Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনার সুস্বাদু পার্শে মাছের রেণু নিধন চক্রটি ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে

প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোস্তফা শফিক, কয়রা থেকে ঃ খুলনা অঞ্চলের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু মাছের মধ্যে পার্শে মাছ অন্যতম। কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় এ মাছের রেণু নিধন চক্র আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। রাশ মেলার পরপরই চোরা রেণু শিকারীরা বন বিভাগের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে বনে ঢুকে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, প্রতিবছর শীত মৌসুমের প্রথমেই খুলনার কয়রা, উত্তর বেদকাশী, মহেশ্বরীপুর, মহারাজপুর ও সাতক্ষীরা জেলার গাবুরা, বুড়ি গোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জসহ আশাশুনি থানার প্রতাপনগর, আনুলিয়া ও খাজরা এবং অপর দিকে দাকোপ থানার কালাবগী, নলিয়ন, সুতারখালী এবং পাইকগাছা থানার গড়–ইখালী, শিববাড়ী, ছোলাদানা এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ট্রলার সুন্দরবনের দুবলার চর ও কটকা, কালির চর, হংশরাজ, দোবেকী সহ বেহালা ও হলদিবুনিয়া এলাকার চরে নেটজাল ও ছেকনা দিয়ে পার্শে মাছের রেণু সংগ্রহ করে। এই রেণু তারা লোকালয়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দরে কেজিতে বিক্রয় করে থাকে। রেণু পোনার সাথে প্রায় ১শ’ প্রজাতির রেণুও জালে আটকা পড়লেও পার্শে মাছের রেণু ছাড়া বাকী পোনা মেরে ফেলে দেয়। ফলে সাদা মাছের বিপুল ঘাটতি পূরণ হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে নদ-নদীতে। বিশেষ করে প্রতি বছর এই জনপ্রিয় মাছের রেণু ধরা একটি চক্রের সাথে জড়িয়ে রয়েছে একটি যোগাযোগ মাধ্যম। মূলত তাদের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ঐ চক্রটি রেণু পোনা সংগ্রহ করে। ডিএফও থেকে শুরু করে নলিয়ানের রেঞ্জ কর্মকর্তাসহ সকল স্টেশনের মাধ্যমে চলে পার্শে মাছের রেণু সংগ্রহের হিড়িক। বিগত বছরগুলোতে কড়া প্রহরার মাধ্যমে চলেছিল রেণু ধরা। প্রতিটি ট্রলারে ২ থেকে ৩শ’ কেজি রেণু নিয়ে এসব চক্র পাইকগাছার শিববাড়ী, লক্ষ্মীখোলা বাজার, শ্যামনগর থানার ঝাপালীসহ বিভিন্ন লোকালয়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা কেজিতে এসব রেণু বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, জনৈ পার্শে রেণু ধরা ব্যবসায়ী এ সংবাদদাতাকে বলেন, গত বছরে ৬০ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছি। পথে ফরেস্টাররা ধরলে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দিলেই ওরা ছেড়ে দেয়। তিনি বলন, এরপর ট্রিপ প্রতি তাদের সাথে চুক্তি হয়। পরে যাতায়াতের পথে আর কোন সমস্যা হয় না। রেঞ্জ ও স্টেশন কর্মকর্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওনাদের সাথে তো সিজন চুক্তি থাকে। ডিএফও এবং এসিএফ’র সাথে লেনদেন করেই আমরা নেমে পড়ি। এভাবে সুন্দরবনের চরগুলোতে শীত মৌসুমে পার্শে মাছের রেণু সংগ্রহের বিশাল চক্র আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। চলছে বন বিভাগের সাথে দেনদরবার। পাশাপাশি বন দস্যুদের সাথেও। নির্ধারণ করা হচ্ছে রুট এবং বড় অংকের চুক্তি। এর ফলে ধ্বংস হচ্ছে ২শ’ প্রজাতির সাদা মাছের রেণু পোনা। ধরা-ছোঁয়ার বাইরে এসব চোরা রেণু শিকারীরাও তাদের সহায়তাকারীদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আরো ধ্বংস হবে সাদা মাছের বিস্তার।
বলা যায়, প্রাচীন আমল থেকেই বাংলাদেশের নোনা পানির সুস্বাদু মাছের সবচেয়ে বড় সরবরাহ ছিল খুলনা অঞ্চল। কিন্তু কিছু লোভী, স্বার্থবাদী, আত্মকেন্দ্রিক ও অসাধু ব্যক্তির কারণে, পার্শেসহ আরো বেশ কিছু সাদা মাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে। এরজন্য প্রয়োজন কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও নজরদারি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনার সুস্বাদু পার্শে মাছের রেণু নিধন চক্রটি ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ