্য ই‘তিকাফ করা শরী‘আতসম্মত। রসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রী আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রসূলুল্লাহ (স.) রামাযান মাস শেষ দশদিন ই‘তিকাফ করবেন বলে উল্লেখ করলেন। তখন আয়েশা (রা.) তার কাছে ই‘তিকাফের অনুমতি চাইলে তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। ই‘তিকাফ করার ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য শর্ত : ক. স্বামীর অনুমতি : স্বামীর অনুমতি ব্যতীত মহিলারা ই‘তিকাফ করতে পারবে না। যেমন আয়েশা (রা.) ই‘তিকাফের জন্য রসূলুল্লাহ (স.)-এর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করছিলেন। তদ্রুপ হাফসাহ ও যায়নাব (রা.)ও অনুমতি চেয়েছিলেন।
খ. ফিৎনার আশঙ্কা না থাকা : মহিলার জন্য ই‘তিকাফ করা বৈধ হবে না, যদি তার ব্যাপারে কোন আশঙ্কা কিংবা তার কারণে অন্য কোন পুরুষ ফিৎনায় পড়ার আশঙ্কা থাকে। সব ধরনের ফিৎনা থেকে নিরাপদ হ’লে মহিলাদের ই‘তিকাফ করা বৈধ হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।