পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দলীয় সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন সম্ভব তাই ইসির সংলাপ অর্থহীন : ড. আসিফ নজরুল
রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় : ড. বদিউল আলম মজুমদার
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চলমান সংলাপ অর্থহীন বলে বিশিষ্টজনরা মনে করেন। তারা বলেন বর্তমানে দেশে যে রাজনৈতিক সঙ্কট বিরাজমান তা নিরসন ছাড়া অর্থাৎ রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল শপথ নেওয়ার পর নিজেও এ কথা বলেছেন। এ ছাড়া এ পর্যন্ত তিন দফায় ইসি যে সংলাপ করেছেন তাতে আমন্ত্রিতদের অনেকেই উপস্থিত হননি। শুরুতেই বিশিষ্টজনদের আস্থা অর্জনে এ নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে। তাই তারা দেশের মানুষের আস্থা অর্জনে কতটা সক্ষম হবে সেটাই বড় প্রশ্ন।
এ ছাড়া সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাখে সংলাপ শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে তাদের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সিইসি বলেছেন, ‘শতভাগ সফলতা কখনও সম্ভব না’। তিনি বিশিষ্টজনদের আলাপের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, কেউ কেউ বলেছেন এটা যদি ৫০ শতাংশ বা ৬০ শতাংশ গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে এটাও একটা বড় সফলতা। মাত্র ৫০ ভাগ সফলতাকেই যদি প্রধান নির্বাচন কমিশনার সবচেয়ে বড় সফলতা মনে করে অগ্রসর হন তাহলে তার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কতটুকু সম্ভব হবে সে প্রশ্ন এখন অনেকের মনে।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার সংবাদিকদের বলেছেন সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতা প্রয়োজন। আমিও তাই মনে করি। নির্বাচন কমিশন যত সংলাপ করুক যত পরিকল্পনা করুক তাতে কোন লাভ নেই। রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আরও স্পষ্ট করে বললে বলতে হবে, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় এটা প্রমাণীত। তাই এ বিষয়ে একটি সমঝোতা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা অসম্ভব। এজন্যই এসব সংলাপ কতটা অর্থবহ হবে সে বিষয়ে প্রশ্নতো থেকেই যায়।
তা ছাড়া সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো যারা নির্বাচনের অংশীজন সেই রাজনৈতিক দলগুলোরই এ নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা নেই। তারা নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোন কিছুই ভাবছেনা। রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন কমিশনই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবেনা এটা প্রমানীত। তাই আমরা নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোন কিছু ভাবছিনা। তারা কি করলো না করলো তা নিয়েও আমাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। সে লক্ষে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত আছে।
আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করা যায় সে বিষয়ে মতামত নিতে নতুন নির্বাচন কমিশন দেশের বিশিষ্টজনদের সাথে সংলাপ শুরু করেছেন। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২৭ ফেব্রæয়ারি শপথ নিয়ে ২৮ ফেব্রæয়ারি প্রথম অফিস শুরু করেন। এর পর তারা নির্বাচনের প্রতি মানুষের যে আস্থাহীনতা তৈরী হয়েছে তা ফিরিয়ে আনতে কী করণীয় তা নির্ধারণ করতে অংশীজনসহ সকল শ্রেণীপেশার বিশিষ্টজনদের সাথে মতবিনিময়ের ঘোষণা দেয়। সে অনুযায়ী গত ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে প্রথম সংলাপ করেন। এ সংলাপে ৩০জন শিক্ষককে আমন্ত্রণ জানানো হলেও উপস্থিত হন মাত্র ১৩ জন। ১৭ জন শিক্ষকই ইসির আমন্ত্রণে সাড়া দেননি। আমন্ত্রিতদের মধ্যে প্রফেসর ইমেরিটাস ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, প্রফেসর নুরুল আমিন বেপারী, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, প্রফেসর দিলারা চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত হননি। তারা এ সংলাপের সফলতা নিয়ে আশঙ্কা থাকায় তাতে অংশ নেননি বলে জানান। অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন এ সংলাপ করে কোন লাভ নেই। কেননা সরকার যদি না চায় তাহলে নির্বাচন কমিশনের যত সদিচ্ছাই থাক না কেন, তারা এককভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। আর আমাদের দেশে দলীয় সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয় এটা প্রমানীত। তাই নির্বাচন কমিশনের এ সংলাপ কোন অর্থবহ হবে বলে মনে করিনা।
কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ ও কে এম নূরুল হুদা কমিশন দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধংস করে দিয়ে গেছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের প্রতি দেশের মানুষের এখন আর কোন আস্থা নেই। বিগত ১০ বছর নির্বাচন কমিশন সরকারের ইচ্ছানুযায়ী যেভাবে কাজ করেছে তাতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত কঠিন বলেই সুশীল সমাজের অনেকে মনে করেন। তাইতো দ্বিতীয় দফায় ইসির ডাকা সংলাপেও অনেকে সাড়া দেননি। তাদেরও অভিমত এ সংলাপে অর্থবহ কিছু হবে না। এটা শুধু মাত্র অনুষ্ঠনিকতা ছাড়া আর কিছু নয়। ইসির দ্বিতীয় দফা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় গত ২২ মার্চ। এ সংলাপে সুশীল সমাজের ৪০ জন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ৪০জনের মধ্যে ১৯ জন হাজির হলেও ২১ জন্য যাননি। আর যারা সংলাপে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের বেশিরভাগই সরকারের নানা পর্যায়ে সুবিধাভোগী বুদ্ধিজীবী এবং কিছু এনজিও প্রতিনিধি। তাদের মধ্যেও অনেকে সংলাপ অর্থবহ হবে না বলেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ইসির আয়োজনে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে তৃতীয় দফা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় গত ৬ এপ্রিল। এ সংলাপের জন্য ইসি ৩৪ জন সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তার মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ২৩ জন। এর মধ্যে অনেক সম্পাদকই উপস্থিত হননি। অনেক সম্পাদক তার প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন।
তিন দফায় মোট ১০৪জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানোর পর তাদের মধ্যে ৭১ জন সংলাপে অংশ নিয়েছেন। আর তাদের মধ্যে সরকারের সুবিধাভোগীরাই ছিলেন। তাই ইসির সংলাপ শুরুতেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনও শুরুতেই বিশিষ্টজনদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে এ কমিশন সাধারণ মানুষের আস্থা কী ভাবে অর্জন করবে সেটাই বড় প্রশ্ন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।