স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে বুধবার রাতে কোয়ার্টার-ফাইনালের প্রথম লেগে চেলছিকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল রিয়াল। দারুণ ফর্মে থাকা বেনজেমার হ্যাটট্রিকে রিয়ালের এই জয়।  ম্যাচের প্রথমার্থে বেনজেমার জোড়া গোলে এগিয়ে যায় রিয়াল। এরপর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তৃতীয় গোলটি করেন হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন রিয়াল অধিনায়ক। এ জয়ের ফলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালের পথে এগিয়ে গেল রিয়াল মাদ্রিদ।

ঠিক এক বছর আগে এই মাঠেই চেলসির কাছে হেরেছিল তারা। তার এক বছর পর পুরনো সেই ক্ষত মেটানোর দাবি, সঙ্গে বর্তমানের সমালোচনার জবাব দেওয়ার তাড়না। শেষ ষোলোয় পিএসজির বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় বেনজেমার অসাধারণ নৈপুণ্যেই জিতেছিল রিয়াল। ঘরের মাঠের সেই ম্যাচে ১৭ মিনিটের হ্যাটট্রিকে দলকে উৎসবে ভাসান তিনি।

রেকর্ড চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে শিরোপাধারীদের লড়াইয়ে শুরু থেকে দেখা মিলল গতিময় ফুটবল। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে মাঝে দশম মিনিটে ম্যাচের প্রথম নিশ্চিত সুযোগটি পায় রিয়াল। ডি-বক্সে ঢুকে এক ঝটকায় সামনের ডিফেন্ডার চিয়াগো সিলভাকে মুহর্তের জন্য অপ্রস্তুত করে জোরাল শট নেন ভিনিসিউস, ভাগ্যের ফেরে বল ক্রসবারে বাধা পায়।

ছয় মিনিট পর কোর্তোয়ার নৈপুণ্যে বেঁচে যায় রিয়াল। বাঁ দিক থেকে রিস জেমসের ফ্রি-কিকে বল সামনের রক্ষণ দেয়ালকে ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যেই ছিল। ঝাঁপিয়ে কোনোমতে ঠেকিয়ে দেন বেলজিয়ান গোলরক্ষক। প্রচণ্ড বৃষ্টির মাঝে স্বাভাবিক ফুটবল খেলা কিছুটা মুশকিল হচ্ছিল। দুই দলের দুজনকে পিছলে পড়তেও দেখা যায়। কিন্তু ভিনিসিউসের ক্ষেত্রে যেন কোনো সমস্যাই হচ্ছিল না, গতিতে বারবার ভীতি ছড়াচ্ছিলেন তিনি।

ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের গতির কাছেই ২১তম মিনিটে আরেক দফা পরাস্ত হয় চেলসির রক্ষণ। বেনজেমার সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে বাঁ দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকেই ক্রস বাড়ান ভিনিসিউস এবং হেডে দলকে ১-০ গোলে এগিয়ে নিয়ে আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন বেনজেমা।

এই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই দ্বিতীয় গোল হজম করে চেলসি। তিন মিটিন পর ম্যাচের ঠিক ২৪ মিনিটি ডান দিক দিয়ে ডি-বক্সে দারুণ এক ক্রস বাড়ান লুকা মদ্রিচ। দুই ডিফেন্ডারের মাঝে ঠাণ্ডা মাথায় যেন বলে মাথা দিয়ে আলতো একটা ছোঁয়া দেন বেনজেমা। দূরের পোস্ট দিয়ে বল খুঁজে নেয় ঠিকানা। শুরুতে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে আক্রমণ বাড়িয়ে দেয় চেলসি। আগের মতোই খেলতে থাকে আক্রমণাত্মক কৌশলে।

৪০তম মিনিটে তার সুফল মেলে। ডান দিক থেকে জর্জিনিয়োর ক্রসে বল বক্সে পেয়ে জোরাল হেডে ২-১ ব্যবধান কমান হাভার্টজ। তার ঠিক দুই মিনিট পর হ্যাটট্রিকের সুযোগ পায় বেনজেমার। কিন্তু প্রতিপক্ষের উপহার পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। বাঁ থেকে ভিনিসিউসের পাস ঠেকাতে গিয়ে পারলেন না জর্জিনিয়ো, উল্টো বল চলে গেল বেনজেমার পায়ে।

অবিশ্বাস্যভাবে বিনা বাধায় লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নিলেন তিনি। বিরতির পর খেলা শুরু হতেই এদুয়াঁ মঁদি অভাবনীয় ভুল এবং আবার চেলসির জালে বল! ম্যাচের ৪৬ মিনিটে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন রিয়ালের অধিনায়ক কমির জেনজেমা। লা লিগার গোলদাতার তালিকায় ২৪ গোল নিয়ে পরিষ্কার ব্যবধানে শীর্ষে থাকা বেনজেমার এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোল হলো ১১টি। মৌসুমে তার মোট গোল হলো ৩৭টি।

ম্যাচের বাকি সময়েও টানা আক্রমণ করে গেছে চেলসি। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেনি একটিও। প্রিমিয়ার লিগে গত শনিবার ঘরের মাঠেই ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে ১০ মিনিটে তিন গোল খেয়ে ৪-১ ব্যবধানে হেরেছিল চেলসি। গ্যালারি ভর্তি সমর্থকদের সামনে আবারও তারা পেল তেতো স্বাদ। সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে আগামী মঙ্গলবার হবে লড়াইয়ের ফিরতি লেগ।