Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ইউরোপের সাথে তিক্ততার প্রকাশ ইউক্রেনের

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০২২, ৪:৪৭ পিএম

অতীতের ‘পুতিন-প্রীতি’-র কারণে কিয়েভ সফরের ইচ্ছা পূরণ হলো না জার্মান প্রেসিডেন্টের৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার সাথে বার্লিনের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রতিক্রিয়ায় কিয়েভ সফরে তার জার্মান প্রতিপক্ষের প্রচেষ্টাকে বাধা দিয়েছেন। এর মাধ্যমে ইউরোপের সাথে ইউক্রেনের তিক্ত সম্পর্কের অনেকটাই প্রকাশ পেয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান দুই চালিকা শক্তি হচ্ছে জার্মানী ও ফ্রান্স। দুই দেশই রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং ইউক্রেন ইস্যুতে খুব একটা শক্ত অবস্থানে আসতে রাজি হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার সাথে কোয়াড চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের উপরে ক্ষুব্ধ ফ্রান্স। তবে নির্বাচন উপলক্ষে ইউক্রেন ইস্যুতে তারা খুব একটা মুখ খোলেনি। যদিও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ইউক্রেন অভিযান শুরুর পর পুতিনের সাথে বেশ কয়েকবার ফোনালাপ করেছেন এবং রাশিয়ার উপরে বেশি নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে আলোচনরা পথ খোলা রাখতে বলেছেন। তাদের আরেক সদস্য দেশ হাঙ্গেরি তো সরাসরি জোটের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে রাশিয়ার সাথে বাণিজ্য অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

মঙ্গলবার রাশিয়ার তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রবর্তনের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রচেষ্টাকে থামানোর অভিযোগে জার্মানির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। সম্প্রতি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যুদ্ধ সত্ত্বেও কিয়েভ সফর করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কির পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ ঝুঁকি সত্ত্বেও তার এই প্রতীকী সফর নজর কেড়েছে৷ কিন্তু জার্মানি থেকে কোনো শীর্ষ নেতা এখনো কিয়েভে যান নি৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার সেই উদ্যোগ নিলেও কিয়েভের নেতৃত্ব নাকি তাকে সেখানে চায় না৷ সোমবার পোল্যান্ড সফরের সময়ে এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেন খোদ জার্মান প্রেসিডেন্ট৷ উল্লেখ্য, পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে দুদা সম্প্রতি পোল্যান্ড, জার্মানি ও বাল্টিক অঞ্চলের তিন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের যৌথ কিয়েভ সফরের উদ্যোগ নিচ্ছিলেন৷ সেই উদ্যোগে শামিল হওয়া সম্ভব নয় বলে জানালেন জার্মান প্রেসিডেন্ট৷

প্রথমে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তারপর প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্টাইনমায়ার বরাবর রাশিয়া তথা সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার আন্তরিক চেষ্টা চালিয়ে গেছেন বলে সাম্প্রতিক যুদ্ধের সময় থেকেই ইউক্রেনে তার প্রতি ক্ষোভ দেখা যাচ্ছিল৷ জার্মানিতে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রিই মেলনিক খোলাখুলি জার্মান প্রেসিডেন্টের ‘পুতিন-প্রীতি’ সম্পর্কে মন্তব্য করার পর স্টাইনমায়ার নিজে এমন মনোভাব ব্যাখ্যা করে আত্মসমালোচনা করেন৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও কিয়েভের ক্ষোভ প্রশমন হয় নি বলে মনে করা হচ্ছে৷

এমনই প্রেক্ষাপটে ইউক্রেন সরাসরি জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসকে কিয়েভে আমন্ত্রণ জানিয়েছে৷ বিশেষ করে আরও জোরালো অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের বিষয়ে জেলেনস্কি তার সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনা করতে চান৷ শলৎস অবশ্য এ ক্ষেত্রে একক পদক্ষেপের বদলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সমন্বয়ের পক্ষে সওয়াল করেছেন৷ মেলনিক বলেন, প্রতীকী সফরের তুলনায় ইউক্রেনকে অবিলম্বে আরও সহায়তা করতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বেশি জরুরি৷ ইউরোপের একাধিক দেশ যেভাবে একক উদ্যোগে ইউক্রেনকে ভারি অস্ত্র পাঠাচ্ছে, জার্মানিরও তেমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন৷

ইউক্রেন সংকটকে ঘিরে ঘরে-বাইরে প্রবল চাপের মুখে রয়েছে জার্মানি৷ অতীতের নীতি ঝেড়ে ফেলে বার্লিন যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র ও সামরিক সহায়তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেও রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানির প্রশ্নে এখনো ‘সাহসি’ পদক্ষেপ নিতে নারাজ শলৎসের সরকার৷ সরকারের মতে, নিজস্ব অর্থনৈতিক স্বার্থে রাশিয়া থেকে পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস আমদানি অবিলম্বে বন্ধ করতে অক্ষম জার্মানি৷ ‘আত্মরক্ষামূলক’ সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করলেও যুদ্ধ ইউক্রেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে ‘আক্রমণাত্মক’ অস্ত্র সরবরাহ করতে রাজি হয়নি শলৎস সরকার৷ যার ফলে ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপের মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ