Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বগুড়ায় ২টি ওষুধ কোম্পানীর লাইসেন্স বাতিল চলছে জনস্বাস্থ্য বিরোধী তৎপরতা নীরব ওষুধ ও স্বাস্থ্য প্রশাসন

প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু বগুড়া থেকে : বগুড়ায় অনুমোদন ছাড়াই ক্ষতিকর ও মানহীন ওষুধ উৎপাদনের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে দুটি কোম্পানির একটি ওষুধ উৎপাদন ও অপর একটির রেজিস্ট্রেশন সাময়িকভাবে বাতিল করেছে ওষুধ প্রশাসন। এর মধ্যে বগুড়ার কাহালু উপজেলার মেসার্স ইস্টল্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালের ইউনানি ওষুধ উৎপাদনের লইসেন্স বাতিল করা হয়েছে । অপরদিকে বগুড়া শহরের নামাজগড় এলাকায় অবস্থিত গেøাবল্যাবরেটরিজ এর ওষুধের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়েছে সাময়িকভাবে । স্থানীয় ড্রাগ সুপার অফিসে এই তথ্যের সত্যতা না পাওয়া গেলেও ওষুধ প্রশাসনের ওয়েব সাইটে এই তথ্যের সত্যতা মিলেছে ।
দীর্ঘদিন ধরেই বগুড়ায় অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানে নামকাওয়াস্তে ২/১টি ওষুধের অনুমোদন নিয়ে মানহীন ওষুধের উৎপাদন ও তা বাজারে ছড়িয়ে পড়ায় জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে । রহস্যজনক কারণে ওষুধ প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় পরিস্থিতি দিনে দিনে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
সরকার ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রকে গুরুত্ব দিয়ে দেশের হাসপাতালসমূহে এ ডিগ্রিধারী চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছে। যাতে সাধারণ মানুষ গাছ গাছড়ার ওষুধ স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে। সেই সুযোগে কতিপয় অসাধু অতি অর্থলোভী ওষুধ কোম্পানির মালিক সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অনুমোদনহীন ওষুধ উৎপাদন করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে কেবল বগুড়াতেই ১৯টি ইউনানি ও ৮টি আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি কোম্পানির লাইসেন্স দীর্ঘদিন যাবৎ নবায়ণন করা হয় নি। কোনো কোনো কোম্পানির ৫ বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত লাইসেন্স নবায়নের মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও এসব কোম্পানি সরকারি নিয়মকানুন উপেক্ষা করে ওষুধ উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। এমন কি কোনো কোনো কোম্পানি বিভিন্ন উন্নতমানের ব্রান্ডেট ওষুধ ও নকল করে বাজারজাত করে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে । কিন্তু চোখ বুজে আছেন বগুড়ার স্থানীয় ড্রাগ সুপার ও স্বাস্থ্য প্রশাসন ।
জানা গেছে বগুড়ার যেসব ইউনানি ওষুধ কোম্পানির লাইসেন্স দীর্ঘদিন যাবৎ নবায়ন করা হয়নি তার মধ্যে ইউনিয়ন ল্যাবরেটরিজ , এ এস এ ল্যাবরেটরি , ফার্মাজেম ল্যাবরেটরি, ইউনাইটেড ফ্রেন্ডস ফার্মাসিউটিক্যালস, জর্জ ইউনানি ল্যাবরেটরি, রেমেক্স ল্যাবরেটরি, ইস্টল্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল (বর্তমানে স্থগিত), পিএম ল্যাবরেটরি, রেডরোজ ফার্মাসিউটিক্যাল, আর কে ল্যাবরেটরিজ , প্রিভেন্টিস বাংলাদেশ ইউনানি। আয়ুর্বেদিক ফার্মাসিউটিক্যাল এর মধ্যে নিকো আয়ুবের্দিক ফার্মাসিউটিক্যাল, ইউনাইটেড ল্যাবরেটরি ও কনফিডেন্স ফার্মাসিউটিক্যালস।
অভিযোগ রয়েছে , ইতোপূর্বে ওষুধ প্রশাসন কর্তৃক স্থগিত করা একটি কোম্পানির ওষুধ সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘন করে ওষুধ উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে ।
কোম্পানিগুলো ইউনানি আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে নিষিদ্ধ কেমিক্যাল সিলডেনাফিল সাইট্রেট ও ক্যাফেইন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে যৌন উত্তেজক ওষুধ উৎপাদন করছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। আর এসব যৌন উত্তেজক ওষুধ শুধু ফার্মেসির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। যৌন উত্তেজক ওষুধ বর্তমানে গ্রাম-গঞ্জের পান বিড়ি ও মুদির দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে। ফলে সহজলভ্য হওয়া এসব ওষুধ ব্যবহার করে সাধারণ মানুষ হৃদরোগসহ মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি উঠতি বয়সের কিশোর-যুবকরা এসবে আসক্ত হয়ে অনৈতিক কাজের দিকে ধাবিত হচ্ছে। কয়েক মাস আগে বগুড়ার একটি আয়ুর্বেদিক কোম্পানিতে প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করে ৫০ কেজি নিষিদ্ধ কেমিক্যাল ক্যাফেইন আটক করে। অবৈধভাবে কেমিক্যাল ক্যাফেইন মজুদ করার দায়ে ঐ কোম্পানির মালিকের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
বগুড়া জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি রফি নেওয়াজ খান রবিন বলেন, যেসব ইউনানি, আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোম্পানি অনুমোদনহীন ওষুধ উৎপাদন করে দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য হুমকির মাঝে ঠেলে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার জন্য তিনি প্রশাসনের প্রতি অহŸান জানান । এ ছাড়া ঐ সব অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রিকালে প্রশাসনের হাতে ধরা পড়লে তার দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে। কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি তার দায় দায়িত্ব বহন করবে না।
যৌন উত্তেজক ওষুধ ব্যবহার সম্পর্কে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মো: রেজাউল আলম জুয়েল বলেন, যৌন উত্তেজক ওষুধ ব্যবহারে মানসিক সমস্যাসহ হৃদ রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তা ছাড়া লিভার ও কিডনি নষ্ট হতে পারে। এসব কারণে যৌন উত্তেজক ওষুধ কোনো ক্রমেই ব্যবহার করা উচিৎ নয়।
বগুড়ার ড্রাগ সুপার আহসান হাবীবের কাছে আয়ূর্বেদিক ও ইউনানি ওষুধের কোম্পানির নাম জানতে চাইলে তিনি ২৭টি কোম্পানির মাঝে ৯টি কোম্পানির নাম গোপন করে মাত্র ১৮টি কোম্পানির নাম বলেন। তবে বাকি কোম্পানিগুলোর লাইসেন্স নবায়ন না থাকায় তিনি তা গোপন করেন।



 

Show all comments
  • HASAN ULLAH ১৩ নভেম্বর, ২০২১, ২:২০ পিএম says : 0
    বগুড়া তেকে নেএকোনা এসে দিদার নকল ঔষধ বিক্রি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বগুড়ায় ২টি ওষুধ কোম্পানীর লাইসেন্স বাতিল চলছে জনস্বাস্থ্য বিরোধী তৎপরতা নীরব ওষুধ ও স্বাস্থ্য
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ