Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাত দিতেই ওঠে যাচ্ছে রাস্তার কার্পেটিং

শাহেদ রহমান, যশোর থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৪ এএম

যশোরের চৌগাছা উপজেলার প্রায় ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়ক সংস্কার কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কাজ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই উপজেলার সিংহঝুলী-গরীবপুর সড়কে হাত দিতেই উঠে যাচ্ছে রাস্তার কার্পেটিং। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর অভিযোগ, শুরু থেকে সড়কটিতে নিম্নমানের কাজ হচ্ছিল। বাধা উপেক্ষা করে ঠিকাদার কাজ অব্যাহত রাখেন। তবে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলছে, কার্যাদেশ অনুযায়ী ঠিকাদার কাজ করেছে। অভিযোগের পেক্ষিতে সড়কের বিটুমিন ও কার্পেটিং তুলে এনে আমাদের ল্যাবে পরীক্ষা চলছে।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে যশোরের চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলী-গরীবপুর সড়কের দেড় কিলোমিটার বা ১৫শ’ মিটার পুনঃসংস্কারের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। প্রায় ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে এ কাজটি পান যশোরের ঠিকাদার ইসরাইল ট্রেডার্স। ২০২১ সালের নভেম্বর কাজ শুরু শুরু হয়। যা শেষ হয়েছে চলতি মাসের ১৭ এপ্রিল। এলজিইউডি কার্যাদেশ অনুযায়ীই শেষ হওয়ার কথা ছিলো চলতি বছরের জুনে। গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের আওতায় সড়ক সংস্কারের কাজটি দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি, চৌগাছা)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্কার কাজ শুরুর পর থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজন একাধিকার উপজেলা প্রকৌশলী জুলহাস উদ্দিনকে জানালেও কোনো কাজ হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের পাথর, ইট, বালু, খোয়া ও ম্যাকাডম দিয়ে কাজ করছিলেন ঠিকাদার। বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ জানালেও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শেষ করেছেন ঠিকাদার। এর ফলে কাজ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন সড়কে হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে আসছে সড়কের পিচ। নিম্নমানের এই কাজ দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে, প্রতিবাদ স্বরূপ স্থানীয় লোকজন নতুন সড়কের বিভিন্ন স্থানের কিছু অংশে পাতলা পিচ তুলে ফেলেছেন এবং সড়কের সেই অংশের ছবি ও ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
সিংহঝুলী ইউনিয়ন পরিষদের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য তাসলিমা খাতুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যখন এই এই সড়কের খুড়াখুড়ির কাজ চলে, তখন আমি কাজের অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে কাজের তদারকি করতে আসি। এসে রাস্তা সংস্কারের কাজে নিম্নমানের ইট-পাথর বিটুমিন দেওয়ার সত্যতা পায়। পরে বিষয়টি নিয়ে রাস্তাটি সংস্কার কাজের ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলি। পরে তারা জানায়, এখনো কাজ শেষ হয়নি। সঠিকমানে কাজ বুঝে না পেলে আমার থেকে কাজ বুঝে নিয়েন। এখন ঠিকাদার অনিয়ম করে এই সড়কে তার পাওয়া যাচ্ছে না। এখন তার মোবাইলও বন্ধ।
সিংহঝুলী ইউনিয়নের মল্লিকবাড়ি খাঁপাড়ার বাসিন্দা রফি বিশ্বাস, লিটন মল্লিক, আসাদ খানসহ ৬ থেকে ৭ জন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার এতো টাকা খরচ করে রাস্তা করেছে, সেখানে ঠিকাদারদের দুনীর্তির কারণে সব টাকা জলে গেল। হাত দিয়ে রাস্তার কার্পেট তুলা যাচ্ছে; সেখানে ভারি যানবাহন কিভাবে যাবে। সরকার রাস্তা করতে কি কম টাকা দেয়! সব ঠিকাদার খেয়ে ফেলেছে। ঠিকাদারের জন্য সরকারের বদনাম। নিম্নমানের পাথর, ইট, বালু, খোয়া ব্যবহার করে আমাদের এই রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী করে ঠিকাদার চলে গেছে। আমরা সরকারের কাছে এতো বড় অনিয়মের বিচার চাই। এই বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা এলজিইডি উপ-সহকারী প্রকৌশলী বুলবুল আহমেদ বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। এই সড়কের দেখভালের দায়িত্বে আমি না। এই সড়কের দায়িত্বে প্রকৌশলী জুলহাস উদ্দিন তিনি অসুস্থ। অভিযোগের পাওয়ার পরে ঐ সড়কের কয়েক জায়গায় আমরা নতুন করে কার্পেটিং করে রুলার করেছি। আশা করি আর সমস্যা হবে না।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী এ, কে, এম আনিছুজ্জামান বলেন, আমরা অভিযোগটি পেয়েছি। ইতোমধ্যে ঐ সড়কটি আমি সরেজমিনে পরিদর্শন এবং স্থানীয়দের সাথে কথাও বলেছি। বিষয়টি বর্তমানে তদন্ত প্রক্রিয়াধীন। পরীক্ষার জন্য সড়কের বিটুমিন ও কার্পেটিং তুলে এনে আমাদের ল্যাবে পরীক্ষা চলছে। কার্যাদেশ অনুযায়ীই ঠিকাদার কাজ হয়েছে। তারপরেও অভিযোগে ঠিকাদার দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এই সড়কের ঠিকাদারী কাজে নিয়েজিত প্রতিষ্ঠান ইসরাইল ট্রেডার্সের পরিচালক বাচ্চুর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাত দিতেই ওঠে যাচ্ছে রাস্তার কার্পেটিং
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ