Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ঢাকায় সড়কের ওপর টার্মিনাল

আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নীরব দর্শক সড়কে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যাপারে সজাগ থাকা দরকার : অধ্যাপক ড. শামসুল হক রাজধানীর বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতায় তীব্র যানজট হচ্ছে : মেয়র আতিকুল ইসলাম রাস্

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০২ এএম

রাজধানীর সব সড়কই যেন টার্মিনাল। টিকাটুলির মোড়, সায়েদাবাদ ফ্লাইওভারের নিচ, আরামবাগ-ফকিরাপুল, মহাখালী, গুলিস্তান, উত্তরার আবদুল্লাহপুর, আজিমপুর ও মিরপুরের একাধিক স্পটে সড়কের উপরই বাস টার্মিনাল করা হয়েছে। এসব এলাকার মূল সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দূরপাল্লার বাস পার্কিং করে রাখা হয়। টিকেট কেটে যাত্রীদের বাসে উঠতে হয়। এই সব এলাকায় রাস্তায় টার্মিনাল করায় রাজধানীতে চলাচল করা যানবাহন প্রতিদিন যানজটে পড়ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন নগরবাসী। নগরের প্রধান সড়কে বাস টার্মিনাল অথচ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নীরব দর্শক! খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিমাসে মোটা টাকা পেয়ে থাকেন। পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার গোবিন্দ চন্দ্র পাল ইনকিলাবকে বলেন, রাস্তায় বা রাস্তার পাশে গাড়ি পাকিং করা নিষিদ্ধ। তারপরও যদি কেউ করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। রাস্তায় যারা গাড়ি পাকিং করে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। তবে অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকায় গাড়ির পার্কিংয়ের ব্যাপারে খুব সজাগ থাকা দরকার। যানজট নিরসনে সরকার, পুলিশ ও পরিবহন মালিক সংশ্লিষ্টদের আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। যান চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে সবাইকে বেশি তৎপর হতে হবে। রাস্তার মোড়গুলোতে গাড়ি যেন আটকা না পড়ে সে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। মোড়গুলোতে পুলিশকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। ফুটপাথগুলো পরিস্কার রাখতে হবে। তা না হলে রাস্তাগুলোতে চলাচল স্বাভাবিক হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে।

বাস টার্মিনালের মতো রাজধানীর প্রায় অর্ধশত স্পটে মূল সড়কের যেখানে সেখানে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, লেগুনা সিএনজি ও ব্যক্তিগত গাড়ি দিনের পর দিন রাখা হচ্ছে। আর বছরের পর বছর ধরেই রাজধানীর সড়কগুলোতে সিটি বাসসহ দূরপাল্লার বাসের টার্মিনাল বানিয়ে ফেলেছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। এভাবে নগরীর মূল সড়কে বাসের টার্মিনাল বানিয়ে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। সারা রাজধানীর প্রতিটি রাস্তায়ই রয়েছে এমন বাসের টার্মিনাল। দিনে রাতে এসব সড়কে গণপরিবহন রাখার কারণে সৃষ্টি হয় যানজট। এতে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। মূল রাস্তার ওপরেই বাসের সারি বদ্ধ লাইন করে টিকেট বিক্রি করা হয়। এখান থেকেই যাত্রীদের বাসে ওঠতে হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীতে প্রবেশ করে দূরপাল্লার বাস। আবার এখান থেকেই গন্ত্যব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এসব বাস। সায়েদাবাদ, গাবতলী আর মহাখালী বাদেও পুরো শহরই হয়ে উঠেছে টার্মিনাল। আর যানজটে আটকে যায় শহর। প্রতিদিনের এই দৃশ্য যেন নগরবাসীর চিরচেনা। সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীর আরামবাগ, টিটিপাড়া, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, ফকিরাপুল, রাজারবাগ, মালিবাগ, কমলাপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী, মহাখালী, বনানী, এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে ছেড়ে যায় সারা দেশের বিভিন্ন স্থানের বাস। দূরপাল্লার বাসগুলোর কাউন্টার রয়েছে এসব স্থানে। আরামবাগ, ফকিরাপুল, মালিবাগ, কমলাপুর, মতিঝিল, টিটিপাড়া হয়ে উঠেছে বাস টার্মিনাল।

মহাখালী বাস টার্মিনালের বাইরে থেকেও চলাচল করে বিভিন্ন পরিবহনের বাস। এজন্য এই রুট এখন যাত্রীদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। টার্মিনালের ভেতরে বাস রাখা হয়েছে সারিবদ্ধভাবে। কোথাও কোথাও ফাঁকা থাকলেও টার্মিনালের পাশের রাস্তায় রাখা হয়েছে অনেক বাস। এসব জায়গায় সবসময়ই থাকে বাসের দীর্ঘ লাইন। ফলে মহাখালী থেকে নাবিস্কো মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে লেগে থাকে যানজট। টার্মিনালের ভেতরে ময়লা-আবর্জনার, কাদা পানি সয়লাব, ভাসমান হকারদের দেখা যায়। এই টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন বৃহত্তর ঢাকা-ময়মনসিংহসহ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ উত্তরাঞ্চলের ২০ জেলার হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। এক হাজারেরও বেশি বাস-মিনিবাস নিয়ন্ত্রণ হয় এখান থেকে। এ ছাড়া বিভিন্ন রুটে যাতায়াতকারী বাসগুলো মহাখালী থেকে তেজগাঁওয়ের তিব্বত পর্যন্ত সড়ক ও লিংক রোডগুলোতে রেখে রাস্তা দখল করে রাখা হয়। এতে রাজধানীর তিব্বত থেকে বনানী পর্যন্ত সড়কে সৃষ্টি হয় যানজট।

বিজয়নগর, মানিক নগরের সড়কেই মূলত দূরপাল্লার বাসগুলোর কাউন্টার এবং যাত্রী উঠানামাও সড়কেই হয়। কলাবাগান ও পান্থপথেও রয়েছে প্রায় সবগুলো দূরপাল্লার বাসের কাউন্টার। সেখান থেকে উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণ বঙ্গ, পূর্ব-পশ্চিম সব অঞ্চলেই যাওয়া আসা করে বাসগুলো। সন্ধ্যা থেকেই সড়কে জট তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখে দীর্ঘাকায় বাসগুলো। এদিকে গাবতলী বাস টার্মিনাল থাকলেও উত্তরের বাসগুলোর কাউন্টার শুরু হয় কলাবাগান থেকে। শ্যামলী, কল্যাণপুরে তো দিন রাতই চলে দূর পাল্লার বাস। উত্তরা, আব্দুল্লাহপুরে রয়েছে শত শত বাসের কাউন্টার। এজন্য এখানে দিনে ও রাতে বাস রাখা হয় যেমন তেমনভাবে। আর এই পথ দিন রাত সবসময় ব্যবহার করে দূরপাল্লার বাসগুলো। আজিমপুরে মূল সড়কের ওপরই বাস রাখা হয়। দিনের পর দিন এখানে বাসের লাইন দাঁড় করিয়ে রাখার কারণে ভোগান্তি হয় স্থানীয় ও বাইরে থেকে আসা লোকজনের। এর ফলে মূল সড়কের যানজট গিয়ে শেষ হয় সরু রাস্তায়।

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের ভেতরের কাউন্টারগুলো ও বাসের ধারণক্ষমতা রাখার বাইরে। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বাস এখান থেকেই ছেড়ে যায়। তাই একসাথে সব বাস এখানে আসলে সব বাস টার্মিনালে জায়গা নেয়া সম্ভবনা। তাই অনেক বাস বাইরের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়নি। আবার কোন কোন পরিবহন তাদের নিজস্ব কাউন্টার তৈরি করে রাস্তা থেকেই বাস ছাড়া হয়। সায়েদাবাদ টার্মিনালের ভেতরে বেশকিছু স্থানে ময়লা পানিতে ভরা। রয়েছে ভ্রম্যমাণ দোকান। পূর্ব পাশের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ময়লা আবর্জনা খেলে। এখানেই রাখা হয় সিডিএম পরিবহনের বাসগুলো।

গুলিস্তান পার্ক ও বঙ্গভবনের মাঝামাঝি সড়কটিতে বাস দাঁড় করে রাখা হয় দীর্ঘদিন ধরেই। এ সড়কে ইলিশ, দিঘিরপার, মুন্সীগঞ্জের কয়েকটি পরিবহনের ছয়টি বাস লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। পাশের অংশ দিয়ে চলাচল করছে বাকি যানবাহন। এখানে কোনো বাসস্ট্যান্ড নয়। তবুও সড়ক ও গুলিস্তান পার্কের পাশের জায়গায় নিয়মিতই ঢাকা-মাওয়া রুটের এই বাসগুলো পার্ক করা থাকে। গুলিস্তানের ফ্লাইওভারের পাশের সড়কে রয়েছে বেশকয়েকটি বাসের কাউন্টার এখানে মাইর্কিং করে বাসে যাত্রী ওঠানো হয়। এখানে বিআরটিসি বাসের বয়েকটি কাইন্টার রয়েছে। এসব বাস কুমিল্লা, নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে।

এছাড়াও গুলিস্তান সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে থেকে বেশকিছু এলাকার বাসের কাউন্টার রয়েছে। মেঘালয় নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার বাস এখানে দাঁড়িয়ে থাকে। এখানে এসব বাসের কাউন্টার থাকলেও একেকটা কোম্পানির অনেকগুলো বাস একসাথে থামিয়ে রাখার কারণে রাস্তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। আর ফ্লাইওভারের দক্ষিণ পাশের নবাবপুর রোড থেকে ছাড়া হয় মাওয়া, দোহার এলাকার বাস। ফুলবাড়িয়া এলাকার মূল রাস্তা থেকে ছাড়া হয় গাজীপুর, শ্রীপুর এলাকায় যাওয়ার কয়েকটি কোম্পানির বাস। ডিএসসিসির নগর ভবনের দক্ষিণ পাশের ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তায় গাজীপুর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া যাওয়ার বিভিন্ন কোম্পানির বাসের সারির কারণে এই রোডে অন্যকোন যানবাহন কার্যত চলতেই পারে না। আর রাতের বেলায় এই রাস্তায় পণ্য পরিবহনের ট্রাক ও কাভার্টভ্যানের কারণে চলাচল করা দুরহ হয়ে পড়ে। এখানে দাঁড় করিয়ে ট্রাকে ও কাভার্টভ্যানে পণ্য ওঠানামা করানো হয়।

বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ পাশে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের পাশের রাস্তায় নারায়ণগঞ্জের স্বদেশ, দোয়েল, শীতল, বন্ধনসহ কয়েকটি পরিবহনের কাউন্টার। এখান থেকে নিয়মিত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে এসব বাস যাতায়াত করে। এই বাসগুলোর ঢাকার শেষ গন্তব্য এখানেই। তাই এই স্থানে রাস্তার উপরই বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো হয়।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এসব সড়কে চলাচলের জন্য ঢাকায় নিবন্ধন রয়েছে ২০ ধরনের ১৮ লাখ ১০ হাজার ২৭৫টি মোটরযানের। এর মধ্যে ব্যক্তিগত যাত্রিবাহী গাড়ি রয়েছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৫০৯টি। মোটরসাইকেল আছে ৯ লাখ ১৪ হাজার ৮১৭টি। আর ঢাকা থেকে বাস-মিনিবাসের নিবন্ধন নেয়া হয়েছে ৪৭ হাজার ৪৮৪টি। এর মধ্যে বাস ৩৭ হাজার ৫৯৩টি এবং মিনিবাস ৯ হাজার ৮৯১টি, যা নিবন্ধিত মোট মোরযানের মাত্র ২ দশমিক ৬২ শতাংশ। তবে নিয়মিত সড়কে চলছে ৮-৯ হাজার বাস-মিনিবাস। মোট নিবন্ধন নেয়া পরিবহণের তুলনায় তা মাত্র দশমিক ৪৯ শতাংশ। অথচ সংশ্লিষ্টরা শহরের যানজটের জন্য অন্যতম দায়ী হিসাবে বিবেচনা করেন এই গণপরিবহণকে।

রাজধানীর দীর্ঘদিনের যানজটের জটিল সমস্যা থেকে সমাধানের পথ খুঁজতে রাজধানীর ভেতরের তিনটি বাস টার্মিনাল সরানোর ব্যাপারে একমত সবাই। এ ছাড়া ট্রাক টার্মিনালের জন্য পৃথক স্থান নির্ধারণ করা হয়। পরিবহন মালিক-শ্রমিক, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টরা চান উদ্যোগটির দ্রুত বাস্তবায়ন। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, টার্মিনাল ও ডিপো নির্মাণের জন্য চিহ্নিত এলাকাগুলোকে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) পরিবহন অবকাঠামো হিসেবে চিহ্নিত করতে রাজউককে চিঠি দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর প্রেজেন্টেশন হয়। এর তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর উপকণ্ঠের ৯টি এলাকার ১৬টি স্থানে জরিপ শেষে ১০টিকে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল এবং লোকাল বাস ও ট্রাকের ডিপো নির্মাণের জন্য চিহ্নিত করা হয়। গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী থেকে বাস টার্মিনাল সরিয়ে কেরানীগঞ্জের বাঘাইর, সাভারের হেমায়েতপুর ও বিরুলিয়া, নারায়ণগঞ্জের ভুলতা, কাঁচপুর সেতু ও কাঁচপুরের মদনপুরে ৬টি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এতে ১২ হাজার ৫১১ কোটি ৭৭ লাখ টাকার ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।

অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাঁচপুর উত্তর (কাঁচপুর ব্রিজ সংলগ্ন স্থান) ও কাঁচপুর দক্ষিণে (মদনপুর) টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে পাঁচটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে। কাঁচপুর উত্তরে আন্তঃজেলা টার্মিনালের সঙ্গে লোকাল বাসের ডিপোও হবে। এ ছাড়া পূর্বাঞ্চলের কাঞ্চন এবং কেরানীগঞ্জের আটিবাজারের ভাওয়াল এলাকায় লোকাল বাস ডিপো হবে। আশুলিয়ার বাইপাইল ও গাজীপুরে হবে বাস ও ট্রাকের ডিপো। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এমন প্রস্তাব করা হয়েছে।

গাবতলী টার্মিনালে ২২ একর, মহাখালীতে ৯ একর এবং সায়েদাবাদে ১০ একর জমি রয়েছে। কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন বাঘাইরে ৩৩ দশমিক ৬৩ একর জমি অধিগ্রহণ করে নতুন টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। হেমায়েতপুরে ৪৫ একর, বিরুলিয়ার ভাটুলিয়ায় ২৬ দশমিক ৭ একর, কাঁচপুর দক্ষিণে ২৬ দশমিক ৭ একর, কাঁচপুর উত্তরে ১৫ দশমিক ৫ একর এবং ভুলতায় ২৪ দশমিক ২ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে টার্মিনাল নির্মাণে। ছয়টি আন্তঃনগর টার্মিনাল নির্মাণে যে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে তার বড় অংশই যাবে জমির জন্য। আট হাজার ২০২ কোটি লাগবে জমি অধিগ্রহণে।

হেমায়েতপুরে টার্মিনাল নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ১২৩ কোটি টাকা। জমির জন্য লাগবে দুই হাজার ১০২ কোটি টাকা। টার্মিনাল নির্মাণে ৫৬৪ কোটি এবং জমি ভরাটে ২৫৯ কোটি টাকা লাগবে। কাঁচপুর উত্তরে টার্মিনাল ও ডিপো নির্মাণে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে এক হাজার ২৭ কোটি টাকা। জমির জন্যই লাগবে ৭৮৯ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে ট্রাক টার্মিনাল বাইপাইল এবং গাজীপুর স্থানান্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ জন্য বাইপাইলে ৩৭ দশমিক ১ একর এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে ১১ দশমিক ৭ একর জমি লাগবে।

বাস চালক আজিজুল বলেন, আমাদের বাসের কাউন্টার রাস্তার কাছাকাছি থাকার কারণে বাসও রাস্তায় দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠাতে হয়। রাজধানীতে যতোগুলো বাস চলাচল করে সব বাস টার্মিনালে রাখা যায় না। টার্মিনালের ভিতরে জায়গা নেই। আর অনেক বাস তো সিরিয়ালই পায়না। বেসরকারি চাকরিজীবী নজরুল বলেন, আরামবাগ এলাকায় সন্ধ্যার পর থেকে আসাই যায়না। রাস্তার দুই পাশেই দূরপাল্লার নামীদামি কোম্পানির বাসের লাইন দাঁড়িয়ে থাকে। এখান থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, বেনাপোল, যশোর, কলকাতাসহ অনেক এলাকার বাস ছাড়া হয়।

রাজধানীর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে গত মঙ্গলবার মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, রাজধানীর তীব্র যানজটের জন্য বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী। এই যানজট থেকে রেহাই পেতে হলে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সম্মিলিতভাবে কাজ করার বিকল্প নেই। আমরা নিজেরাই অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনা গড়ে তোলার মাধ্যমে তীব্র যানজট সৃষ্টি করেছি। অতএব পরিকল্পিতভাবে আমাদের কাজ করতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করলে সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।



 

Show all comments
  • গিয়াস উদ্দিন ১৪ এপ্রিল, ২০২২, ৬:২৯ এএম says : 0
    ঢাকায় গাড়ির পার্কিংয়ের ব্যাপারে খুব সজাগ থাকা দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • Imam Hossain ১৪ এপ্রিল, ২০২২, ৮:৫২ এএম says : 0
    রাজধানীর গাবতলী, শ‌্যামলী, কল‌্যাণপুর, কমলাপুর ও মহাখালীসহ একাধিক জায়াগায় প্রধান সড়কের ওপর প্রতিদিন পার্কিং করা হচ্ছে দূরপাল্লার বাস। টার্মিনাল বাদ দিয়ে প্রধান সড়কের অর্ধেকেরও বেশি পথ দূরপাল্লার বাসের দখলে চলে যায়। এতে সড়ক ও বাস টার্মিনালের পার্থক‌্য বোঝা কঠিন হয়ে পড়ছে। এর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Mofazzal Hossain ১৪ এপ্রিল, ২০২২, ৮:৫৩ এএম says : 0
    এই চিত্র প্রতিদিনের। কেউ কিছু বলার নেই। এসব গাড়ির কারণে সোজা পথে অনেক ছোট বাহন আসতে পারে না। তাই সুযোগ বুঝে উল্টোপথে আসে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও রিকশা। এর ফলে ছোট বাহনগুলোর মধ‌্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রায় আহত হচ্ছেন আরোহীরা।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Mofazzal Hossain ১৪ এপ্রিল, ২০২২, ৮:৫৬ এএম says : 0
    স্কুল খোলার পর থেকে যানজট আগের চেয়ে বেশি শুরু হয়েছে। আর রোজার মাস, ঢাকার বাইরে থেকে অনেক লোক আসে। এসব কারণেই যানজট।”
    Total Reply(0) Reply
  • Umme Halima Alo ১৪ এপ্রিল, ২০২২, ৮:৫৭ এএম says : 0
    গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর সবখানেই মানুষের উপস্থিতি বেশি
    Total Reply(0) Reply
  • Billal Hossain ১৪ এপ্রিল, ২০২২, ৮:৫৭ এএম says : 0
    স্কুল-কলেজ খুলেছে পুরোদমে। শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবকদের নিয়ে বেরুচ্ছে। ফলে পরিবহনের সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। যেটা গত সপ্তাহেও ছিল না।"
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ