Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ড্রেজারে বসানে হচ্ছে ভেসেল ট্রাকিং সিস্টেম

নদী খননে আনতে স্বচ্ছতা

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

নদী খনন বা ড্রেজিং, তীর রক্ষা ও সংরক্ষণ কিংবা নদীর নাব্যতা ফেরানোর নামে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা যাচ্ছে নদীর পেটেই। এতে কোনো সুফল আসছে না। আর নাব্যতা নিশ্চিত করতে হলে ড্রেজিং কার্যক্রম চালু হবে। এজন্য এই কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ড্রেজার এবং টাগ (টেনে নিয়ে চলা) আনুসাঙ্গিক নৌযানে ভেসেল ট্রাকিং সিস্টেম যুক্ত করা হচ্ছে।
পানি প্রবাহ পুনরুদ্ধার, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ও বন্যা ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে জিনাই, ঘাটট, বংশী ও নাগদা নদী খননের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নদী খননে স্বচ্ছতা আনতে ড্রেজারে বসানে হচ্ছে ভেসেল ট্রাকিং সিস্টেম। নৌ-পথ ত্রুটিমুক্ত রাখতে হলে যেটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো নৌ-পথের নাব্যতা সংরক্ষণ করা। বছরব্যাপী নির্বিঘ্নে বাধাহীনভাবে নৌযানের চলাচল নিশ্চিত করার জন্য নৌপথ নাব্য দূর করা হবে। ল্যান্ডিং স্টেশন ও সমস্যা সংকুলানে নদী তীর রক্ষা করা হবে।
বড় ব্যয়ে ৫৩টি নৌপথে ক্যাপিটাল ড্রেজিংসহ নদী খনন নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রকল্প চলমান আছে। তারপরও এত বড় অঙ্কের জিওবি টাকায় নদী খনন প্রকল্প গ্রহণ করা ঠিক হবে না। বৈদেশিক সহায়তায় ছোট ছোট প্রকল্প করা যেতে পারে। ড্রেজিং কাজের জন্য বিআইডব্লিউটিএর প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারি অনুদান বেশি কয়েকটি প্রকল্পে দেয়া হয়েছে। দু’টি প্রকল্পে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি দেয়া হয়েছে। তাই বৈদেশিক অনুদানে প্রকল্পগুলো গ্রহণ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ড্রেজিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মতিন ইনকিলাবকে বলেন, নদী খনন বা ড্রেজিং, তীর রক্ষা ও সংরক্ষণ কিংবা নদীর নাব্যতা ফেরানোর নামে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা যাচ্ছে নদীর পেটেই। নাব্যতা নিশ্চিত করতে হলে নিশ্চিত করতে ড্রেজিং কার্যক্রম। এই কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নৌযানে ভেসেল ট্রাকিং সিস্টেম যুক্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে ১৫টি নৌযানে ভেসেল ট্রাকিং সিস্টেম যুক্ত করা হয়েছে। এটি পরীক্ষামূলক করা হচ্ছে। এর ফলে এসব নৌযানের গতিবিধি, উৎপাদন বা কর্মক্ষমতা, ফুয়েল কনজামশনসহ বিভিন্নবিষয় মনিটরিং করা হবে। এটি সফল হলে ড্রেজিং বিভাগের প্রায় তিন শতাধিক নৌযানে এ যন্ত্র বসানো হবে।
নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ইনবিকলাবকে বলেন, দেশের ১০ হাজার কিলোমিটার নৌ-পথ খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যেই ৭ হাজার কিলোমিটার খনন কাজ শেষ হয়েছে। ড্রেজিং কাজ সবসময় মনিটিরং করা প্রয়োজন। পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ কারণে ড্রেজিং কাজে জড়িত সকল প্রকার জলযান কিভাবে কোথায় পরিচালনা হচ্ছে তা নিশ্চিত করা হবে। সকল নৌযানে ভেসেল ট্রাকিং সিস্টেম সংযুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ড্রেজিং বিভাগে পরীক্ষামূলক কাযর্ক্রম শুরু করেছে। নদ-নদী ড্রেজিং কার্যক্রম সরকার গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এ কারণে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ড্রেজার বেইজ স্থাপন করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, ড্রেজিং বিভাগের নৌযানে যুক্ত করা সিস্টেমগুলোর পেছনে ব্যয় হয়েছে চার লাখ টাকা। আর প্রতি বছর এগুলো নাবায়নে প্রতিটির জন্য ব্যয় হবে ১৫শ’ টাকা করে। তবে ড্রেজিং বিভাগের সবগুলো নৌযানে ভ্যাসেল ট্রাকিং সিস্টেম চালু করা হলে এগুলোর নাবায়ন ব্যয় আরো কমে আসবে। নদী খনন বা ড্রেজিং, তীর রক্ষা ও সংরক্ষণ কিংবা নদীর নাব্যতা ফেরানোর নামে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা যাচ্ছে নদীর পেটেই। তাতে কোনো সুফল আসছে না। এমন অবস্থায় আঞ্চলিক ঝিনাই, ঘাঘট, বংশী ও নাগদা নদীর নাব্যতা ফেরাতে ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা খরচে খনন প্রকল্পের প্রস্তাব গত ২ বছর ধরে ঘুরছে পরিকল্পনা কমিশনে। এ দিকে নদী দখলসহ বিভিন্ন কারণে দিন দিন নদী পথের পরিমাণ কমছে। জরুরিভিত্তিতে নৌপথগুলো ড্রেজিং করা না হলে অচিরেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। নাব্যতা বাড়ানোর জন্য ড্রেজিং কার্যক্রম নিয়েও তা নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়াতে জটিলতা বাড়ছে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ২৯ জুন অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বিআইডব্লিউটিএ। প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নীলফামারী হতে গাইবান্ধা পর্যন্ত বিস্তৃত ঘাঘট নদী, জামালপুর হতে ঢাকার কেরাণীগঞ্জ পর্যন্ত প্রবাহিত বংশী নদী, শেরপুর হতে টাঙ্গাইল পর্যন্ত বিস্তৃত জিনাই নদী এবং গাজীপুর জেলার নাগদা নদীতে দীর্ঘদিন ধরে কোনো খনন কাজ না হওয়ায় পলি পড়েছে। বর্ষাকালে নাব্যতা থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ কমে গিয়ে নৌ চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। এজন্য এগুলোর নাব্যতা উন্নয়নের জন্য ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং আইডব্লিউএমের মাধ্যমে সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়।
নদী রক্ষা কমিশনের তথ্যানুযায়ী, নদীমাতৃক বাংলাদেশে ছোট-বড় ও মাঝারি আকারের প্রায় ৭৫০ নদী রয়েছে। কিন্তু ড্রেজিং ও অপরিকল্পিত ইন্টারভেনশনের কারণে দেশের প্রায় ২৩০টি নদী এখন মৃত। বর্তমানে নদীগুলো পলিউশন, সিলটেশন, তীর দখল, ব্লকেজ ইত্যাদির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার বেশির ভাগ শিল্প নদীর তীর ঘেঁষে স্থাপন করায় প্রতিদিন ১০০ টন শিল্পবর্জ্য নদীতে পড়ছে। বাংলাদেশে সর্বমোট ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌ-যোগাযোগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে আট হাজার কিলোমিটার নৌপথ ছিল ১৯৬৩ সালে, যা বাংলাদেশের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। ১৯৮৯ সালে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডিএইচভি অ্যাসোসিয়েট যখন ব্যাপক জরিপ করে, তখন নৌপথের নাব্যতা কমে ৬ হাজার কিলোমিটার হয়। এই নদীগুলোর দ্বারা প্রতি বছর বন্যায় ৫০ লাখ কিউসেক পানি এবং ২৪০ কোটি টন পলি পরিবাহিত হয়। যা সমগ্র বিশ্বের পরিবাহিত পলির সাড়ে ১৮ শতাংশ। ফলে নদীগুলো ক্রমান্বয়ে মৃত হয়ে পড়েছে। নাব্য নৌপথের পরিমাণও হ্রাস পাচ্ছে। তবে ১৯৮৯ সালের পর আর কোনো জরিপ না পাওয়ায় বর্তমানে নদীর দৈর্ঘ্যরে কোনো দাফতরিক হিসাব নেই। পানি প্রবাহ হ্রাস, ক্রস-বাউন্ডারি প্রবাহ হ্রাস, পলি প্রবাহ বৃদ্ধি এবং জোয়ারের প্রবাহ কম ইত্যাদি কারণে নদীগুলো নাব্যতা হারাচ্ছে।
বাংলাদেশ ইন্টেগ্রেটেড ট্রান্সপোর্ট সেক্টর স্টাডি-১৯৯৮ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাব্য নৌপথের পরিমাণ বর্ষাকালে ছয় হাজার কিলোমিটার এবং শুকনো মৌসুমে ৩ হাজার ৮০০ কিলোমিটার, যা স্বাধীনতার পূর্বে ছিল যথাক্রমে ৮ হাজার ৪০০ কিলোমিটার এবং ৫ হাজার ২০০ কিলোমিটার। এই প্রবাহ কমে যাওয়ায় মাছের উৎপাদন এবং সেচ কার্যক্রম ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।
গত ২০১৯ সালে আগস্টে প্রথম পিইসির তথ্যানুযায়ী, ঝিনাই, ঘাঘট, বংশী ও নাগদা নদীর নাব্যতা ফেরাতে চার হাজার ৭৮৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প প্রস্তাব করে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। এখানে ঝিনাই ও বংশী নদীর জন্য খনন ব্যয় ২ হাজার ৩৪২ কোটি ৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা, ঘাঘট নদীর জন্য ১ হাজার ৩৩০ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও নাগদা নদীর জন্য ১ হাজার ১১৪ কোটি ১৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক ড্রেজিং কাজ বাস্তবায়নের জন্য সরকারি অনুদানে বেশ কয়েকটি প্রকল্প এরই মধ্যে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ৪ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই ও পুনর্ভরা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প ও ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীর রক্ষা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ। পরে ব্যয় কমিয়ে ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকায় প্রস্তাব দেয়া হয় আবারো। কুড়িগ্রামের ধরলা, ব্রহ্মপুত্র নদীর খনন কাজ এখনো শুরু হয়নি।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ২ হাজার ১৬৪ দশমিক ৫০ কিলোমিটার হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ, ৫০৫ দশমিক ৫ লাখ বর্গমিটার প্রকৌশল জরিপ, ২ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষতিপূরণ, ১৪০ লাখ ঘনমিটার মাটির ডাইক নির্মাণ, ৩২৯ দশমিক ৫০ লাখ ঘন মিটার বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজার দ্বারা খনন, ৬ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ এবং ৪৮০ জনমাস পরামর্শক সেবা।
অভ্যন্তরীণ নৌপথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং (প্রথম ২৪টি রুটে) কার্যক্রম ১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১২ সালে অনুমোদন দেয় হয়। এটি ২০১৮ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিআইডব্লিউটিএ। এখনো চলছে প্রকল্পটি। নদীগুলোর নাব্য আনতে ৫৩টি রুটের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ২৪টি রুটে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে।
রুটগুলো হচ্ছে, ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম-পথ, চাঁদপুর-হিজলা-বরিশাল নৌপথ, গাশিয়াখালী বরিশাল-কালীগঞ্জ-চাঁদপুর-আরিচা নৌপথ, ভৈরববাজার-লিপসা-চটক-সিলেট নৌপথ, গাজলাজর-মোহনগঞ্জ নৌপথ, লোয়ারগা-দুলোভপুর নৌপথ, চিটরি-নবীনগর-কুটিবাজার নৌপথ নরসিংদী-কাটিয়াদী নৌপথ, নরসিংদী- মরিচাকান্দি-সেলিমগঞ্জ-বাঞ্ছারামপুর-হোমনা নৌপথ, দাউদকান্দি-হোমনা-রামকৃষ্ণপুর পথ, চাঁদপুর-ইচলি-ফরিদগঞ্জ নৌপথ, বরিশাল-ঝালকাঠি-পাথরঘাটা নৌপথ, খুলনা-গাজিরহাট-মানিকদা নৌপথ, নন্দীবাজার-মাদারীপুর নৌপথ, দিলালপুর- গৌরাদিঘার-চামড়াঘাট-নীলকিয়াটপাড়া, নেত্রকোনা নৌপথ, মনুমুখ-মৌলভীবাজার নৌপথ, মিরপুর-সাভার নৌপথ, শ্রীপুর-ভোলা খেয়াঘাট-গঙ্গাপুর-ভোলা নৌপথ, চৌকিঘাটা-কালীগঞ্জ পথ, পটুয়াখালী-মীর্জাগঞ্জ নৌপথ, হোসনাবাদ-টরকী-ফাঁসিতলা নৌপথ, দালারচর-বালিয়াকান্দি-বোয়ালমারী-কাশিয়ানি নৌপথ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ