পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে কাজ করছে সরকার। ইতোমধ্যে ৪ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রস্তাবিত প্রকল্পে পরামর্শকে ৪৪০ কোটি টাকা ও সফটওয়্যার কিনতে ১৮৪ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়। বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা শিরোনামের প্রকল্পটি ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর সময়ে বাস্তবায়নের কথা। প্রকল্পটি নিয়ে মার্চের মাঝামাঝিতে পরিকল্পনা কমিশনে বৈঠক হয়। সেখানে পর্যালোচনা করে সেটি ফেরত পাঠানো হয়। অনুমোদনের প্রক্রিয়ার জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে প্রকল্পটির আওতায় যেসব কাজের কথা বলা হয়েছে, তাতে এত বিপুল ব্যয়ে পরামর্শক নিয়োগের প্রয়োজন নেই। এ প্রকল্পে আট হাজার কিলোমিটার সড়কের ঝুঁকি পর্যালোচনা ও মাঝারি পূর্তকাজ, চালকদের প্রশিক্ষণ, দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেয়া, তিনটি হাসপাতালে দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা বা ট্রমা সেন্টার চালু, আঁকাবাঁকা সড়ক সোজা করা এবং সিগন্যাল ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি কাজ করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায় সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), হাইওয়ে পুলিশ এবং স্বাস্থ্য অধিদফকর। প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রকল্পের ব্যয়ের মধ্যে তিন হাজার কোটি টাকা বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। বাকি ১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা দেবে সরকার।
বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পে বলা হয়, বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো আলাদাভাবে পরামর্শক নিয়োগের কথা বলছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর তাদের কাজের অংশের জন্য পরামর্শকের পেছনে ২২৩ কোটি টাকা খরচ করতে চায়। বিআরটিএ ব্যয় করতে চায় ৫২ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য অধিদফতর করবে ২৯ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ পুলিশের কাজের অংশে পরামর্শকের জন্য ৪৮ কোটি টাকা খরচের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বাইরে পুরো প্রকল্প ব্যবস্থাপনার পেছনে পরামর্শকের জন্য ৮৭ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে।
এর মধ্যে দুটি জাতীয় মহাসড়ক জয়দেবপুর থেকে এলেঙ্গা এবং নাটোর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত যানবাহন চলাচল নিরাপদ করতে ব্যয় হবে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে পরামর্শক ব্যয় ৪৪০ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো তাদের কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ৭৬ কোটি টাকা খরচ করবে।
প্রকল্পটির আওতায় স্পোর্ট ইউটিলিটি ভেহিকেল কেনা হবে ১২টি। ব্যয় হবে ১২ কোটি টাকা। ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হবে ২৯টি পিকআপ। অ্যাম্বুলেন্স কেনা হবে ৬০টি, খরচ হবে ৩৩ কোটি টাকা। বিদেশ সফরের জন্য রাখা আছে ৪ কোটি টাকা। পাশাপাশি মাদারীপুরের শিবচরে হাইওয়ে পুলিশের জন্য একটি বহুতল ভবন নির্মাণে খরচ হবে ৪৪ কোটি টাকা। ১৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে যে সফটওয়্যার কেনার কথা বলা হয়েছে, তা দিয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা, নিহত ও আহতের হিসাব রাখা হবে।
প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ট্রমা সেন্টার চালু হবে। সে জন্য জরুরি চিকিৎসা কক্ষ সংস্কারের জন্য ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্পটির আওতায় জেলা পর্যায়ে সড়ক নিরাপত্তা কমিটি করা হবে। ঢাকায় বনানী ও মোহাম্মদপুর এলাকায় মোটরসাইকেল অ্যাম্বুলেন্স চালু করা হবে। দুর্ঘটনাপ্রবণ বিভিন্ন সড়কে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। জনসচেতনতা বাড়ানো হবে।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা। সড়ক দুর্ঘটনার ৯০ শতাংশেরই কারণ হলো চালকের বেপরোয়া মনোভাব ও গতি। কিন্তু সড়ক নিরাপদ করার প্রকল্পে চালকদের ক্ষেত্রেই তুলনামূলক কম ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, দেশে ৬২ শতাংশ দুর্ঘটনার কারণ যানবাহনের বেপরোয়া গতি। চালকদের অদক্ষতা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহনের চলাচল, ফুটপাথ হকারের দখলে থাকা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সরকারি সংস্থা বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি, গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি এবং সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে অসচেতনতার কারণে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ২০২১ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৩৭১টি। এতে নিহত হয়েছে ৬ হাজার ২৮৪ জন এবং আহত হয়েছে ৭ হাজার ৪৬৮ জন।
চলতি বছরের মার্চ মাসে সড়কে ৪৫৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫৮৯ জন নিহত ও ৬৪৭ জন আহত হয়েছেন। নিহতের মধ্যে নারী ৬১ জন ও শিশু ৯৬ জন। মার্চ মাসে ১৭৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২২১ জন। দুর্ঘটনায় ১৬২ জন পথচারী নিহত হয়েছেন। এছাড়া যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭৩ জন। এসময়ে পাঁচটি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত, ১১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও ৮ জন আহত হয়েছেন।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন আল রশীদ বলেন, সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এজন্য এত পরামর্শকের কোনো কারণ দেখছি না। এত অস্বাভাবিক খরচের কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, যান চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে তৎপর হতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রকল্প সর্বস্ব কাজ করলে কিছু মানুষের পকেট ভরবে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এর আগেও অনেক প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। কিন্তু তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যায়নি। দুর্ঘটনা কমেনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।