Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গোপালগঞ্জে গরিবের চাল ধনীদের ঘরে

প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্রদের মাঝে চাল বিতরণের তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী হতদরিদ্র পরিবার প্রধানরা ১০ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল পাবেন। কিন্তু এ নিয়ম অনুসরণ না করায় অনেক সচ্ছল পরিবার এ চাল পাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কাশিয়ানী উপজেলার বেথুড়ি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার দীপক রায়ের যৌথ পরিবারের তিন সদস্যের নামেই হতদরিদ্রের কার্ড হয়েছে। ওই ইউপি মেম্বারের বড় ভাইয়ের স্ত্রী কামনা রায়, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ববিতা রায় ও অবিবাহিত ছোট ভাই কুমারেশ রায় এ কার্ড পেয়ে চাল উত্তোলন করছেন। এছাড়া ওই ইউপি মেম্বার বাবর আলী, নাজমূল ও যতন বিশ্বাস নামে অন্য ওয়ার্ডের তিন ব্যক্তির নাম দিয়ে চাল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বেথুড়ি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের নড়াইল গ্রামের ভূমিহীন গোপাল বিশ্বাস, হতদরিদ্র নেপাল বিশ্বাস, রঞ্জন বিশ্বাস অভিযোগ করেন, আমাদের মতো অনেক হতদরিদ্র ১০ টাকা দরের চালের কার্ড পাননি। তারা আরো অভিযোগ করেন ওই গ্রামের ১০ বিঘা জমির মালিক অর্থশালী আতোশ আলী শেখ হতদরিদ্রের কার্ড পেয়েছেন। আতোশ আলী বছরে ৩শ’ মণ ধান বিক্রি করেন। হতদরিদ্র শ্যামলকান্তি জানান, নড়াইল গ্রামের কুয়েত প্রবাসী আশরাফ আলীর স্ত্রী ঝর্ণা বেগমকে দেয়া হয়েছে হতদরিদ্রের কার্ড। তার একমাত্র ছেলে ঢাকায় চাকরি করে। তার বাড়িতে বিল্ডিং রয়েছে। ভূমিহীন অমল বিশ্বাস বলেন, বরুনাপোল গ্রামের খোকন বিশ্বাস (৩২) হতদরিদ্রদের ১০ টাকা দরের চালের কার্ড পেয়েছেন। তার মাঠে ২০ বিঘা জমি রয়েছে। এছাড়া তিনি প্রতিবছর ১০টি পুকুরে মৎস্য চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করেন। অতিদরিদ্র জোতকুরা গ্রামের জয়তুন বেগম বলেন, আমাদের গ্রামে বেবী বেগমের নামে ভিজিডির কার্ড রয়েছে। তারপরও তার স্বামী সাহিদুল ইসলাম খান টুলুর নামে হতদরিদ্রের কার্ড দেয়া হয়েছে। বেথুড়ি ইউনিয়নের রামদিয়া গ্রামে ওয়াপদার জায়গায় বসবাসরত বিল্লাল হোসেন জানান, তিনি একটি কার্ডের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন কিন্তু আজও কপালে জোটেনি একটি কার্ড। বিল্লালের মতো শত শত দরিদ্র মানুষ ১০ টাকা দরের চালের কার্ডের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অন্য ওয়ার্ডের লোকেরা কিভাবে ওই ওয়ার্ডের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলো জানতে চাইলে ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার দীপক রায় বলেন, ওই ব্যক্তিদের নাম চালের ডিলার নাছির মিয়া দিতে বলেছেন। এছাড়া নিজের পরিবারের ৩ সদস্যের নামে কার্ড দেয়া ভুল হয়েছে বলে শিকার করেন ওই ইউপি মেম্বার। তিনি বলেন, বিত্তশালী, প্রবাসী, অন্য এলাকার বাসিন্দা, একই পরিবারে একাধিক সদস্য, অবিবাহিত, ব্যবসায়ী ও ভিজিডি কার্ডধারী ব্যক্তির নামে ভুল করে হত দরিদ্রের কার্ড দেয়া হয়েছে। এগুলো সংশোধন করে হত দরিদ্রদের দেয়া হচ্ছে। বেথুড়ি ইউনিয়নের ডিলার নাছির মিয়া বলেন, তালিকা করার দায়িত্ব ছিল ইউপি মেম্বারের। তিনি চাল আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই এ তালিকা করেছেন। আমি তাকে এ ব্যাপারে কোন অনুরোধ করিনি। এছাড়া তার পরিবারের ৩ সদস্যও চাল উত্তোলন করেছে। তিনি বিত্তশালী, প্রবাসী, অন্য এলাকার বাসিন্দা, একই পরিবারে একাধিক সদস্য, অবিবাহিত, ব্যবসায়ী ও ভিজিডি কার্ডধারী ব্যক্তির নামে হতদরিদ্রের কার্ড দিয়েছেন। কাশিয়ানী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামরুল হাসান বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তালিকা যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গোপালগঞ্জে গরিবের চাল ধনীদের ঘরে
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ