Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নির্যাতনের অভিযোগ করায় ঢাবি শিক্ষার্থীকে হল ছাড়া করলো ছাত্রলীগ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০২২, ৩:০৮ পিএম

ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ায় নির্যাতনের অভিযোগ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। সোমবার দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী। নাম রাজিমুল হক ওরফে রাকিব। নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে রাকিব ইনকিলাবকে বলেন, ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম ও কথিত গেস্টরুমে যেতে অপারগতা প্রকাশ করায় গত শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর শিকদার আমাকে তাঁর রুমে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করে কেন প্রোগ্রামে যাইনি। আমি কিছু বলার আগেই গালে বসিয়ে দেয় থাপ্পড়। এরপর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ। এতো রাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই আমার চুল ছিল এলোমেলো। চেহারা ছিল বিমর্ষ। তা দেখে তানভীর আমায় জিজ্ঞেস করে "তুই কি গাঁজা খাস নাকি?, ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে যাস না কেন, তুই কি শিবির করিস নাকি?" এছাড়াও মা বাবা তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। শিবির ব্লেইম দিয়ে আমাকে হল থেকে বের হয়ে যেতে বললে আমি রুমে চলে আসি। কিছুক্ষণ পর আবার ডেকে পাঠায়। প্রশ্ন করে- হলে থাকতে চাস? থাকতে চাইলে নিয়মিত প্রোগ্রাম, গেস্টরুম করবি। হলে থাকতে হলে প্রোগ্রাম করতে হবে, না পারলে হল থেকে বের হয়ে যাবি। এসব না করলে টর্চার সেল (নির্যাতন কেন্দ্র) গঠন করব। এ ঘটনা রাকিব হল প্রভোস্ট ও সাংবাদিকদের জানানোর পরই গত সোমবার রাতে তাঁকে হল থেকে বের করে দেয় ছাত্রলীগ সভাপতি তানভীরের অনুসারীরা। রাকিব বলেন, ইফতারের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর শিকদারের ছয় থেকে সাতজন অনুসারী আমার কক্ষে এসে জিনিসপত্র বের করে দেন। এসময় তারা মারমুখী অবস্থানে ছিলেন। তাই আমি কিছু না বলে হল থেকে বের হয়ে আসি। তিনি বলেন, শুক্রবার রাতের ঘটনা নিয়ে সোমবার বিকেলে হল প্রভোস্টের সাথে কথা বললে তিনি আমাকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তার আশ্বাস দেন। প্রভোস্টের সাথে দেখা করার বিষয়টি জানতে পেরেই হঠাৎ করে তারা আমাকে হল থেকে বের করে দেয়। পরে অবশ্য প্রভোস্টকে জানালে তিনি কয়েকজন আবাসিক শিক্ষকের মাধ্যমে আমাকে হলে তুলেন। জানা যায়, তানভীর শিকদার হল শাখা ছাত্রলীগের দায়িত্ব পেয়েছেন মাস দুয়েক হলো। এর আগে যতটাই শান্ত ছিলেন নেতা হওয়ার পর ঠিক ততটাই উগ্র হয়ে উঠছেন তিনি। রাজনীতি করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী হয়ে। তবে হল থেকে বের করে দেওয়ার কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন তানভীর। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে তার কোনো ঝামেলা নেই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার রাতের ঘটনাও অস্বীকার করেন তানভীর। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, এমনকিছুই আসলে ঘটেনি। সেদিন রাত ১২টার দিকে আমি সবাইকে ডেকে বলেছিলাম যে আগামীকাল আমাদের ফাইনাল খেলায় সবাই উপস্থিত থাকবি। এখানে কাউকে কোনো গালমন্দও করা হয় নাই। কেবল এটুকুই বলা হয়েছিল। অনার্স ফাইনাল ইয়ারের একটা ছেলেকে কেন প্রোগ্রামে না যাওয়ায় জবাবদিহি করতে হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জবাবদিহি করার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আমাদের হলে ছাত্রলীগের কর্মীর কোনো অভাব নাই। এটা বঙ্গবন্ধু, শেখ কামালের হল। এখানে ফাস্ট ইয়ার এটাচমেন্ট দেওয়া না দেওয়াও কোনো বিষয় না। আমাদের প্রোগ্রামে যারা উপস্থিত হয় তারা সবাই ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ম্যানডেট নিয়ে রাজনীতি করি। এখানে স্বেচ্ছাচারিতার কোনো নজির নাই। থাকলে দৈনিক ১০টা করে নিউজ হতো। ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে কিছু লোক উঠে পড়ে লাগে এবং তারাই এসব ভিত্তিহীন কথাবার্তা ছড়ায়। এ বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, হলে কে থাকবে, কে থাকবে না, সেটা হল প্রশাসন নির্ধারণ করবে। আমাদের সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কেউ এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটালে আমরা ব্যবস্থা নেব। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মো. মজিবুর রহমান বলেন, আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে ওই ছাত্রকে হলে তোলার ব্যবস্থা করেছি। ভবিষ্যতে যেন কেউ এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে না পারে সেজন্য আমরা দু'এক দিনের মধ্যে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে এটার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। এরকম বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে ছাত্রত্ব শেষ হওয়া বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকেও হল থেকে বের করার কথা জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ