Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ওয়াদা পালনের গুরুত্ব-৩

তানভীর সাকী ভূঁইয়া | প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০২ এএম

একজন খোদাভীরু মুমিনের কাছে সর্বাপেক্ষা উত্তম সম্পদ হলো আমানতদারিতা ও ওয়াদা রক্ষা করা। মুমিনকে আমানতদারিতা ও ওয়াদা রক্ষায় সদা সচেষ্ট থাকতে হবে। কেননা স্বয়ং মহান আল্লাহ তাআলা ওয়াদা বর খেলাফকারীর বিরুদ্ধে রোজ হাশরে বাদী হবেন। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি বিচার দিবসে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হব। ১. যে ব্যক্তি অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে, ২. যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করে এবং ৩. যে ব্যক্তি কোনো কর্মচারী নিয়োগ করে তার কাছ থেকে পূর্ণ কাজ আদায় করে, কিন্তু তার পারিশ্রমিক প্রদান করে না’ (সহিহ বুখারি)।

কিন্তু বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র (বাংলাদেশ) হিসেবে যেখানে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মাহে রমজান চলছে সাধারণ জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকার কথা, সেখানে বিতাড়িত ইবলিসের ওয়াসওয়াসাপুষ্ট কিছু অসাধু, হারাম মুনাফাখোর ব্যবসায়ীর কারণে তা ধরাছোঁয়ার বাইরে। দৈনন্দিন জীবন ধারণে সাধারণ মানুষের নাভিঃশ্বাস উঠছে। অথচ বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)ও ব্যবসা করেছেন।

বরং তিনি ব্যাপক পরিসরে তৎকালীন শাম দেশ তথা বর্তমান সিরিয়াতেও ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। সৎ, আমানতদার, পরহেজগার, মুত্তাকি ব্যবসায়ী সম্পর্কে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সত্যবাদী ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে।’ (তিরমিজি)।

তাই আমাদের সমাজের ব্যবসায়ীদের অত্যাবশকীয় কর্তব্য হলো, হার হালতে আল্লাহকে স্মরণ রাখা ও হালাল পদ্ধতিতে আয়-উপার্জনের চেষ্টা করা। কেননা, ব্যবসা যখন আমানতদারি, বিশ্বস্ততা ও সততার সঙ্গে জনকল্যাণে করা হবে, তখন এটি নেক আমলে পরিণত হবে, পরকালে নাজাতের জরিয়ায় রূপান্তরিত হবে। ওয়াদা ভঙ্গ করা, ওজনে কম দেয়া, পুরনো পণ্য নতুন বলে, নতুন মোড়কে বাজারজাত করা, বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা, পণ্যে ভেজাল মেশানোসহ তামাম গর্হিত কাজই প্রতারণার শামিল।

আর দুনিয়ায় যে ওয়াদা ভঙ্গ করে, প্রতারণার আশ্রয় নেয়, কিয়ামতের দিন তাকে বিশেষ পতাকা দিয়ে চিহ্নিত করা হবে। ইবনে উমার (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন আল্লাহ তাআলা কিয়ামত দিবসে পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সবাইকে একত্র করবেন, তখন প্রত্যেক প্রতারকের জন্য পৃথক পতাকা উড্ডীন করা হবে এবং বলা হবে যে, এটি অমুকের ছেলে অমুকের প্রতারণার চিহ্ন। (সহিহ মুসলিম)।

আজকের সমাজব্যবস্থায় সত্যিকারের আমানতদারির বড়ই অভাব। সর্বত্র শুধু বিশৃঙ্খলা, প্রতারণা, অন্যায়, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন ও অশ্লীলতার বিষবাষ্প। গোটা মুসলিম জাহানও দ্বিধা-বিভক্ত ও গীবত-শিকায়েতে লিপ্ত। তাই মুসলিম জাহানের সোনালি যুগের পতন ও বিশ্ব নেতৃত্বের পিছিয়ে থাকার কারণ অনুধাবন করে মুসলিম মিল্লাতকে আমানতদারি সম্পর্কে ও নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে আরো যত্নবান হতে হবে।
এর তাগিদ দিয়ে মুসলিম মিল্লাতের রাহনুমা আল্লামা ইকবাল তাঁর বিখ্যাত কবিতা তুলুয়ে ইসলামে বলেন, ‘সবক ফের পড়হ সাদাকাত কা আদালাত কা শুযাআত কা, লিয়া যায়ে গা তুঝ ছে কাম ফের দুনিয়া কি ইমামত কা।’ ‘তোমরা যদি গ্রহণ করতে পার সততা, বিশ্বস্ততা এবং বীরত্বের পাঠ, তোমাদের থেকেই নেয়া হবে দুনিয়ার নেতৃত্বের কাজ’। অর্থাৎ আজ যদি মুসলমানদের মধ্যে এই তিনটি গুণ তথা সততা, বিশ্বস্ততা ও খোদা প্রদত্ত বীরত্ব (যা লাভ করেছিলেন শের এ খোদা হযরত আলী (রা.) ইহুদিদের কামূস দুর্গ বিজয়ে, খায়বারের যুদ্ধে) থাকে, তবে সমগ্র পৃথিবীর নেতৃত্ব দিতে তারা সক্ষম হবে।



 

Show all comments
  • হুমায়ূন কবির ১৪ এপ্রিল, ২০২২, ৬:৩০ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদেরকে ওয়াদা পালনে সচেষ্ঠ থাকার তৌফিক দান করুক
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন