পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এখতিয়ার না থাকায় বিদেশে অর্থ পাচার মামলার ৮০ ভাগ তদন্তই করতে পারছে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ব্যক্তি পর্যায়ে দেশি-বিদেশি মুদ্রা পাচার, জালিয়াতি, প্রতারণা, শুল্ক সংক্রান্ত অপরাধ থেকে উদ্ভুত মানিলন্ডারিং অপরাধ অনুসন্ধান-তদন্তের ক্ষেত্রে সংস্থাটির হাত বাঁধা। অর্থ পাচারের ২৭টি সম্পৃক্ত অপরাধের মধ্যে দুদকের আওতায় রয়েছে মাত্র ১টি ধারা। এ ধারায় শুধু প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর ঘুষ-দুর্নীতিলব্ধ অর্থ পাচার-অপরাধ তদন্ত করছে। ফলে আমদানি-রফতানির আড়ালে সংঘটিত বৃহৎ অর্থ পাচারের অপরাধ তদন্তটিই করতে পারছে না। অর্থ পাচার অপরাধ তদন্ত প্রশ্নে সংস্থাটি এখন ঠুঁটোজগন্নাথ।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অর্থপাচারবিরোধী সংস্থা ‘গেøাবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই)র চাপের মুখে বাংলাদেশ ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন’ প্রণয়নে বাধ্য হয়। এটি বাংলাদেশের স্থানীয় কোনো আইন নয়। অর্থ পাচারের আন্তর্জাতিক আইন এবং সংজ্ঞার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রণয়ন করা হয় আইনটি। এর আগে ২০০২ সালে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে একটি আইন করা হয়েছিল। ওই আইনে ‘মানিলন্ডারিং’ বলতে অর্থ পাচার, অর্থ স্থানান্তর এবং রূপান্তরকে ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ গণ্য করা হয়। ওই আইনে বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি মানিলন্ডারিং অপরাধ তদন্ত করতেন। পরে আইনটি বাতিল করে ২০০৮ সালে ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ অধ্যাদেশ-২০০৮’ জারি করা হয়। অধ্যাদেশ অধীন অপরাধগুলোকে দুর্নীতি দমন কমিশনের ‘তফসিলভুক্ত অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করা হতো। এ অপরাধের তদন্ত ক্ষমতা ছিল দুদকের। অধ্যাদেশটির অধীন ১৭টি সম্পৃক্ত (প্রেডিকেট অফেন্স) অপরাধ থেকে উদ্ভুত সব ধরনের মানিলন্ডারিং শুধু দুদক কর্তৃক তদন্ত যোগ্য ছিল। অধ্যাদেশটি বাতিল করে ২০০৯ সালে ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০০৯’ প্রণয়ন করা হয়। পরে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০০৯ বাতিল করে ২০১২ সালে ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ অধ্যাদেশ-২০১২’ জারি করা হয়। অধ্যাদেশটিকে পরে আইনে পরিণত করা হয়। ২০১২ সালের সংশোধিত আইনে ১৭টি সম্পৃক্ত অপরাধের পরিবর্তে ২৭টি সম্পৃক্ত অপরাধ প্রতিস্থাপন করা হয়। এসব অপরাধও শুধু দুদকের তদন্ত-যোগ্য করা হয়। কিন্তু ২০১৫ সালে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২’ সংশোধন করে ২৭টি সম্পৃক্ত অপরাধের মধ্যে শুধু ‘ঘুষ-দুর্নীতি’র সম্পৃক্ত অপরাধলব্ধ’ লন্ডারিংয়ের অনুসন্ধান-তদন্ত দুদকের এখতিয়ারে রাখা হয়। এর ফলে দেশি-বিদেশি মুদ্রাপাচার, জালিয়াতি, প্রতারণা, শুল্ক সংক্রান্ত অপরাধ তদন্তের এখতিয়ার হারায়। ২০১৯ সালে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালায় ঘুষ-দুর্নীতি (যা শুধু প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য) ছাড়া ২৬টি সম্পৃক্ত অপরাধ তদন্তের দায়িত্ব পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (নারকোটিকস), পরিবেশ অধিদফতর এবং সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে দেয়া হয়।
বিগত ১৮ বছর এভাবেই মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ওপর চলে কাঁটাছেড়া। তদন্তের এখতিয়ার নিয়ে শুরু হয় টানাহেঁচড়া। নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট চলতে থাকে আইনের প্রযোগ নিয়ে। এ ফাঁকে এক ধরনের দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) উপভোগ করে পাচারকারীরা। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গেøাবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির তথ্যমতে, বাণিজ্যে কারসাজির মাধ্যমে ২০১৫ সালেই বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৬ বিলিয়ন ডলার বা ৫০ হাজার কোটি টাকা। ২০২০ সালে পাচারের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ কোটি টাকায়। করোনা মহামারির মধ্যেও গত ২ বছরে বন্ধ ছিল না অর্থ পাচার। বিপুল এই অর্থ পাচার বন্ধ এবং পাচারকৃত অর্থফেরত আনতে না পারার ব্যর্থতার জন্য আদালতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দুদককেই দায়ী করছে। এ প্রেক্ষাপটে বাণিজ্যের আড়ালে (ট্রেড বেসড) সংঘটিত অর্থ পাচার অপরাধ তদন্তের এখতিয়ার পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে দুদক। এ প্রক্রিয়ায় গত ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২’ এবং ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরাধ বিধিমালা-২০১৯ সংশোধনী চেয়ে মন্ত্রিপরিষদে চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে চলতি বছর ১৭ ফেব্রæয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি (স্মারক নং-০০.০১.০০০০.৪০৩.৯৯.০০১.২২-৭৫৫৬) লেখা হয়।
চিঠিতে মানিলন্ডারিং রোধে দুদকের ইতিপূর্বেকার অর্জন এবং বর্তমান অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরা হয়। দাবি করা হয়, বিদেশে পাচারকৃত অপরাধলব্ধ অর্থ সম্পদ আইনানুগ প্রক্রিয়ায় পুনরুদ্ধারে দুদকের সফলতা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে বেশি। ‘প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস’ এবং ‘গেøাবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স’সহ অন্যান্য সংস্থার সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রায় ৮০ শতাংশ অর্থ পাচার হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য বা আমদানি-রফতানির (ট্রেড বেসড) আড়ালে। বিদ্যমান আইনে এখতিয়ার না থাকায় এ ধরনের অর্থ পাচারের অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো অনুসন্ধান বা তদন্ত করতে পারে না। ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমদানি-রফতানির আড়ালে, হুন্ডি এবং অন্যান্য অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ এবং অর্থ পুনরুদ্ধারে দুদক আইনত ক্ষমতাপ্রাপ্ত নয়। বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী সরকারি কর্মচারী নয়- এমন নাগরিক কর্তৃক অর্থ পাচার বা দেশের বাইরে মুদ্রা পাচারের অপরাধের তদন্ত করার বিষয়ে দুদকের কোনো এখতিয়ার নেই।
দুদকের এখতিয়ার অন্তর্ভুক্ত করতে আইনের সংশোধনী চেয়ে দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়, মানিলন্ডারিং আইন, ২০১২ এর ২(ঠ), ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯-এর তফসিলে বর্ণিত অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য নির্ধারিত সংস্থার যে তালিকা দেয়া হয়েছে, তা সংশোধন করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ এর তফসিলে বর্ণিত অনুসন্ধান-তদন্তের জন্য নির্ধারিত সংস্থার তালিকায় ক্রমিক ৩,৫,৬,১৪,১৮,১৯ এবং ২৫ অন্তর্ভুক্ত করলে দুদক এ বিষয়ে এখতিয়ারবান হবে। বিধিমালা অনুসারে অপরাধগুলো হচ্ছে যথাক্রমে : দলিল দস্তাবেজ জালকরণ, প্রতারণা, জালিয়াতি, দেশি ও বিদেশি মুদ্রা পাচার, শুল্ক সংক্রান্ত অপরাধ, কর সংক্রান্ত অপরাধ, পুঁজিবাজার সংক্রান্ত (ইনসাইডার ট্রেডিং অ্যান্ড মার্কেট ম্যানিপুলেশন) থেকে উদ্ভুত মানিলন্ডারিং অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি দুদককে অন্তর্ভুক্ত করা হলে দুদক মুদ্রা পাচার অপরাধ তদন্তের জন্য এখতিয়ার সম্পন্ন হবে। তাহলে দুদক অর্থ পাচার রোধ এবং পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারে ভ‚মিকা রাখতে পারবে।
চিঠিতে দুদক ক্রিমিনাল মিসেলেনিয়াস কেস নং-১১৭৯০/২০১৭-এর বিপরীতে হাইকোর্টের একটি রায়ও উদ্ধৃত করে। যার মর্মার্থ হচ্ছে, দুদক আইন-২০০৪ অনুসারে (আইনের ১৭.গ এবং ১৭.ট ধারা) যেকোনো ধরনের অর্থ পাচারের অনুসন্ধান, তদন্ত এবং অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।
এদিকে দুদকের একটি সূত্র জানায়, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ও সম্পদ অবৈধ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে আমদানি-রফতানির অবৈধ ব্যবহারের মাধ্যমে কিংবা ইনফরমাল (নন-ব্যাংকিং) চ্যানেলে পাচার করা হয়। এটি মানিলন্ডারিং আইন ও বিধিতে উল্লেখিত সম্পৃক্ত অপরাধের ক্রমিকে ১৪ নম্বর অপরাধ (মুদ্রা পাচার) হিসেবে চিহ্নিত। এ ধরনের অপরাধ তদন্তের এখতিয়ার সিআইডি এবং এনবিআর’র। দুদক শুধু গণকর্মচারীর ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’ সংক্রান্ত অপরাধ এবং তা থেকে উদ্ভুত মানিলন্ডারিং ও বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান, তদন্ত এবং অন্যান্য আইনানুগ কার্যক্রম চালাতে পারে। কিন্তু ব্যবসার আড়ালে পাচার, হুন্ডি এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ায় পাচার এবং পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারে দুদক ক্ষমতাপ্রাপ্ত নয়। অথচ গত দেড় দশকে বিপুল অর্থ পাচার হয়ে যাওয়া এবং পাচার হওয়া অর্থ পুনঃউদ্ধার করতে না পারার ব্যর্থতার শতভাগ দায় চাপানো হচ্ছে দুদকের ঘাড়ে।
এ বিষয়ে গত ২১ নভেম্বর কমিশনের ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মতবিনিময় সভায় দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো: জহুরুল হক স্পষ্টতই বলেন, মানিলন্ডারিংয়ের কাজটি সরকার আইন করে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে গেছে। অর্থ পাচারের ২৭টি ধারার মধ্যে ২৬টি আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা (দুদক) আমাদের জুরিসডিকশনের ওপর কর্তৃত্ব দেখাব। যেটি আমাদের জুরিডিকশনে নেই, তাতে আমরা যাব না। তবে তার এ বক্তব্যের ৩ মাসের মাথায় সরকারের কাছে মানিলন্ডারিং মামলার তদন্তের এখতিয়ার সম্প্রসারণ চেয়ে চিঠি লেখা হয়।
তবে সংস্থাটির সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মো: মাঈদুল ইসলামের মতে, চিঠি চালাচালি সময়ক্ষেপণ ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ দুদক সব ধরনের অর্থ পাচারের অনুসন্ধান-তদন্ত করতে পারে-এর সপক্ষে হাইকোর্টের আদেশই রয়েছে। এ আদেশ দেয়াই হয়েছে মানিলন্ডারিং আইন সংশোধন (২০১৫)র প্রেক্ষিতে উদ্ভুত ভুল ধারণা কিংবা ভুল ব্যাখ্যা বন্ধ করার জন্য। বিধির চেয়ে বড় হচ্ছে মূল আইন। আইনের ব্যাখ্যার কর্তৃপক্ষ হচ্ছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের ব্যাখ্যা আপিল বিভাগ বাতিল করেনি। অর্থাৎ বহাল রয়েছে। দুদকের এখতিয়ার লাভের জন্য বিধি সংশোধনের কোনো প্রয়োজন নেই। তফসিলবহিভর্‚ত অর্থ পাচারের বিষয়ে দুদক কীভাবে কাজ করবে, সে বিষয়ে ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর দেয়া দুদকের অফিস আদেশও রয়েছে। এটি করা হয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে। কাজের প্রতি মমতার অভাব ঢাকতেই ক্ষমতার অভাবের অজুহাত বের করা হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।