Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তারাবির নামাজ কত রাকাত : একটি দালিলিক বিশ্লেষণ-২

মুফতি রেজাউল কারীম আবরার | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

হযরত আবু বকর (রা.)-এর যুগে লোকেরা একাকী সালাত পড়ত। হযরত উমর (রা.) এর যুগে যখন এক জামাআতে সবাই তারাবি পড়া শুরু করল, তখন কত রাকাত তারাবি পড়া হতো, হাদিসের গ্রন্থ খুললে এ সম্পর্কিত বর্ণনার বিশাল ভাণ্ডার পাওয়া যাবে; যেগুলোতে বলা হয়েছে, উমরের যুগে মসজিদে নববিতে তারাবির সালাত ২০ রাকাত পড়া হতো।

ইয়াজিদ ইবনু খুসাইফা রাহ. বলেন, সায়িব ইবনু ইয়াজিদ (রা.) বলেছেন, ‘তারা উমর (রা.)-এর যুগে রমজানে তারাবি ২০ রাকাত পড়তেন। সালাতে শতাধিক আয়াতবিশিষ্ট সুরাসমূহ পড়তেন। উসমান (রা.)-এর যুগে অধিক সময়ে সালাতে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে তারা লাঠিতে ভর করে দাঁড়াতেন।’ (আস সুনানুল কুবরা : ২/৪৯৬, বায়হাকি)। ইয়াজিদ ইবনু খুসাইফার হাদিস সহিহ। হাদিসশাস্ত্রের একাধিক ইমাম এর স্বীকৃতি দিয়েছেন। নিচে কয়েকজনের বক্তব্য উল্লেখ করা হলো :

ইমাম নববি রাহ. হাদিসটি বর্ণনার পর বলেন, ‘ইমাম বায়হাকি হাদিসটি সহিহ সনদে বর্ণনা করেছেন।’ (খুলাসাতুল আহকাম : ১/৫৭৬)। ইমাম ইরাকি রাহ. বলেন, ‘ইমাম বায়হাকি রাহ. সহিহ সনদে সায়িব ইবনু ইয়াজিদের হাদিস বর্ণনা করেছেন।’ (তারাহুত তাসবির : ৩/৮৮)। হাফিজ বদরুদ্দিন আইনি রাহ. বলেন, ‘ইমাম বায়হাকি রাহ. সহিহ সনদে সায়িব ইবনু ইয়াজিদের হাদিস বর্ণনা করেছেন।’ (উমদাতুল কারি : ৮/৪৮৫)।
হাফিজ ইবনুল মুলাক্কিন রাহ. বলেন, ‘ইমাম বায়হাকি সহিহ সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।’ (আল বাদরুল মুনির : ৪/৩৫০)। ইমাম জায়লায়ি রাহ. বলেন, ‘তিনি ইমাম নববির কথা নকল করেছেন। তিনি বলেন, হাদিসের সনদ সহিহ।’ (নাসবুর রায়াহ : ২/১৫৪)। ইয়াজিদ ইবনু খুসায়ফা থেকে অন্য বর্ণনা হলো, ‘আমরা উমরের যুগে ২০ রাকাত ও বিতর পড়তাম।’ (আস-সুনানুল কুবরা : ১/২৬৭)।

১. ইমামতিতে একত্রিত করলেন। তিনি ২০ রাকাত তারাবি পড়াতেন।’ (সুনানু আবি দাউদ : ১৪২৯)। ২. আবদুল আজিজ ইবনু রুফাই রাহ. বলেন, ‘উবাই ইবনু কাআব (রা.) রমজানে মাসে মদিনায় লোকদের ২০ রাকাত তারাবি ও তিন রাকাত বিতর পড়াতেন।’ (মুসান্নাফু ইবনি আবি শায়বা : ৭৭৮৭)।
৩. ইয়াজিদ ইবনু রুমান (রা.) বলেন, ‘উমরের যুগে লোকেরা ২৩ রাকাত পড়ত। তারাবি ২০ রাকাত ও বিতর তিন রাকাত।’ (মুয়াত্তা মালিক : ৩৮০)। ৪. সায়িব ইবনু ইয়াজিদ রাহ. বলেন, ‘আমরা উমরের যুগে যখন তারাবি শেষ করতাম, তখন ফজরের সময় নিকটবর্তী হয়ে যেত। উমরের যুগে ২৩ রাকাত পড়া হতো।’ (মুসান্নাফু আবদির রাজ্জাক : ৭৭৩৩)। ৫. তাবিয়ি ইয়াহইয়া ইবনু সায়িদ আনসারি রাহ. বর্ণনা করেন, ‘উমর (রা.) এক ব্যক্তিকে আদেশ করেন, তিনি যেন লোকদের নিয়ে ২০ রাকাত পড়েন।’ (মুসান্নাফু আবি শায়বা : ৭৭৬৪)।

৬. উমর (রা.)-এর যুগে তারাবি ২০ রাকাত পড়া হতো, এটি সর্বজনস্বীকৃত। আমাদের দেশে যারা ৮ রাকাত তারাবির কথা প্রচার করেন, শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রাহ. তাঁদের অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তি। ২০ রাকাত তারাবি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি প্রমাণিত যে, উবাই ইবনু কাআব (রা.) রমজানের তারাবিতে মুসল্লিদের নিয়ে ২০ রাকাত এবং তিন রাকাত বিতর পড়তেন। এ জন্য অনেক আলিম ২০ রাকাতকে সুন্নাত বলেছেন। কেননা, উমরের যুগে আনসার ও মুহাজির সাহাবিগণ ছিলেন। তাঁদের কেউ তখন আপত্তি করেননি।’ (মাজমুউল ফাতওয়া : ২৩/১১২, ১১৩)।

৭. ২০ রাকাত তারাবির ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, ‘২০ রাকাত তারাবি খুলাফায়ে রাশিদিনের সুন্নাত এবং মুসলমানদের সম্মিলিত কাজ দ্বারা প্রমাণিত।’ (মাজমুউল ফাতওয়া : ২৩/১১৩)। ৮. মালিকি মাজহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম আল্লামা ইবনু আবদিল বার মালিকি রাহ. বলেন, ‘২০ রাকাত তারাবির কথা আলি (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। শুতাইর ইবনু শাকল, ইবনু আবি মুলাইকা, হারিস হামাদানি ও আবুল বুখতারি থেকে বিশ রাকাতের কথা বর্ণিত হয়েছে। আর তারাবির সালাত ২০ রাকাত হওয়া জুমহুর আলিমের মত। আর ২০ রাকাত হওয়া কুফাবাসী, ইমাম শাফিয়ি রাহ. ও অধিকাংশ ফকিহের মত। উবাই ইবনু কাআব (রা.) থেকে সহিহভাবে ২০ রাকাত প্রমাণিত।’ (আল ইসতিজকার : ২/৭০)।

৯. হাম্বলি মাজহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম ইবনু কুদামা মাকদিসি রাহ. বলেন, ‘উমর (রা.) যা করেছেন এবং যে ব্যাপারে সকল সাহাবি একমত হয়েছেন, সেটির অনুসরণ অধিক উত্তম।’ (আল মুগনি : ২/৬০৪)। ২০ রাকাত তারাবির ব্যাপারে এখানে যে তিন ইমামের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে, তাঁদের কেউ-ই হানাফি মাজহাবের অনুসারী নন। এরপরও তাঁরা স্বীকার করেছেন যে, ২০ রাকাত তারাবি খুলাফায়ে রাশিদিনের সুন্নাত। ২০ রাকাতের ব্যাপারে সাহাবিগণের ইজমা তথা ঐকমত্য রয়েছে।



 

Show all comments
  • Harunur rashid ২ এপ্রিল, ২০২২, ৭:৩৮ এএম says : 0
    As usual fighting over something not fard, should be more concerned weather 5 frad are done properly and practicing all the sring attached to the 5 frad. We are here one of the most advance country in the face of the earth, yet some of our mosque leaders want to live in 7th century, ( they have to see the moon with their eyes) but they all love to come to the Mosque with their modern Mercedes not in a Camel. What I am trying to say is, the one come to the Mosque in a Merceds does not believe in science of moon sighting. NASA can see things 10 billions light years a way.
    Total Reply(0) Reply
  • XT PLANTER ২ এপ্রিল, ২০২২, ১২:৪৬ এএম says : 0
    Deen is only by Allah for Allah. Is there any one who can command what to do other then Him?
    Total Reply(0) Reply
  • Md basit ২ এপ্রিল, ২০২২, ১:৫৩ এএম says : 0
    যত পরবেন ততই লাভ, কম পরার চিন্তা ভাবনা করা মানে শয়তানের বড় ধোঁকা।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Dhaud Dhaud ২ এপ্রিল, ২০২২, ৮:৩৪ এএম says : 0
    চমৎকার আলোচনা আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো লাগছে
    Total Reply(0) Reply
  • Md Lokman ২ এপ্রিল, ২০২২, ৮:৩৫ এএম says : 0
    তবে ওমানের মসজিদে অনেক আরোবি ৮ রাকাত পড়ে ছলে জায়
    Total Reply(0) Reply
  • Joynal Abedin ২ এপ্রিল, ২০২২, ৮:৩৫ এএম says : 0
    অসাধারণ আলোচনা খুব ভালো লাগছে
    Total Reply(0) Reply
  • mahmud Talukder ৪ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৭ পিএম says : 0
    এমন ভাবে বলা হলো যেনো ৮ রাকাতের ব্যাপারে কোন হাদিসই নেই। সত্যটা গোপন না করলেও তো পারতেন। ৮ রাকাতের ব্যাপারে বলেলেই কি সাথে সাথে সবাই ৮ রাকাতই পড়বে নাকি ? হযরত আয়েশা রাঃ হতে বর্ণিত হাদিস যা সহীহাইনে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে যে রসুল সাঃ রামাজানে কিয়ামুল লাইল বা তারাবীহ বিতর সহ ১১ রাকাত পড়তেন । এটা কি মিথ্যা হাদিস ?
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ৪ এপ্রিল, ২০২২, ২:২৪ পিএম says : 0
    যখনই রমাদান মাস আসে তখনই তারাবির নামাজ নিয়ে আরম্ভ হয় বাহাস আমাদের দেশের আইন দিয়ে কোন আলেম ওলামারা বলে না যে আমাদের দেশটাকে আল্লাহর আইন দিয়ে চালাতে হবে ফালতু জিনিস নিয়ে লাফালাফি করে
    Total Reply(0) Reply
  • Ashique Hossain ৫ এপ্রিল, ২০২২, ১১:১২ পিএম says : 0
    আলোচনা খুব ভালো লাগলো। 8,11,20 যত রাকায়েত হোক না কেন আমরা আল্লাহর ইবাদতই তো করছি,তবে বেশির ভাগ হাদিসে 20 রাকায়েত উল্লেখ আছে। 8,11 নিয়ে যারা ব্যস্ত তারা নামাজ ফাকি দেওয়ার ধান্দায় থাকে। খোদা হাপিজ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন