পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার থেকে কাঙ্খিত টিকিট পেতে আগের রাত থেকেই কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন যাত্রীরা। তবে সবার ভাগ্যে জোটেনি ট্রেনের টিকিট। দুর্ভোগ আর কষ্ট নিয়েই ফিরছেন অনেকেই। আবার অনেকে প্রথম দিন চেষ্টর পর টিকিট না পাওয়ায় পরের দিনের জন্য লাইনে সিরিয়াল দিয়ে বসে আছেন। প্রত্যাশিত ট্রেনের টিকিট পেতে রাজ্যের কষ্ট যেন করতে হচ্ছে যাত্রীদের।
রাজধানীর পাঁচটি স্থানে ৭৭টি কাউন্টারের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে ট্রেনের এই আগাম টিকিট। শুধু প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে একটি টিকিটের প্রত্যাশায় এই কষ্ট সহ্য করেও অপেক্ষা করেছেন তারা। সকাল আটটা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হলেও রাজধানীর নির্ধারিত পাঁচটি কাউন্টারে টিকিট প্রত্যাশীদের চাপ ছিল অনেক বেশি। গতকাল দেয়া হয় ঈদযাত্রার ২৭ এপ্রিলের টিকিট। সকাল আটটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে কাউন্টারগুলো থেকে শুরু হয় টিকিট বিক্রি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর যারা কাউন্টার থেকে টিকিট পেয়েছেন তাদের চোখে-মুখে ছিল উচ্ছ্বাস।
অগ্রিম টিকিটের ৫০ শতাংশ অনলাইনে এবং বাকি ৫০ শতাংশ কাউন্টারে পাওয়া যাচ্ছে। ট্রেনের টিকিট অনলাইনে বিক্রির কার্যক্রম পরিচালনা করছে সহজ ডটকম। গতকাল শনিবার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, শনিবার সকাল ৮টা থেকে থেকে ২৭ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। বিক্রি শুরুর প্রথম ঘণ্টায় প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে যাত্রীরা সফলতার সঙ্গে টিকিট কাটতে পারছে। তবে কাউন্টারের পাশাপাশি রেলওয়ে অনলাইনেও ৫০ শতাংশ টিকিট রেখেছে। তাই সুযোগ হাতছাড়া না করতে লাইনে দাঁড়িয়েও অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করছেন।
যাত্রীদের অভিযোগ, টিকিট পাওয়া নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। কাউন্টারে একটা মনিটর থাকলে কোন ট্রেনের কতটা, কোন বগিতে কতটা সিট আছে তা দেখা যেত। আর সেটি হলে এতো বিশৃঙ্খলা ও ভোগান্তিতে পড়তে হতো না আমাদের। অনেকেই টিকিট পেতে সেহরির পর এসে দাঁড়ান কমলাপুর স্টেশনের কাউন্টারের লাইনে। তবে প্রায় সাত ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকেই টিকিট পাননি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। অনলাইনে চেষ্টার পরেও টিকিট না মিলায় কাউন্টারগুলোতে বাধ্য হয়েই টিকিটের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। টিকিট পেলেই ক্লান্তি কিংবা কষ্টের কথা ভুলে যান তারা। তবে যারা এসেছেন টিকিট না পাওয়া পর্যন্ত তাদের মনে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
দুপুরে টিকিটপ্রত্যাশীরা স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে তর্কে জড়ান তারা। টিকিটপ্রত্যাশীরা জানান, ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পাননি। একটা কাউন্টার থেকে মাত্র ৬০টা টিকিট দেয়ার পর কীভাবে শেষ হয়ে যায়! এতো টিকেট কোথায় গেলো এসব প্রশ্ন করেন তারা।
ট্রেনের অগ্রিম টিকিট পেতে এবার নিজেদের সিরিয়াল নিজেরাই দিচ্ছেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের পঞ্চগড়, দিনাজপুর রুটের কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এমন দুর্ভোগের কথা জানা গেছে। উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনের অধিকাংশ টিকিটই দুপুর ২টার আগেই বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। ২৮ তারিখের টিকিট পেতে গতকাল লাইনেই দাঁড়িয়ে আছেন অনেকে। একজন একজন করে নাম লিস্ট করছেন তারা।
কমলাপুর রেল স্টেশনে সাজেদুল নামের এক ব্যক্তি ২৮ তারিখের পদ্মা এক্সপ্রেসের রাজশাহীর টিকিটের জন্য খাতায় নাম ও মোবাইল নাম্বার লিখে তালিকা করছেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার খাতায় পলাশ, আল-আমিন, রক্তিম, শাহাদাত, হযরত আলী, সুমনসহ প্রায় ৫০ জনের নামের তালিকা করে ফেলেন। এসময় সাজেদুল বলেন, আমাদের সবারই ২৮ তারিখের রাজশাহীর টিকিট লাগবে। তাই আমাদের নিজেদের সুবিধার জন্য তালিকা করছি। এখন থেকে ২৪ তারিখ সকাল পর্যন্ত আমরা এখানে বসে থাকবো। এখানেই ইফতার ও সাহরী করবো যাতে আমরা টিকিটটা পেতে পারি।
আরেক যাত্রী বলেন, নিজেরাই সিরিয়াল দিয়ে লাইন ঠিক রাখছি। পরেরদিন যেন মিস না হয় সেজন্য আমরা যারা বাকি আছি তারা সিরিয়াল দিচ্ছি। দিনাজপুরের টিকিটের জন্য শুক্রবার রাত ১০টায় এসেছি। সকালে টিকিট ছাড়ার পর ১২টার আগেই তা শেষ হয়ে যায়। এখন বাসায় গিয়ে আবার এলে কালও টিকিট পাবো না। তাই লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।
জানা যায়, কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দেয়া হচ্ছে পশ্চিমাঞ্চল এবং খুলনাগামী আন্তঃনগর এবং স্পেশাল ট্রেনের টিকিট। ঢাকা বিমানবন্দর কাউন্টার থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী আন্তঃনগর ট্রেন, তেজগাঁও রেলস্টেশন থেকে ময়মনসিংহ, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ সকল আন্তঃনগর ট্রেন, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে দেয়া হচ্ছে মোহনগঞ্জগামী আন্তঃনগর মোহনগঞ্জ ও হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট। এছাড়া ফুলবাড়িয়া পুরাতন রেল স্টেশন থেকে দেয়া হচ্ছে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট। টিকিট কিনতে কাউন্টারগুলোতে দেখাতে হচ্ছে যাত্রীদের এনআইডির কপি। একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে পারবেন। প্রতিটি টিকিট বিক্রয়ের জায়গায় রাখা হয়েছে মহিলা এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা কাউন্টার। কমলাপুর ছাড়াও রাজধানীর আরও ৪টি স্টেশনে ভাগ করে দেয়া হয়েছে টিকিট।
বেসরকারি চাকরিজীবী আনিস বলেন, সেহেরির পরেই এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। আমার এসি টিকিট লাগবে। যত জনের পেছনে আমার সিরিয়াল সে অনুযায়ী এসি টিকিট পাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই ৮টা বাজার পর থেকেই লাইনে দাঁড়ানো অবস্থাতেই অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করছি।
রংপুর এক্সপ্রেসের টিকিট পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জনি বলেন, শুক্রবার রাত ১০টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। সারারাত স্টেশনেই কাটিয়েছি। নির্ঘুম একটি রাত কাটিয়ে অনেক কষ্ট করে শনিবার দুপুরে টিকিট পেয়েছি। টিকিট পাওয়ার পর ভালো লাগছে। তবে এতো কষ্ট করে সবাইতো আর টিকিট কাটতে পারবে না।
সহজের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারহাত আহমেদ বলেন, সাধারণ মানুষ যেন স্বাচ্ছন্দ্যে ট্রেনের টিকিট কিনে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারে সেটিই সহজ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের মূল লক্ষ্য। আধুনিক প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহারের ফলে যুগান্তকারী সফলতা এসেছে রেলওয়ের টিকিট বিক্রি কার্যক্রম পরিচালনায়।
তিনি বলেন, রেলের ই-টিকেটিংয়ের ইতিহাসে এই প্রথম লাখো গ্রাহক সফলতার সঙ্গে ঈদের টিকিট কাটছে। এর পুরো কৃতিত্ব সহজের। ঈদের টিকিট বিক্রির প্রথমদিনেই প্রতি মিনিটে অনলাইনে প্রায় ৫ লাখ হিট বা ট্রাফিক সফলভাবে পরিচালনা করতে পেরেছে সহজ। একই সঙ্গে দেশব্যাপী ৭৭টি স্টেশনের কাউন্টারে সফলতার সঙ্গে চলছে সহজের টিকেটিং সিস্টেম।
তিনি আরও বলেন, রেলওয়ের টিকেটিং আরও সহজ করতে প্রথমবারের মতো অনলাইনে কিউ ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিৎকরণের লক্ষ্যে থ্রটলিং প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে সহজ। ফলে একদিকে যেমন লাখো হিট বা ওয়েবসাইট ট্রাফিক পর্যায়ক্রমে পরিচালনা করা গেছে, তেমনি ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেছে।
এদিকে, গতকাল শনিবার প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বগুড়া রেল স্টেশনে সাংবাদিকদের রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কিছু জটিলতা ছিল। সেসব জটিলতা কেটে গেছে। এছাড়াও প্রকল্প এলাকার সুবিধা ও অসুবিধা দেখতে এখানে এসেছি। খুব দ্রুত রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় এই প্রকল্পটিতে অর্থ ব্যয় করা হবে। পাশাপাশি পুরো প্রকল্পে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকার মতো খরচ হবে। এছাড়াও প্রকল্প পরামর্শকেরা ইতোমধ্যে কোথায় কোথায় ব্রিজ, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস নির্মাণ হবে তা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। দ্রুত রেলপথ যাচাইয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।