Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হঠাৎ ধর্মঘটে যাত্রী ভোগান্তি

ট্রেনের ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি ২৩ এপ্রিল থেকে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

সকাল বেলা হঠাৎ ধর্মঘটের ডাক দেয় রেলওয়ে রানিং স্টাফ কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। পূর্ব নির্ধারিত মাইলেজ বা বেতন-ভাতা বাতিল করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় সংগঠনটি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। টিকিটের টাকা ফেরত পেলেও দীর্ঘ শিডিউল বিপর্যয়ে সারাদেশে বিভিন্ন গন্তব্যমুখী সাধারণ যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়েন। এরমধ্যে শিশু-বৃদ্ধসহ কয়েকজন অসুস্থ হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে।

রেলওয়ের রানিং স্টাফ (চালক-গার্ড) ও শ্রমিক-কর্মচারী অঘোষিত ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টার অচলাবস্থা কাটিয়ে গতকাল দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের দুই নম্বর প্লাটফর্ম থেকে পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনটি সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। এরপর একে একে অন্য রুটের ট্রেনগুলোও প্লাটফর্ম ছাড়ে।
গতকাল বুধবার ভোর ৬টা থেকে হঠাৎ ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেন রেলওয়ের কর্মীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রেলওয়ের রানিং স্টাফ ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি মেনে নেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেন ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। এদিকে শিডিউল বিপর্যয়ে পড়া ১৮টি ট্রেনের টিকিটের টাকা যাত্রীদের ফেরত দিচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, রেলের চাকা সচল রাখতে একজন চালককে দিনে গড়ে ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা ট্রেন চালাতে হয়। এজন্য তাদের বাড়তি মজুরি ও পেনশনে ৭৫ শতাংশ টাকা দেয়া হয়। বেতনের বাইরেও যত মাইল দায়িত্ব পালন করেন এবং অতিরিক্ত সময় কাজ করেন, তার জন্য নির্দিষ্ট হারে ভাতা পেয়ে থাকেন তারা। এটা রেলে মাইলেজ ভাতা হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি রেলের অতিরিক্ত এ সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতেক্ষুব্ধ হন রেল চালকরা। এর আগে আট ঘণ্টার বেশি কাজ না করার ঘোষণাও দেন। এ কারণে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কাও দেখা দেয়। সার্বক্ষণিক হিসেবে আখ্যায়িত করে ব্রিটিশ আমল থেকে চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালন করা চালক, গার্ড ও টিকিট চেকারদের বিশেষ আর্থিক সুবিধা দেয়া হয়। অতিরিক্ত সময়ে প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে দেয়া হয় মূল বেতনের একদিনের সমপরিমাণ টাকা। পেনশনের সঙ্গে দেয়া হয় বাড়তি ৭৫ শতাংশ টাকা।

এসব চালক ও গার্ডদের বেতন-ভাতা দেয়া হতো রেলওয়ের স্বতন্ত্র কাঠামোয়। কিন্তু গত বছরের ৩ ডিসেম্বর সফটওয়্যারের মাধ্যমে রেলের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের (রানিং স্টাফ) আগের সেই মাইলেজ সুবিধা থাকছে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই সিদ্ধান্ত জানার পর মাইলেজ সুবিধা চালুর দাবিতে নিয়মিত বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা করেন চালক, গার্ড (ট্রেন পরিচালক) ও টিকিট চেকারেরা।

যাত্রীরা বলেন, ধর্মঘট করতে চাইলে আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে করতো। কিন্তু কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এভাবে ট্রেন বন্ধ করে আমাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়। ট্রেন যেন মিস না হয় তার জন্য সারারাত না ঘুমিয়ে এসেছি। সেহরি খেয়েই রওয়ানা দিয়েছি। কিন্তু এসে দেখি ট্রেন চলবে না। তাদের দাবিদাওয়া থাকলে তারা মিটিয়ে নেবে। কিন্তু ভুক্তভোগী আমরা কেন হব। রমজান মাসে রোজা থেকে এ ধরনের হয়রানি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মো. মাসুদ সারওয়ার বলেন, কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে দিনে ৭২টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়। কিন্তু ধর্মঘট থাকায় সকাল ৬টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ১৮টি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। এসব ট্রেনের টিকিটের টাকা যাত্রীদের ফেরত দেয়া হচ্ছে। একইভাবে দেশের অন্য স্টেশনগুলোতেও টিকিটের টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে।

এদিকে, আসন্ন ঈদুল ফিতরে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রার সুবিধার্থে ৬ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এবার বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ২৩ এপ্রিল থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলরত সব আন্তঃনগর ট্রেনের ডে-অফ বাতিল করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রেল ভবনের সম্মেলন কক্ষে এসব তথ্য জানান রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, রেলের রানিং স্টাফদের যে অসুবিধা ছিল, তা নিয়ে আমি অর্থ মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করেছি। সেখান থেকে আমাকে জানানো হয়েছে, যে প্রজ্ঞাপনের কারণে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, সেটা আমরা বাতিল করে দেবো। অর্থ মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে আমি ঘোষণা দিচ্ছি যে, গত ১০ এপ্রিল জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হলো।

রেলমন্ত্রী বলেন, ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ৩ মে ধরে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে। ২৭ এপ্রিলের টিকিট দেয়া হবে ২৩ এপ্রিল। এভাবে ২৮ এপ্রিলের টিকিট ২৪ এপ্রিল, ২৯ এপ্রিলের টিকিট ২৫ এপ্রিল, ৩০ এপ্রিলের টিকিট ২৬ এপ্রিল এবং ১ মের টিকিট ২৭ এপ্রিল বিক্রি করা হবে। ঈদ যাত্রার বিশেষ ট্রেনগুলোর মধ্যে চাঁদপুর স্পেশাল ১ ও ২ ট্রেন চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে ঈদের আগে ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে এবং ঈদের পর ৪-৮ মে পর্যন্ত চলবে। আর দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল ট্রেন ঢাকাণ্ডদেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে এবং ঈদের পর ৪-৮ মে পর্যন্ত চলবে। খুলনা স্পেশাল (মৈত্রী রেক দিয়ে) খুলনা-ঢাকাণ্ডখুলনা রুটে ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত চলবে। শোলাকিয়া স্পেশাল-১ ট্রেন ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরববাজার রুটে এবং শোলাকিয়া স্পেশাল-২ ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে শুধুমাত্র ঈদের দিন চলবে।

ঈদুল ফিতরের দিন কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে না জানিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, ঈদের ৭ দিন আগে অর্থাৎ আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত কোনো আন্তঃনগর ট্রেনের অফ-ডে থাকবে না এবং ঈদের পরে যথারীতি অফ-ডে কার্যকর করা হবে। অফ-ডে প্রত্যাহারের ফলে অতিরিক্ত ৯২টি আন্তঃনগর ট্রেন বিশেষ ট্রিপ হিসেবে পরিচালিত হবে।

মন্ত্রী বলেন, টিকিট যার, ভ্রমণ তার এই শ্লোগান বাস্তবায়নে যাত্রীদের এনআইডি/জন্ম সনদ ফটোকপি কাউন্টারে প্রদর্শনপূর্বক টিকিট ক্রয় করতে হবে। ইন্টারনেটে ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি সকাল ৮টায় শুরু হবে। এছাড়া কাউন্টারে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এক নাগাড়ে অগ্রিম টিকিট বিক্রয় চলবে। প্রতিটি টিকিট বিক্রয় কেন্দ্রে একটি করে মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কাউন্টার থাকবে। প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনে শুধুমাত্র মহিলা ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য একটি করে স্বতন্ত্র কোচ সংযোজন করা হবে। একজন যাত্রী একসাথে সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট ক্রয় করতে পারবেন। কিন্তু ঈদের অগ্রিম বিক্রিত টিকিট ফেরত নেওয়া হবে না। স্পেশাল ট্রেনের কোনো টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাবে না। শুধুমাত্র স্টেশন কাউন্টারে বিক্রি করা হবে।

এদিকে অগ্রিম টিকিট ক্রয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রী চাপ কমাতে রাজধানীর ৫টি কেন্দ্র থেকে নির্দিষ্ট রুটের টিকিট বিক্রি করা হবে। এগুলোর মধ্যে কমলাপুর থেকে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী ও খুলনাগামী স্পেশাল ট্রেনের টিকিট; বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট; তেজগাঁও থেকে ময়মনসিংহ, জামালপুরগামী ও দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ সকল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট; ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জগামী মোহন ও হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট এবং ফুলবাড়িয়া (পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন) থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রেনের টিকিট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ