বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মুসলমানদের পরম সৌভাগ্যের মাস রমজানে হুজুর (সা.) এর জীবনে বহু দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে। এসব দুঃখ ও বেদনাদায়ক ঘটনার পাশাপাশি কিছু কিছু আনন্দদায়ক এবং বিজয়ের ঘটনাও রয়েছে। সেগুলো স্মরণ করলে দুঃখ-কষ্ট অনেকটা লাঘব হয় এবং এজন্য আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হয়। রমজান আনন্দ ও বিজরেয়র মাস। রোজাদার যখন ইফতার করে তখন তার আনন্দের সীমা থাকে না। ইফতারের প্রতীক্ষায় সময় ব্যয় করে, কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকা সত্ত্বেও সময়ের আগে ইফতার করে না। এই অপেক্ষা ইফাতারের আনন্দ, রমজান মাসের প্রতিদিনকার ঘটনা। আল্লাহতা’য়ালার সাথে সাক্ষাৎ লাভ করার সময়ও রোজাদারের আনন্দের সীমা থাকবে না বলে হাদীসে বলা হয়েছে।
রমজান বিজয়ের মাসও বটে। বাতিলের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব ছিল এক বৈপ্লবিক ঘটনা। রসূলুল্লাহ (সা.) এর মক্কী জীবনে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা ছিল হেরা গুহায় কোরআন অবতরণের সূচনা। নবুওয়াত প্রাপ্তির ১ম বর্ষ, ৬১০ সালে ১৭ আগস্ট মতান্তরে ১৮ রমজান জুমাবার রাতে নাজিল হয়, ‘ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক। খালাকাল ইনসানা মিন আলাক। ইকরা ওরাব্বুকাল আকরামুল্লাজি আল্লামা বিল কালাম। আল্লামাল ইনসানা মা লাম ইয়ালাম।’
অর্থাৎ পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহাদয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।
মক্কী জীবনে পবিত্র কোরআন নাজিল হওয়ার সূচনার মাধ্যমে জাহেলি যুগের অবসানের সূত্রপাত, ইসলাম ধর্মের অভিযাত্রা ছিল সর্বপ্রথম মহানন্দের ঘটনা। এই পবিত্র রমজান মাসেই ঘোষণা করা হয়, বিশ্ব ধর্ম ইসলামের প্রথম বাণী। কিন্তু এই আনন্দদায়ক ঘটনার দশ বছরের মধ্যেই দুইটি দুঃখজনক ঘটনাও ঘটে যায় এই পবিত্র রমজান মাসে। ইসলামের প্রথম রমনী উম্মুল মোমেনীন হযরত খাদীজাতুল কোবরা (রা.) দশম নবুওয়াত বর্ষের ১০-১১ রমজান (৬২০ খ্রি:) এবং তার কয়েকদিন পূর্বে রসুলুল্লাহ (সা.) এর আপন চাচা আবু তালেব ইন্তেকাল করেন। পর পর এ দুটি মর্মান্তিক শোকাবহ ঘটনায় রসূলুল্লাহ (সা.) এত ভীষণভাবে মর্মাহত হন যে, তিনি বছরটিকে ‘আমূল হোজন’ বা ‘শোকের বছর’ বলে ঘোষণা করেন।
মদীনায় হিজরতের দ্বিতীয় বছর (৬২৩ খ্রি:) ১ রমজান (বুধবার) রমজান মাসের রোজা ফরজ হয়। আত্মশুদ্ধি এ সংযম সাধনার এই পবিত্র মাসটি সঙ্গে করে নিয়ে আসে আরেকটি জেহাদ বা ধর্মীয় যুদ্ধের চেতনা। একই বছর, হিজরতের এক বছর দুই মাস দশ দিন পর অর্থাৎ দ্বিতীয় হিজরি সালের ১২ সফর জেহাদ এর নির্দেশ জারি হয়। এই সময় থেকে রমজান মাসের পূর্ব পর্যন্ত একাধিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অভিযান পরিচালিত হলেও কাফের কোরেশদের সাথে বড় রকমের কোনো যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। জেহাদের হুকুম আসার প্রায় ৭ মাস পর এবং রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার প্রথম দশকের শেষ ১০ রমজান বা ৮ম দিন কিংবা দ্বিতীয় দশকেরও ২য় দিন, ১২ রমজান রসূলুল্লাহ (সা.) ৩১৩ জন সাহাবাসহ বদর যুদ্ধের জন্য মদীনা হতে যাত্রা করেন এবং ১৭ কিংবা ১৮ রমজান ইসলাম ও কাফেদের মধ্যে প্রথম বড় ধরনের প্রত্যক্ষ যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং এই বদর যুদ্ধেই মুসলমানদের মহাবিজয় সূচিত হয়। পবিত্র কালামপাকে যাকে ‘ইয়াওমুল ফোরকান’ হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী বলে ঘোষণা করা হয়েছে। রমজানের সিয়াম সাধনার সাথে সাথে এই মাস বাতিল ও অসত্যের বিরুদ্ধে জিহাদের শিক্ষাও বহন করে এনেছে।
হিজরতের পর রসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর দশ বছরের মদানী জীবনে মোট ৯টি রমজান মাস পেয়েছিলেন। বদর যুদ্ধের পর বাকি বছরগুলোতে রমজান মাসে আরো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার মধ্যে সর্ববৃহৎ বৈপ্লবিক ঘটনা হচ্ছে মক্কা বিজয়। হিজরি ৮ম সালের (জানুয়ারি ৬৩০ খ্রি.) ১০ রমজান রসূলুল্লাহ (সা.) মক্কা বিজয়ের উদ্দেশ্যে মদীনা হতে যাত্রা করেন। তিনি বিজয়ী বেশে কোন দিন মক্কায় প্রবেশ করেন সে সর্ম্পকে মতভেদ রয়েছে। ১৮ কিংবা ২০ রমজান মক্কা বিজিত হয়। এরপর তিনি ১০ দিন, ১৫ দিন অথবা ১৯ দিন মক্কায় অবস্থান করেন। মক্কা বিজয়ের পর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা এবং রমজান মাসের বাকি দিনগুলোতে বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সমাধা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।